ইবিআইএন ছাড়া ভ্যাট রিটার্ন দেওয়া যাবে না

ইলেকট্রনিক ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (ইবিআইএন) ছাড়া ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে না। আগামী আগস্টে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনের আওতায় প্রথমবারের মতো রিটার্ন জমা দেবেন ব্যবসায়ীরা। এই রিটার্ন জমা দিতে ভ্যাটের নিবন্ধন হিসেবে ইবিআইএন লাগবে। নতুন আইনের সফটওয়্যারে ইবিআইএন ছাড়া রিটার্ন জমার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে যেসব ব্যবসায়ীর ইবিআইএন আছে, তাঁরা ভ্যাটের আওতায় রয়েছেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ১ লাখ ৭১ হাজার ৫২৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইবিআইএন নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার চারটি ভ্যাট কমিশনারেটে আছে এক লাখের মতো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে কম নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান সিলেট বিভাগে। সিলেট বিভাগে সব মিলিয়ে সাত হাজারের কিছু বেশি প্রতিষ্ঠান ইবিআইএন নিয়েছে। দেশের অন্যতম ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র চট্টগ্রাম বিভাগে আছে ১৯ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ১৫ আগস্ট থেকে এসব প্রতিষ্ঠান নতুন আইনের আওতায় ভ্যাট রিটার্ন দেবে।

তবে পুরোনো আইনের আওতায় সব মিলিয়ে সাড়ে আট লাখ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছিল। সব মিলিয়ে বছরে গড়ে ৬০ হাজার প্রতিষ্ঠান ভ্যাট রিটার্ন দিত।

এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন আইনে ইবিআইএনে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে হবে। যাঁরা নেননি, তাঁদের অবশ্যই ইবিআইএন নিতে হবে। ভ্যাট নিবন্ধন সীমার মধ্যে আছেন, এমন ব্যক্তি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া গেলে তাকে ইবিআইএন নিতে বাধ্য করা হবে।

নতুন ভ্যাট আইনে কোনো প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম হলে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। তাই নিবন্ধনও নিতে হবে না। তবে বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা হলে ৪ শতাংশ টার্নওভার কর দিতে হবে। বাকিদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ভ্যাট হার প্রযোজ্য হবে। টার্নওভার কর ও নিয়মিত ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ইবিআইএন নিতে হবে।

পুরোনো ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, নিবন্ধন সীমার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও অনেক ব্যবসায়ী ইবিআইএন নিতে পারেনি। আবার অনেকে আইনটিও ভালো করে বোঝেন না। তাই ইবিআইএন নেওয়া, হিসাব-নিকাশ করা, রিটার্ন দেওয়ার পদ্ধতি—এসব বিষয়ে এনবিআরের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা দরকার। তিনি জানান, নতুন আইনে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখার মেশিন বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই ধরনের মেশিন বাজারে সহজলভ্য হয়নি। তাই আইনটির বাস্তবায়ন বড় ও অভিজাত ব্যবসায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

মূসক নিবন্ধনযোগ্য ব্যক্তি

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লেনদেন আগের ১২ মাসে যদি নিবন্ধন সীমা অতিক্রম করে কিংবা পরবর্তী ১২ মাসের জন্য প্রাক্কলিত বার্ষিক লেনদেন যদি নিবন্ধন সীমা অতিক্রম করে, তাহলে অবশ্যই ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে।

এ ছাড়া পাঁচ ধরনের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লেনদেন যা-ই হোক না কেন, ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশে সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্য বা সেবা সরবরাহ, প্রস্তুত বা আমদানি করে, তাকে অবশ্যই ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে। দরপত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বা কোনো চুক্তি বা কার্যাদেশের বিপরীতে পণ্য বা সেবা বা উভয়ই সরবরাহ করে, তাকেও ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে। এ ছাড়া যেকোনো আমদানিকারক ও রপ্তানিকারককে নিবন্ধন নিতেই হবে। এনবিআরের পক্ষে উৎসে কর কর্তনকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন থাকতে হবে। 

ইবিআইএন নিতে হলে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ভ্যাট অনলাইনে আবেদন করতে হবে। পুরোনো ১১ সংখ্যার নিবন্ধন থাকলেও নতুনভাবে ইবিআইএন নিতে হবে। ফরমে নাম, ঠিকানা, ব্যবসার ধরন, অংশীদারদের পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, মুঠোফোন নম্বর, ই-মেইল, ওয়েবসাইট (যদি থাকে), বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ, কর্মীর সংখ্যা, উৎপাদিত ও সরবরাহ করা পণ্য বা সেবার ভ্যাট হার ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে। যে এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সেই এলাকার সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা প্রয়োজনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটের সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই ইবিআইএন ইস্যু করা হয় বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। আবার এই নিবন্ধনের সনদ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এমন জায়গায় প্রদর্শন করতে হবে, তা যেন সহজে দেখা যায়। 

জরিমানা

নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান ইবিআইএন না নিলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। এ ছাড়া নিবন্ধন সনদ যথাযথভাবে প্রদর্শন না করলেও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান আইনে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাট কর্মকর্তাদের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরের প্রাঙ্গণ, ঘরবাড়ি, যানবাহনে তল্লাশি চালাতে পারবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। প্রয়োজনে পণ্য জব্দ করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দরকারে হলে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার ক্ষমতাও পেয়েছেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। আবার কোনো প্রতিষ্ঠান যদি ভ্যাট ফাঁকি দেন, সেই ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের দ্বিগুণ হারে জরিমানা করা যাবে।