এসএসসি ২০২২ - ভূগোল ও পরিবেশ | অধ্যায় ৪ : সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ৪

মৃদুল ও তার মা–বাবা গত রাতে আতঙ্কে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। তারা দেখে, তাদের বাসার সবকিছু কাঁপছে। মৃদুল লক্ষ করে, তাদের আশপাশে সবাই জেগে উঠেছে এবং ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরের খোলা মাঠের দিকে যাচ্ছে।

প্রশ্ন

ক. সুনামি শব্দটি কোন ভাষা থেকে উদ্ভূত?

খ. আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।

গ. উক্ত ঘটনার অপ্রধান কারণগুলো ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উক্ত ঘটনার ফলাফল বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. ‘সুনামি’ শব্দটি জাপানি ভাষা থেকে উদ্ভূত।

খ. পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে উত্তপ্ত গলিত লাভা নির্গত হয়ে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে। এই শিলার বৈশিষ্ট্য হলো:

১. স্ফটিকাকার ২. অস্তরীভূত ৩. কঠিন ও কম ভঙ্গুর ৪. জীবাশ্ম দেখা যায় না এবং ৫. অপেক্ষাকৃত ভারী।

গ. উদ্দীপকে মৃদুলদের বাসা কাঁপছিল এবং আশপাশের সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে চলে আসে। ঘটনাটি হলো ভূমিকম্প। বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ভূমিকম্পের যেসব অপ্রধান কারণ নির্ণয় করেছেন, সেগুলো হলো:

১. শিলাচ্যুতি বা শিলায় ভাঁজের সৃষ্টি: কোনো কারণে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে বড় ধরনের শিলাচ্যুতি ঘটলে বা শিলায় ভাঁজের সৃষ্টি হলে ভূমিকম্প হয়।

২. তাপ বিকিরণ: ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে ফাটল ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়।

৩. ভূগর্ভস্থ বাষ্প: পৃথিবীর অভ্যন্তরে অত্যধিক তাপের কারণে বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এই বাষ্প ভূত্বকের নিম্নভাগে ধাক্কা দেওয়ার ফলে প্রচণ্ড ভূকম্পন অনুভূত হয়।

৪. ভূগর্ভস্থ চাপের বৃদ্ধি বা হ্রাস: অনেক সময় ভূগর্ভে হঠাৎ চাপের হ্রাস বা বৃদ্ধি হলে তার প্রভাবে ভূমিকম্প হয়।

৫. হিমবাহের প্রভাব: হঠাৎ করে হিমবাহ পর্বতগাত্র থেকে নিচে পতিত হলে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়।

ঘ. উক্ত ঘটনা তথা ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের অনেক ধরনের পরিবর্তন ঘটে এবং ধ্বংসলীলা সাধিত হয়। ঘরবাড়ি, সহায়সম্পদ ও যাতায়াতব্যবস্থা ধ্বংস হয়। যেমন—

১. ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকের মধ্যে অসংখ্য ভাঁজ, ফাটল বা ধসের সৃষ্টি হয়। নদীর গতিপথ পাল্টে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৭৮৭ সালে আসামে যে ভূমিকম্প হয়, তাতে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশ কিছুটা উঁচু হয়ে যায়। ফলে নদীটি তার গতিপথ পাল্টে পরে যমুনা নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে।

২. ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় সমুদ্রতল ওপরে উত্থিত হয়, পাহাড়-পর্বত বা দ্বীপের সৃষ্টি করে। আবার কোথাও স্থলভাগের অনেক স্থান সমুদ্রতলে ডুবে যায়। ১৮৯৯ সালে ভারতের কচ্ছ উপসাগরের উপকূলে প্রায় ৫,০০০ বর্গকিলোমিটার স্থান সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়।

৩. ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় নদীর গতি পরিবর্তিত হয় বা কখনো কখনো বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো নদী শুকিয়ে যায়। আবার অনেক সময় উচ্চভূমি অবনমিত হয়ে জলাশয়ের সৃষ্টি করে। ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্পে দিবং নদীর গতি পরিবর্তিত হয়ে যায়।

৪. ভূমিকম্পের ফলে হঠাৎ করে সমুদ্র উপকূলসংলগ্ন এলাকা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।

সুতরাং ভূপৃষ্ঠের আকস্মিক রদবদল করে ভূমিকম্প সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনে।

মো. শাকিরুল ইসলাম, প্রভাষক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

এই অধ্যায়ের প্রকাশিত পূর্বের সৃজনশীল প্রশ্ন | পরবর্তী সৃজনশীল প্রশ্ন