শিক্ষায় বরাদ্দের হার বাড়ছে সামান্যই, সন্তুষ্ট নন সংশ্লিষ্টরা

ঢাবির শ্রেণিকক্ষ
ফাইল ছবি ফোকাস বাংলা

জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার বাড়ানোর দাবি নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোসহ দেশের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটছে না।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা খাতে ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা মোট বাজেটের ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। বিদায়ী বছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। তা ছিল বাজেটের ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যান থেকে বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাবকে গতানুগতিক বলেছেন শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। গুণগত শিক্ষার জন্য বরাদ্দের হার আরও বাড়ানোর দাবি করেছেন তাঁরা।

শিক্ষায় বরাদ্দ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আজ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগ জিডিপির ৬ ভাগে যেতে হবে। আমরা ৩ ভাগে আছি। তবে ২০০৬ সালে দেশের যে বাজেট ছিল এখন শিক্ষা বাজেটই তার চেয়ে অনেক বেশি। শিক্ষায় আমরা অনেক বিনিয়োগ করছি। আরও অনেক বিনিয়োগ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বড় বড় মেগা প্রকল্প হচ্ছে, যেগুলো আমাদের যোগাযোগের জন্য, দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার। তেমনি পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষা। সেটিই হবে বড় মেগা প্রকল্প।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন। তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের তুলনায় আসন্ন অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট ৯ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্যের জন্য বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্য মঞ্জুরি হিসেবে এককালীন ৮ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ বাবদ এককালীন ২০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হবে।

বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এবার ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী বছরে ছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, কয়েক বছর ধরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশের কাছাকাছি থাকছে।

অবশ্য শিক্ষা ও প্রযুক্তির বাজেটকে একসঙ্গে দেখানো হয়। তাই শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত মেলালেও এই হারটি দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এসব তথ্য বলছে, টাকার অঙ্কে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও বরাদ্দের হারটি এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আসেনি।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা খাতে বাজেট নিয়ে প্রত্যাশা পূরণে এখনো অনেক বাকি। ২০ শতাংশ তো দূরের কথা, ১৩ শতাংশই হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বিষয়েও তেমন দিকনির্দেশনা দেখা যায়নি। আবার কোভিড-পরবর্তী সময়ে মিশ্র শিক্ষাব্যবস্থা (সশরীর ও অনলাইনে) চালুর কথা বলা হচ্ছে। তাতে সব শিক্ষার্থীর জন্য ডিজিটাল ডিভাইস দরকার। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি করা ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব করার ফলে ল্যাপটপের দাম বাড়তে পারে। তাঁর পরামর্শ, শুধু শিক্ষাকে একক খাত হিসেবে দেখে বাজেটে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে।

শিক্ষার মানোন্নয়নে এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা খাতে যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, তা একেবারে গতানুগতিক। বরাদ্দের হার গতবার ছিল ১১ দশমিক ৯-এর মতো। এবারও ১২ শতাংশের মতোই। গুণগত শিক্ষার জন্য শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার আরও বাড়াতে হবে।