চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
পাঁচ শ তরুণ বিজ্ঞানীর কর্মময় একটি দিন
বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম জাতীয় তরুণ গবেষক সম্মেলনে ৪৮ তরুণ গবেষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
রক্তের রোগ নির্ণয় করতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। রোগীদের খরচ হয় হাজার হাজার টাকা। সময়ও নষ্ট হয়। কিন্তু কম খরচে, সময় বাঁচিয়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে কেমন হতো? যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হোজ্জাতুল ইসলাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এমন এক চিকিৎসা প্রযুক্তি তৈরির কাজ করেছেন, যেটি দিয়ে কম খরচে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এতে সময়ও লাগবে কম।
গতকাল শনিবার হোজ্জাতুল এসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। জামাল নজরুল ইসলাম জাতীয় তরুণ গবেষক সম্মেলনে তিনি গবেষণাকর্মটি পোস্টারের মাধ্যমে তুলে ধরেন। প্রশংসাও কুড়িয়ে নেন।
শুধু হোজ্জাতুল নন, সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৫২৪ তরুণ গবেষক। তাঁদের মধ্যে গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করেন ৪৮ জন গবেষক। পোস্টার প্রদর্শনীতে অংশ নেন ৪২৮ জন। তাঁদের মধ্যে আইসিডিডিআরবিতে কর্মরত সুস্মিতা দে গবেষণা করেছেন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে। তাঁর গবেষণায় উঠে এসেছে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের পরিচর্যাকারীরা এই রোগ সম্বন্ধে তেমন জ্ঞান রাখেন না। তাই তাঁদের সচেতন করতে হবে।
স্বাস্থ্য খাতের এই দুই গবেষণা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অনেকেরই। কোভিড–পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় স্বাস্থ্যের ওপর অনেক বেশি নজর দিতে হবে বলে সম্মেলনে আসা অনেক গবেষক মনে করেন। এই আয়োজনে উপস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্ষদ সদস্য ও গবেষক সেঁজুতি সাহার কথাও তাই। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এর পাশাপাশি সমাধানও বের করতে হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত গবেষণার অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
দিনভর প্রাণবন্ত আলোচনা
গতকাল দিনভর চলে সম্মেলন। সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘কল্পনা ও উদ্ভাবনের পথে আগামী প্রজন্ম’। ক্যাম্পাসের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মিলনায়তনে ভিড় করেন গবেষকেরা। ভবনের দ্বিতীয় তলা সাজানো হয় গবেষণা পোস্টার দিয়ে। অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।
এর আগে উদ্বোধনী আয়োজনের প্রথম পর্বে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দে, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নাসিম হাসান। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্ষদ সদস্য ও গবেষক সেঁজুতি সাহা। তরুণদের বিজ্ঞান গবেষণায় উদ্বুদ্ধকরণ পর্বে মূল বক্তা ছিলেন প্রথম আলোর যুব সমন্বয়ক কর্মসূচির প্রধান মুনির হাসান। ‘জামাল নজরুল ইসলাম স্মারক বক্তৃতার’ বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। দ্বিতীয় পর্বে প্রধান বক্তা ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত। এ ছাড়া স্মৃতিচারণ করেন বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের মেয়ে সাদাফ সিদ্দিকি ও নারগিস ইসলাম।
দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে তরুণ গবেষকদের মূল্যায়ন জরুরি বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ গবেষকেরা। আইনুন নিশাত তরুণ গবেষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোনো কাজে দখল নিতে গেলে পড়তে হবে। পড়ার বিকল্প নেই।’
অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি না করে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধসে গেছে। আমরা চাই না বাংলাদেশের অর্থনীতিও তিন–চার বছরে এমন বিপদে পড়ুক।’
গবেষক সেঁজুতি সাহা বলেন, বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম চাইলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চলে আসেন।
সম্মেলনে ছয় শাখায় ১৩ তরুণ গবেষকের কাজকে পুরস্কৃত করা হয়।