বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ বেড়েছে

>
  • নেশন ব্র্যান্ডসের প্রতিবেদন
  • বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য ২৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
  • গত বছর এটি ছিল ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
  • ভারতের অবস্থান চলতি বছর নবম।
  • দেশটির ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য ২ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার
  • পাকিস্তানের অবস্থান এবার ৫১।
  • দেশটির ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য ১৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার

দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ‘ব্র্যান্ড ইমেজ’ বা ভাবমূর্তি বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর শুধু বাংলাদেশের ইমেজই বেড়েছে। বাংলাদেশের এই ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য ২৫ হাজার ৭০০ কোটি (২৫৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

‘নেশন ব্র্যান্ডস ২০১৮’ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। এ মাসেই বৈশ্বিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স। ১৯৯৬ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।  প্রতিষ্ঠানটি তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে একটি দেশের ইমেজ বা ভাবমূর্তি নির্ণয় করে। বিষয়গুলো হলো পণ্য ও পরিষেবার মান, বিনিয়োগ এবং সমাজ। এগুলো আবার পর্যটন, বাজার, সুশাসন এবং জনগণ ও দক্ষতা—এই চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ব্র্যান্ড ইমেজ নির্ভর করে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর। বিশ্ববাজারে এটি একটি বড় সম্পদ। ইমেজ ভালো থাকলে বিনিয়োগ বাড়ে, রপ্তানিতে গতি সঞ্চার হয় এবং পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। 

এবারের প্রতিবেদনে বিশ্বের ১০০টি দেশের ব্র্যান্ড ইমেজ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ বিশ্বের ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড ইমেজ সম্পন্ন দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান নবম। গত বছর দেশটির অবস্থান ছিল ৮। আর চলতি বছর বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ৩৯তম। গত বছর অবস্থান ছিল ৪৪। সেই হিসাবে বাংলাদেশের ৫ ধাপ উন্নতি হয়েছে। আগের বছর বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য ছিল ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। চলতি বছর সেটি বেড়ে ২৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। ভারতের ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ, ২ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। 

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুটি দেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ইমেজও গত বছরের তুলনায় কমেছে। পাকিস্তানের অবস্থান এবার ৫১। গত বছর ছিল ৫০। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার অবস্থান এ বছর ৬১। গত বছর দেশটি ৫৯তম অবস্থানে ছিল। পাকিস্তানের ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য ১৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। আর চলতি বছর শ্রীলঙ্কার ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে, গত বছর যা ছিল ৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্র্যান্ড ইমেজের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য ২৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন। দেশটির ব্র্যান্ড ইমেজের আর্থিক মূল্য ১২ লাখ ৭৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। তারপরের শীর্ষ অবস্থানে আছে যথাক্রমে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। 

আর্থিক মূল্যের পাশাপাশি এই প্রতিবেদনে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ব্র্যান্ড রেটিং করা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৭ সালে ‘এ মাইনাস’ ছিল। চলতি বছর ‘এ’ হয়েছে। তবে আর্থিক মূল্য এবং তালিকায় পিছিয়ে থাকা দেশ শ্রীলঙ্কা কিন্তু ‘এ প্লাস’ পেয়েছে।

জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই রেটিংটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এবং সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর নেওয়া নানা কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশের ইমেজে বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘ইমেজ বাড়াতে গেলে বাস্তব অর্থনীতির হাল ফেরাতে হবে। শুধু প্রচারে তো কাজ হবে না। আমরা আমাদের পর্যটন খাত নিয়ে হয়তো বড় প্রচার করলাম। তারপর পর্যটক এসে আমাদের খারাপ রাস্তা, হোটেলের পরিবেশ খারাপ পেল। তাতে তো আর অবস্থা ফিরবে না।’

হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগের চিত্র মোটেও সুখকর নয়। সুশাসন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই উন্নতি করতে হবে।’

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে খরা চলছে, তা জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) প্রতিবেদন থেকেই স্পষ্ট। চলতি বছরের জুনে বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন-২০১৮ প্রকাশ করে সংস্থাটি। সেখানে দেখা যায়, দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ আবার নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ তার আগের বছরের তুলনায় কমেছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০১৬ সালে যেখানে দেশে ২৩৩ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল, ২০১৭ সালে তা কমে হয়েছে প্রায় ২১৬ কোটি ডলার।

বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছু ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বিপাশা মতিন। তিনি বলেন, ‘ভারতের ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’, থাইল্যান্ডের ‘অ্যামেজিং থাইল্যান্ড’ এমনকি ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশের ‘নিউ ফ্রান্স’ নামে নেশন ব্র্যান্ডিং কর্মসূচি আছে। এ ক্ষেত্রে দেশগুলোর সব মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করে। আমাদের এমন কোনো ব্র্যান্ডিং কর্মসূচি নেই।’

বিনিয়োগের এই পিছিয়ে পড়া অবস্থাকে স্বীকার করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। বিনিয়োগ না বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একধরনের সন্দেহজনক মনোভাব আছে। এর সঙ্গে মিশে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়, এমন বিষয় বাদে সব দুয়ার খুলে দেওয়া উচিত।’