সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রিট আবেদনকারীদের (প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের) সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, রায়ের অনুলিপি গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
পৃথক চারটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৪ জানুয়ারি ওই রায় দেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি গতকাল বুধবার প্রকাশ করা হয়।
রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই এবং ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি দেয়। ২০১৮ ও ২০২০ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের জন্য আবেদন করেন রিট আবেদনকারী প্রার্থীরা। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। পরে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ২০২০ ও ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়। এতে প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সুযোগ দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে ২০২২ একটি এবং ২০২৩ সালে তিনটিসহ পৃথক চারটি রিট করেন প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা। প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল দেন। চারটি রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল চূড়ান্ত (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে ওই রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ।
পৃথক চারটি রিট ২৮৫ জন প্রতিবন্ধী করেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। আজ বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনকারীদের মধ্যে শারীরিক, দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী রয়েছেন, যাঁরা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যেহেতু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের এই পদটি তৃতীয় শ্রেণির, তাই ২০১৮ সালে কোটা বাতিল হলেও প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কোটা বিদ্যমান ছিল। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চের পরিপত্র অনুযায়ী প্রতিবন্ধীরা এই কোটা (১০ শতাংশ) সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। অথচ ওই দুটি নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারেও কোটা দেওয়া হয়নি। আইন ও বিধি অনুসারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার বৈধ অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তা প্রতিপালন করা হয়নি, যা তাঁদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। হাইকোর্টের রায় যুগান্তকারী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ রায় বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করেন তিনি।