পোশাকশ্রমিকের মজুরি সমন্বয় নিয়ে তাঁদের অভিমত

সিদ্দিকুর রহমান, নাজমা আক্তার ও বাবুল আখতার।
সিদ্দিকুর রহমান, নাজমা আক্তার ও বাবুল আখতার।
>

পোশাকশ্রমিকদের এক সপ্তাহের আন্দোলনের মুখে নতুন মজুরিকাঠামোর ছয়টি গ্রেডে ১৫ থেকে ৭৪৭ টাকা পর্যন্ত মজুরি বেড়েছে। সচিবালয়ে গতকাল রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে সিদ্ধান্তটি প্রকাশ করবে মন্ত্রণালয়। গত ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে। যেহেতু ডিসেম্বরের বেতন এর মধ্যেই শ্রমিকেরা পেয়ে গেছেন, তাই ওই মাসের বাড়তি বেতন ফেব্রুয়ারিতে বকেয়া হিসেবে পাবেন তাঁরা। পোশাকশ্রমিকের মজুরি সমন্বয় নিয়ে অভিমত জানিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান, নাজমা আক্তার ও বাবুল আখতার।

প্রত্যাশা, শ্রমিকেরা কাজে ফিরবেন
সিদ্দিকুর রহমান
নতুন কাঠামোতে শ্রমিকের মজুরি যা নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটি দিতেই আমাদের কারখানা মালিকদের খুব কষ্ট হচ্ছিল। সেটিই আমাদের জন্য বেশি ছিল। শ্রমিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটিতে আজ (গতকাল) আবার মজুরি সমন্বয় করা হলো। অবশ্যই এটি আমাদের কারখানা মালিকদের ওপর বাড়তি চাপ বা বোঝা। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ত্রিপক্ষীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং শ্রমিকেরা যাতে শান্তভাবে কাজে ফেরে, সে জন্য বিষয়টি আমরা মেনে নিয়েছি। শ্রমিকনেতারাও এই সমন্বয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ফলে আমরা প্রত্যাশা করি, শ্রমিকেরা কাল (আজ) সোমবার থেকে কারখানার কাজে ফিরবেন। শ্রমিকেরা যদি না ফেরে, তাহলে ধরেই নিতে হবে তাঁদের পেছনে বড় কোনো স্বার্থান্বেষী মহল কাজ করছে। শ্রমিকেরা কারখানার কাজে না ফিরলে মজুরি পাবে না। কারখানাও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব আমরা। কারণ, শ্রমিকেরা যদি কাজ না করে এবং আমরা বিদেশে পণ্য না পাঠাতে পারি, তাহলে মাস শেষে আমরা মজুরি দেব কোথা থেকে? টাকা পাব কোথায়? বর্তমান অবস্থায় শ্রমিকদের এগিয়ে আসতে হবে। কাজে ফেরার পাশাপাশি কীভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। কারণ মজুরি বাড়ালেই কেবল হয় না, সেটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে হয়।

সিদ্দিকুর রহমান: সভাপতি, বিজিএমইএ

সুবিধা নয়, মজুরি বাড়ানো দরকার
নাজমা আক্তার
মজুরি নিয়ে এত আন্দোলনের পর আবার পুনর্বিবেচনা করা হলো। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এই মজুরি বিবেচনা করে দিয়েছেন, সেহেতু আমরা অভিনন্দন জানাই। আমরা শ্রমিকদের আন্দোলন বাদ দিয়ে কারখানার কাজে ফিরে যেতে বলব। ত্রিপক্ষীয় কমিটি যে মজুরি সমন্বয় করেছে, তার মধ্যে ৫ ও ৬ নম্বর গ্রেডের আরেকটু বৃদ্ধি পেলে ভালো হতো। ৬ নম্বর গ্রেডে ১৫ ও ৫ নম্বর গ্রেডে ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে—যা খুবই কম। ৩ নম্বর গ্রেডে ২৫৫ টাকা বেড়েছে। সেই হারে মজুরি বৃদ্ধি করলে ভালো হতো। সে জন্য মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের বলব, আপনারা আপনাদের বিষয়গুলো নিয়ে কারখানা পর্যায়ে আলাপ–আলোচনা করে সমাধান করুন। ভাঙচুর কিংবা জ্বালাও-পোড়াও কোনো সমাধান নয়। আর নিরীহ শ্রমিকেরা সব সময় এই ধরনের হামলা-মামলার শিকার হন। সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ২০১০ সাল থেকে প্রতিটি মজুরি কাঠামোতে বিভিন্ন ভাতা বাড়ানো হলেও মূল মজুরি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি কিন্তু ঠিক না। মূল মজুরির কমে গেলে ওভারটাইম, অবসরকালীন ভাতা, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি কমে যায়। বর্তমানে অন্যান্য সুবিধাদি বাড়লেও মজুরি কিন্তু বাড়ছে না। আমাদের সুবিধাদি বৃদ্ধির দরকার নেই, মজুরি বৃদ্ধির দরকার। গত শনিবারের বৈঠকে আমরা মূল মজুরি বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সমন্বয়টি করে দিয়েছেন, সে জন্য আমরা মেনে নিয়েছি। স্বাগত জানিয়েছি। প্রত্যাশা থাকবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মূল মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি দেখবেন।

নাজমা আক্তার: সভাপতি, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন

কতটা গ্রহণযোগ্য হবে জানি না
বাবুল আখতার
ত্রিপক্ষীয় কমিটির বৈঠক শুরুর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী আমাদের শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে আলাদা করে বসেন। সেখানে দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবেরাও ছিলেন। তাঁরা আমাদের বললেন, গত শনিবার বিজিএমইএর নেতাদের নিয়ে ওনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ও সন্তুষ্টিতে নতুন মজুরি কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করেছেন তাঁরা। তারপর আমাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। আমরা তখন বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ও সন্তুষ্টি থাকলে আমাদের আর কথা থাকতে পারে না। আমরা একমত হয়েছি। তবে নতুন মজুরি কাঠামোতে মূল মজুরি তুলনামূলক কমে যাওয়া, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং তিনটি গ্রেডের গরমিলের কারণে শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। ত্রিপক্ষীয় কমিটি মজুরি যেটি সমন্বয় করেছে সেটি সবাই দেখেছে। কিন্তু চাওয়ার তো শেষ নেই। ৩ নম্বর গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়ানো হয়েছে, সেই হারে ৪,৫ ও ৬ নম্বর গ্রেডের মজুরি বাড়েনি। ৬ নম্বর গ্রেডে বেড়েছে মাত্র ১৫ টাকা ও ৫ নম্বর গ্রেডে বেড়েছে ২০ টাকা এবং ৪ নম্বর গ্রেডে বেড়েছে ১০২ টাকা। এই বৃদ্ধি শ্রমিকদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে জানি না। তবে শ্রমিকদের কাছে আমরা শ্রমিকনেতারা আহ্বান জানাই, তাঁরা আন্দোলন ছেড়ে উৎপাদনে ফিরবেন।

বাবুল আখতার: সভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন