‘হাইব্রিড কর্মপদ্ধতি’ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানে সহায়ক হতে পারে : হাউস অব লর্ডস
করোনার সময় অফিস থেকে কাজের ধারা বদলে দিয়েছিল ‘হোম অফিস’। এখন সেই ধারার নতুন রূপ—‘হাইব্রিড কাজ’। সপ্তাহের কিছুদিন অফিসে, বাকিটা বাসা থেকে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি এই মডেল গ্রহণ করেছে। এবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতি শুধু কাজের ধরন নয়, বিশ্বের কর্মজীবনের অন্তর্ভুক্তির ধারাও পাল্টে দিতে পারে—বিশেষত প্রতিবন্ধী কর্মীদের জন্য।
নিয়োগদাতারা যাতে আরও বেশি হাইব্রিড ও রিমোট কাজের সুযোগ দেন, সে বিষয়ে সরকারকে উৎসাহিত করা উচিত—সম্প্রতি এমন মত দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের এক কমিটি। ‘হাউস অব লর্ডস’ এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতিবন্ধী কর্মীদের অন্তর্ভুক্তি শুধু সামাজিক দায় নয়, এটি ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু।
১. হাইব্রিড কর্মপদ্ধতি কী
হাইব্রিড কর্মপদ্ধতি মানে অফিস ও বাসা—দুই জায়গা থেকেই কাজ করার নমনীয় সুযোগ। কোভিড-১৯-এর সময় এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়, কিন্তু এখন এটি স্থায়ী বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মীদের একাংশ বাসা থেকে এবং বাকিরা অফিসে থেকে কাজ করলে উৎপাদনশীলতা কমে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে বাড়ে।
বাংলাদেশেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে হাইব্রিড মডেলে যাচ্ছে। আইটি, ডিজাইন, মিডিয়া, এমনকি ব্যাংক খাতেও পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালু হয়েছে।
২. অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের হার এখনো কম। সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, অর্থাৎ প্রতি দশজনে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে না। এর প্রধান কারণ—অ্যাকসেসিবল অফিস, প্রযুক্তিগত সহায়তার ঘাটতি ও মানসিক বাধা। তবে ইতিবাচক দিকও আছে। কিছু বহুজাতিক কোম্পানি ও স্টার্টআপ এখন প্রতিবন্ধী কর্মীদের জন্য বিশেষ নিয়োগ নীতি চালু করছে। রিমোট ও হাইব্রিড কাজ এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করছে। ভৌগোলিক দূরত্ব বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আর বড় বাধা নয়—কাজের যোগ্যতাই হচ্ছে আসল মানদণ্ড।
৩. ‘হাউস অব লর্ডস’ যা বলছে
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটেনের ‘হাউস অব লর্ডস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে—‘প্রতিবন্ধিতা এবং কাজের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে সেই সব প্রতিষ্ঠানের ওপর, যারা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নমনীয় নীতিতে বিশ্বাস করে। তারা সতর্ক করেছে, যদি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবন্ধী ও সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মীদের বাদ রাখে, তাহলে তারা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। বাংলাদেশেও এই সতর্কতা প্রাসঙ্গিক। কারণ, দেশটি এখন আইটি সেবা, আউটসোর্সিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং খাতে দ্রুত এগোচ্ছে। এখানে হাইব্রিড কাজ ও প্রতিবন্ধী কর্মীর অন্তর্ভুক্তি কেবল মানবিক বিষয় নয়—এটি অর্থনৈতিক কৌশলও।
ডিজিটাল অবকাঠামো ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট বাংলাদেশের অনেক তরুণকে ঘরে বসেই বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ দিয়েছে। ‘হাউস অব লর্ডস’-এর প্রতিবেদনে যেমন বলা হয়েছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ কোনো দাতব্য বিষয় নয়, এটি সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পূর্বশর্ত। বাংলাদেশেও এই দর্শন যদি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রহণ করে, তবে অর্থনীতি ও মানবিকতা দুটোই একসঙ্গে এগিয়ে যাবে। গার্ডিয়ান অবলম্বনে