৪৩তম বিসিএস: আবেদন রেকর্ডে দ্বিতীয়

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)
ছবি: সংগৃহীত

৪৩তম বিসিএসের আবেদন শেষ হয়েছে গত বুধবার। কয়েক দফায় এই বিসিএসের আবেদনের সময় বাড়ানো হয়। ৪৩ তম বিসিএসের আবেদনের পড়েছে ৪ লাখের বেশি। সরকারি কর্ম কমিশন পিএসসির জনসংযোগ দপ্তর থেকে আজ বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, বুধবার (৩০ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়েছে ৪৩ তম বিসিএসে আবেদনের সময়সীমা। এই বিসিএসে আবেদন জমা পড়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ টি।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছিল ৪১ তম বিসিএসে। ওই বিসিএসে ৪ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ৪৩ তম বিসিএসের আবেদনের পড়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ টি। ৪০ তম বিসিএসে আবেদন পড়েছিল ৪ লাখ ১২ হাজার। আবেদনের হিসেবে ৪৩ তম বিসিএস দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থায় আছে। ব্রুনাই, বাহামা, আইসল্যান্ড, বার্বাডোজ, সেন্ট লুসিয়া, গ্রেনাডাসহ কয়েকটি দেশের জনসংখ্যাও এত নয় যতজন ৪৩ তম বিসিএসে আবেদন করেছেন।

বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে প্রশ্নপত্র নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করছেন একদল পরীক্ষার্থী। রংপুর জিলা স্কুল
ছবি: মঈনুল ইসলাম

এর আগে পিএসসি করোনার কারণে কয়েক দফা সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে। অনলাইনের ৪৩তম বিসিএসের আবেদন গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরে শুরু হয়। এরপর প্রথম দফায় ২৭ জানুয়ারি পরিবর্তে ৩১ মার্চ করা হয়েছিল ফরম জমার শেষ দিন। এ বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময়সীমা পরে আরেক দফায় ৩১ মার্চ থেকে বাড়িয়ে ৩০ জুন করা হয়েছিল।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় যথাসময়ে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি নেওয়া নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে পিএসসি। করোনার টিকা আরও বেশি দেওয়ার পর অবস্থার উন্নতি হলেই এ পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পিএসসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। করোনার কারণে আমাদের হাতে বেশ কিছু বিসিএসের কার্যক্রম জমা পড়েছে। ৪৩তম বিসিএস নিয়ে আমাদের ভাবনা আছে। দিন দিন অনেক মানুষ করোনার টিকার আওতায় আসছে। অবস্থার উন্নতি হলেই আমরা বিলম্ব না করে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারব।’

৪১তম বিসিএস: পরীক্ষার্থীদের করনীয় এসএমএসে জানিয়েছে পিএসসি
ছবি: সংগৃহীত

সময় বেড়েছে দফায় দফায়

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চূড়ান্ত (সেমিস্টার) পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরীক্ষা সময়মতো না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করতে পারবেন না। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্নাতক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সেই সময় ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময়সীমা বাড়াতে পিএসসিকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই সভাতেই বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময় বৃদ্ধির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে ইউজিসিকে অনুরোধ জানানো হয় উপাচার্যদের পক্ষ থেকে। ইউজিসিও তাতে একমত পোষণ করেছিল। এরপরই ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে পিএসসিকে চিঠি দিয়েছিল ইউজিসি। আবেদনের সময় ৩১ জানুয়ারির পরিবর্তে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। পরে আরও সময় বাড়ানো হয় এই আবেদনের সময়সীমা।

পরীক্ষা পেছাবে যে কারণে

৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নির্ধারিত দিন পেছানো হবে বলে জানিয়েছে পিএসসি। এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেছিল। পরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ১৫ অক্টোবরের পরিবর্তে ২৯ অক্টোবর পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফাইল ছবি

পিএসসি সূত্র জানিয়েছে, ১৫ অক্টোবর হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিজয়া দশমী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সে জন্য ওই তারিখে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এটি এক সপ্তাহ পেছাতে পারে। জানতে চাইলে পিএসসির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের সময় বিজয়া দশমীর বিষয়টি চোখ এড়িয়ে গেছে। তাই পিএসসি ওই দিনের পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের সভা শেষে এই তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

৪৩তম বিসিএসে কত পদ

৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৮১৪ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০, পুলিশ ক্যাডারে ১০০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫, শিক্ষা ক্যাডারের জন্য ৮৪৩, অডিটে ৩৫, তথ্যে ২২, ট্যাক্সে ১৯, কাস্টমসে ১৪ ও সমবায়ে ১৯ জন নিয়োগ দেওয়া হবে।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর বণ্টন

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রার্থীকে ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার সময় ২ ঘণ্টা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবেন। তবে ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত মোট নম্বর থেকে শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর কাটা যাবে। প্রিলিমিনারির বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস পিএসসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয় ও নম্বর বণ্টন

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ৩৫, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য ৩৫, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ৩০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০, ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ১০, সাধারণ বিজ্ঞান ১৫, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ১৫, গাণিতিক যুক্তি ১৫, মানসিক দক্ষতা ১৫, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনের ওপর ১০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।

পরীক্ষাকেন্দ্র

প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।