সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্রের অধ্যায়-১০ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

দৃশ্যপট-১: মিলন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সে স্কুলে তার ওপরের ক্লাসের ছাত্রদের অসম্মান করে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে এলাকার মুরব্বিদের সালাম করে না। এর জন্য তার মা-বাবাকে প্রায়ই নালিশ শুনতে হয়।
দৃশ্যপট-২: মন্টু একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে অন্য এক ছাত্রকে প্রহার করে। এ নিয়ে এলাকার মেম্বার বিচারের ব্যবস্থা করেন। এতে মন্টু দোষী প্রমাণিত হয়, যার জন্য তাকে ১০টি বেত্রাঘাত করা হয়।

প্রশ্ন:
ক. ‘অ্যানোমি’ বা আদর্শহীনতার তত্ত্ব দেন কে?
খ. অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা কীভাবে অপরাধের কারণ?
গ. মিলনের আচরণকে সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় তুমি কী বলবে?
ঘ. ‘মিলনের আচরণ ও মন্টুর আচরণ ভিন্ন’ কথাটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর-ক.
সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম।
উত্তর-খ.
অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার ফলে সমাজে সম্পদের অসম বণ্টন, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব প্রভৃতি দেখা দেয়। মানুষ সব সময় এসব থেকে বাঁচতে চায়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মানুষ অনেক সময় তা পারে না। তাই বাধ্য হয়ে অস্বাভাবিক তথা অপরাধের দিকে পা বাড়ায়। তাই বলা যায় অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা অপরাধের অন্যতম প্রধান কারণ।
উত্তর-গ.
মিলনের আচরণকে বিচ্যুতি বলে অভিহিত করা যায়। প্রতিটা সমাজে কিছু রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও আদর্শ থাকে। থাকে আচরণবিধি। যেমন ছোটদের স্নেহ করা, বড়দের সম্মান করা, গুরুজনকে মান্য করা ইত্যাদি। সমাজের এসব রীতিনীতি ও মূল্যবোধ ভঙ্গ করাকে বিচ্যুতি বলা হয়।
সমাজবিজ্ঞানী পোপেনো বলেন, বিচ্যুতি হচ্ছে এমন এক আচরণ, যা কোনো গোষ্ঠী বা সমাজের সামাজিক মূল্যবোধকে ভঙ্গ করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিচ্যুতি হলো একধরনের আচরণ। এ আচরণ সমাজের মূল্যবোধ ও রীতিনীতি ভঙ্গ করে এবং এ আচরণ সমাজ কর্তৃক অবাঞ্ছিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
উদ্দীপকে মিলন বড়দের অসম্মান যেমন করে, তেমনি গুরুজনদেরও কাঙ্ক্ষিত সম্মান দেখায় না। তার এমন আচরণ বিচ্যুতির নামান্তর।

উত্তর-ঘ.
মিলনের আচরণ ও মন্টুর আচরণ ভিন্ন। কেননা, মিলনের আচরণ হলো বিচ্যুতি আর মন্টুর আচরণ হলো অপরাধ। এই দুটার মধ্যে ভিন্নতা লক্ষণীয়। নিচে তা তুলে ধরা হলো—
১। বিচ্যুতি বলতে সমাজের রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ ভঙ্গ করাকে বোঝায়। অন্যদিকে আইন ভঙ্গমূলক কাজকে অপরাধ বলে। সমাজ ও রাষ্ট্রের বিদ্যমান আইন ভঙ্গ করলে অপরাধ হয়।
২। বিচ্যুতি হলো সামাজিক মূল্যবোধ পরিপন্থী কাজ। আর অপরাধ হলো আইন পরিপন্থী কাজ।
৩। সমাজের সব অপরাধই বিচ্যুতি কিন্তু সব বিচ্যুতি অপরাধ নয়।
৪। বিচ্যুতিমূলক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা অপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা অপেক্ষাকৃত কঠিন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বাহন বিদ্যমান।
৫। বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য সাধারণত শাস্তির ব্যবস্থা নেই। কিন্তু অপরাধের জন্য রাষ্ট্র বা সমাজ কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
ওপরের আলচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে মিলনের আচরণ ও মন্টুর আচরণ ভিন্ন।
প্রভাষক
এনায়েতবাজার মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম