পোশাকশ্রমিক সুমনের বাড়িতে মাতম

মো.সুমন মিয়া
মো.সুমন মিয়া

‘প্রত্যেক দিন দুপুরে সুমন খাবার লইয়া কাজে যাইত। বাসার কাছেই অফিস। কিন্তু কাল (মঙ্গলবার) দুপুরের খাওয়া লইয়া যাই নাই। দুপুরে খাইতে বাসা থাইকা অফিসে ফিরার পথেই পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকের সংঘর্ষের মধ্যে পইড়া আমাগর আদরের ভাইডা মইরা গেছে’ বলেই বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন সুমনের বড় বোন তাছলিমা আক্তার।

গতকাল বুধবার দুপুরে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে নিহত পোশাকশ্রমিক সুমনের গ্রামের বাড়ি গেলে সেখানেই কথা হয় তাছলিমা আক্তারের সঙ্গে। ২২ বছরের সুমন কলাকান্দা গ্রামের আমির আলীর ছোট ছেলে। আমির আলী (৬৫) ঢাকায় একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর মা গৃহিণী, গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। সুমনের বড় এক ভাই ও তিন বোন রয়েছেন। সুমন সবার ছোট।

>* সাভারের আনলীমা টেক্সটাইলে সিজারম্যান হিসেবে সুমন কাজ করতেন
* রাস্তা পার হতে গিয়ে শ্রমিক–পুলিশ সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন সুমন
* এলোপাতাড়ি মারধর করা হয় সুমনকে
* পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি

গত মঙ্গলবার রাতে সুমনের মৃত্যুর সংবাদ বাড়িতে এলে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী লোকজন বাড়িতে ভিড় করেন। গতকাল বুধবার দুপুরে এই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল আঙিনায় ফেলে রাখা বেঞ্চে সুমনের মা ফিরুজা বেগম (৬২) বসে একা একা কথা বলছেন আর অঝোরে কাঁদছেন। পাশে থাকা সুমনের বোন ও আত্মীয়স্বজন তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। মা ফিরুজা বেগম বারবার তাঁর ছেলে সুমনকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে অনুরোধ আর বিলাপ করছিলেন।

নিহত সুমনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর হলো ঢাকার সাভারের আনলীমা টেক্সটাইলে সিজারম্যান হিসেবে সুমন কাজ করতেন। গত বছর সুমন বরিশালের সামিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। গত মঙ্গলবার মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শেষে সুমনসহ কয়েকজন সহকর্মী কারখানায় ফিরছিলেন। তখন স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য সুমনের পথ আটকায়। সুমন আনলীমার কর্মী পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলেছিলেন তিনি স্ট্যান্ডার্ডের শ্রমিক নন। নিজের কারখানায় যাচ্ছেন। পুলিশ তা না শুনে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করে ফেলে রাখে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শ্রমিকদের সরিয়ে আহত সুমনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সুমনের লাশ ঢাকা থেকে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় নিয়ে আসা হচ্ছিল।

নিহত সুমনের বড় ভাই মো. স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুমনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ আমাদের দিয়ে দিয়েছে। আমরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।’ কীভাবে মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সময় আমার ভাই মারা গেছে। তবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে আমি বলতে পারছি না। এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি।’

শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানি না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। তবে বিষয়টির খোঁজখবর নেওয়া হবে।