সাক্ষাৎকারে যে প্রশ্নের যে উত্তর...

চাকরির সাক্ষাৎকারে কিছু সাধারণ প্রশ্ন থাকেই। যেমন নিজের সম্পর্কে বলুন, আপনাকে কেন নেব, আপনার দুর্বলতা বা শক্তিমত্তা কী কী ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবের পাশাপাশি এমন কিছু প্রশ্নও থাকে, যেগুলো একটু অন্য রকম। এগুলোর উত্তরও দিতে হয় কৌশলী উপায়ে। তাই এসব প্রশ্নের বিষয়ে আগেভাগে প্রস্তুতি থাকা ভালো। তা না হলে সাক্ষাৎকারে খাবি খেতে হবে। এমন কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তরের বিষয়ে এবার জেনে নেওয়া যাক—

১. এই চাকরি কেন চান?

এ কথা–সে কথার পর চাকরিদাতা সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করে বসতে পারেন, কেন এই চাকরি চান? মনে রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠান সেই ব্যক্তিকেই নিয়োগ দিতে চায়, যারা কিনা কাজের ব্যাপারে আক্ষরিক অর্থেই উৎসাহী। সুতরাং এই প্রশ্নের একটি উপযোগী উত্তর প্রস্তুত করতে হবে। চাকরির বিজ্ঞাপনে দেওয়া পদ কেন আপনার জন্য উপযুক্ত, সে বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করে ফেলুন। যে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করবেন, তার সম্পর্কে শুধু ভালো ভালো কথা বললেই হবে না। আপনি যে, সেই পদের জন্য উপযুক্ত এবং সেই পদে নিয়োগ পেলে আপনি কী কী অর্জন করতে পারবেন, তা সঠিকভাবে জানাতে হবে নিয়োগকর্তাদের।

২. বর্তমান চাকরি ছাড়তে চাইছেন কেন?

আপনি যদি এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় অন্য চাকরির জন্য আবেদন করে থাকেন, তবে এই প্রশ্ন আপনাকে সাক্ষাৎকারে শুনতে হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই জেনে নিন, কী বলবেন না! বর্তমান প্রতিষ্ঠানে কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকলেও, সেটি কখনোই বলতে যাবেন না। বর্তমান প্রতিষ্ঠানের দুর্নাম করা কোনো কাজের কথা নয়। বর্তমান ‘বস’ সম্পর্কেও আজেবাজে কিছু বলতে যাবেন না যেন। কোনো সহকর্মীর সঙ্গে খিটিমিটি থাকলে, সেই কর্মপরিবেশ নিয়েও মন্তব্য করা উচিত হবে না। এতে করে আপনার সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে নিয়োগকর্তাদের। এসবের বদলে কাজের ব্যাপারে নিজের ইতিবাচক মনোভাব জানাতে হবে। আপনি নতুন প্রতিষ্ঠানে কী অর্জন করতে চান, নতুন কী শিখতে চান, সে বিষয়ে আলোকপাত করতে হবে। আপনার যোগ্যতা দিয়ে কীভাবে প্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে, সেটিও জানানো যেতে পারে। অর্থাৎ, বোঝাতে হবে যে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই নতুন চাকরির খোঁজে আছেন আপনি।

৩. পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

এই প্রশ্ন অনেক নিয়োগকর্তাই করে থাকেন। এর মধ্য দিয়ে চাকরিপ্রার্থীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও কাজ করার উৎসাহ-আগ্রহ পরিমাপ করার চেষ্টা করা হয়। এর দুই ধরনের উত্তর হতে পারে। প্রথমত, উত্তর দেওয়া যেতে পারে যে ‘আমি আপনার প্রতিষ্ঠানে থাকতে চাই’। স্বাভাবিক ভাবনায় মনে হতে পারে যে এটিই সবচেয়ে ইতিবাচক উত্তর। তবে ইতিবাচক হলেও এই উত্তর গতানুগতিক। এর বদলে বিনয় প্রদর্শন করে দেওয়া উত্তর ভালো বিকল্প হতে পারে। এটি হতে পারে এমন, ‘আপনার প্রতিষ্ঠানে অনেক মেধাবী ব্যক্তি এর মধ্যেই আছেন। আমি শুধু নিজের কাজটা সবচেয়ে ভালোভাবে করে যেতে চাই। স্বীয় মেধায় যতটুকু যাওয়া যায়, সেটিই আমার লক্ষ্য।’ এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন নিজের ব্যক্তিত্বের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলা যাবে, তেমনি আপনার কাজ করার আগ্রহও ফুটে উঠবে।

৪. আপনার নেতৃত্বের ধরন কেমন?

একটি প্রতিষ্ঠান এমন কর্মীই নিতে চায়, যে কিনা প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিতে পারে। সুতরাং সাক্ষাৎকারে নিয়োগকর্তা জানতে চাইতেই পারেন যে সাক্ষাৎকারদাতা নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না। এমন প্রশ্নের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ, পারব’ বা ‘আমি নেতা হিসেবে দারুণ’ ঘরানার গৎবাঁধা উত্তর খুব বেশি কাজে দেয় না। এতে আসলে নিয়োগকর্তা আপনার সম্ভাবনা সম্পর্কেও বুঝতে পারেন না। এর বদলে বর্তমান বা আগের কর্মক্ষেত্রে কী ধরনের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার বিস্তারিত উত্তর দেওয়া ভালো। যেমন আপনি একটি ঘটনার বিবরণ দিতে পারেন। জানাতে পারেন যে সেই সমস্যা আপনি কীভাবে সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সামাল দিয়েছিলেন। সংকটের সময় কীভাবে সহকর্মীদের পথ দেখিয়েছিলেন বা উৎসাহ দিয়েছিলেন, সেটি বললেও নিয়োগকর্তা বুঝতে পারবেন আপনার সম্ভাবনা। এ থেকেই তাঁরা বুঝতে পারবেন আপনার নেতৃত্বের ধরন ও গুণাবলি।

তথ্যসূত্র: দ্য মুজে ডট কম, আইএনসি, ইয়াহু ফিন্যান্স, মনস্টার ও দ্য ল্যাডারস ডট কম