মিয়ানমারকে বাদ দিয়ে বিপুল কোরীয় বিনিয়োগ বাংলাদেশে

রয়টার্স প্রতীকী ছবি।
রয়টার্স প্রতীকী ছবি।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরাও এবার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। দেশটির একটি শিল্পপার্ক উন্নয়নকারী কোম্পানি বাংলাদেশে কোরিয়ার আদলে একটি শিল্পপার্ক করতে চায়, যেখানে দেশটির প্রায় ১০০টি কোম্পানি বিনিয়োগ করবে।

শিল্পপার্ক করতে চাওয়া কোম্পানিটির নাম কোরিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স করপোরেশন (কেআইসি)। তারা এ আগ্রহের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) চিঠি দিয়েছে।

তবে এ আগ্রহের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো কোম্পানিটি মিয়ানমারে দুটি শিল্পপার্ক তৈরির কাজ করছে। তবে দেশটিতে অবকাঠামো তৈরি না হওয়ায় শিল্পপার্ক দুটি থেকে সম্ভাব্য ১০০টি কোরীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান তৃতীয় কোনো দেশে সরে যেতে চাইছে। তারাই কেআইসিকে অন্য দেশে শিল্পপার্ক করার কথা বলেছে। সে অনুযায়ী কেআইসি বাংলাদেশে শিল্পপার্ক করার আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বেজাকে গত মঙ্গলবার দেওয়া চিঠিতে কেআইসি জানিয়েছে, তারা ২০১৩ সাল থেকে মিয়ানমারের বাগো অঞ্চল ও মোন রাজ্যে শিল্পপার্ক তৈরি নিয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। তবে মিয়ানমারে বিদ্যুৎ–ঘাটতি, শিল্পে পানি সরবরাহসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরিতে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে যেসব কোরীয় কোম্পানি মিয়ানমারে যেতে চেয়েছিল, তারা এখন তৃতীয় কোনো দেশে শিল্পপার্ক করার অনুরোধ জানিয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে যেতে আগ্রহী ১০০টি কোম্পানি নির্বাচন করা হয়েছে। কেআইসি পরীক্ষামূলকভাবে একটি শিল্পপার্ক করতে চায়।

>১০০টি কোরীয় কোম্পানি বাংলাদেশে আসতে চাইছে
৪০০ একরের মতো জমিতে শিল্পপার্ক করতে চায় কেআইসি
ইতিমধ্যে বিনিয়োগ ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
ইপিজেডে সব বড় বিনিয়োগকারী কোরিয়ার
কেইপিজেডের জমি নিয়ে বিরোধের সুরাহা হয়নি

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, অনেক দেশের বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কোরীয় কোম্পানি তারই ধারাবাহিকতা। তবে তিনি বলেন, এ ধরনের বিনিয়োগ প্রস্তাব আসার পর নিয়ম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তির ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হলে সহজ হয়।

মিয়ানমার বিদেশি বিনিয়োগে সব সময় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল। অবশ্য ২০১৮ সালে মিয়ানমারকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। ওই বছর মিয়ানমার ৩৫৫ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পায় ৩৬১ কোটি ডলারের বিনিয়োগ।

কেআইসি বাংলাদেশে ৪০০ একরের মতো জমি চেয়েছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে তারা ৫০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী। এতে তারা বস্ত্র, চামড়া, জুয়েলারি ইত্যাদি পণ্যের কারখানা করবে। এ নিয়ে আগামী ৪ নভেম্বর বেজার সঙ্গে বৈঠক করবে কেআইসি।

ঢাকায় কোরীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইটের হিসাব অনুযায়ী, কোরিয়া এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। এতে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী কোরিয়া। মোট বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ করেছে কোরীয় কোম্পানিগুলো।

দেশে এখন চীন, জাপান ও ভারত যে অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে, তেমনই একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা করেছে কোরিয়া। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলটির (কেইপিজেড) জমির পরিমাণ ২ হাজার ৪৯২ একর। তবে ১৯৯৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হলেও জমি নিয়ে বিরোধের সুরাহা হয়নি।

সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা যে ধরনের শ্রমঘন শিল্প চাই, সে ক্ষেত্রে কোরিয়া গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে।’ তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি দিচ্ছে। কোরিয়ার জন্যও মিরসরাইয়ে জমি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যায়।