দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সমৃদ্ধ করার সময় এসেছে, এনএসইউতে বললেন রাষ্ট্রদূত

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আধুনিক কোরিয়া: ইতিহাস, গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শান্তি ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক সভায় আলোচক ও অংশগ্রহণকারীরাছবি: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে

বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক বলেছেন, ‘কোরিয়া সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে স্বাধীনতা, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর। আমরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সমাধানের জন্য বৃহত্তর ভূমিকা ও দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাই। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনসহ সর্বজনীন মূল্যবোধ সংরক্ষণ করতে চাই।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) এবং অফিস অব এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত ‘অ্যাম্বাসেডর টক সিরিজ’–এ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক। ‘আধুনিক কোরিয়া: ইতিহাস, গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শান্তি ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আতিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অফিস অব এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ক্যাথরিন লি। সিপিএসের সমন্বয়ক আবদুল ওহাবের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

পার্ক ইয়ং-সিক বলেন, কোরিয়ার উদ্ভাবনের প্রতি দায়বদ্ধতার পাশাপাশি এই খাতে গবেষণা ও বিনিয়োগ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে স্মার্টফোন শিল্প, সেমিকন্ডাক্টর শিল্প অন্য সব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দিয়েছে। সরকার যে শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জোরদার করতে এবং দুর্নীতি মোকাবিলায় বিশেষ প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত।

পার্ক ইয়ং-সিক আরও উল্লেখ করেন, কোরিয়া ভাগের পর ৭৮ বছর অতিবাহিত হলেও দুই কোরিয়া একীকরণের জন্য সমর্থন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ প্রজন্ম মনে করে যে উত্তর কোরিয়া এখন একটি আলাদা দেশ, যা শুধু সমস্যা সৃষ্টি করছে এবং তা দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য সহায়ক নয়।

রাষ্ট্রদূত বলেন, কোরিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাইরে তার অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার সীমানা বিস্তৃত করতে চাইছে। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য কোরিয়া অংশীদারত্বের একটি বহুমাত্রিক ও ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আসিয়ান, দক্ষিণ এশিয়া, ওশেনিয়া, আফ্রিকান ভারত মহাসাগর এবং ইউরোপ প্রতিটি উপ-অঞ্চলের জন্য তৈরি কৌশলগত অংশীদারত্বকেও উন্নীত করবে।

শেষে রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, ‘কোরিয়া ও বাংলাদেশ পারস্পরিক কল্যাণকর উপায়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও উন্নত করবে। গত পাঁচ দশকে উভয় দেশ যা অর্জন করেছে, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী পঞ্চাশ বছরকে আরও সমৃদ্ধ করার উভয় দেশের জন্য এখনই সময়।’

অধিবেশনের সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে। কারণ, আমরা কোরীয় উপদ্বীপের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে শিক্ষা নিতে পারি।’

উপস্থিত অতিথি, দর্শক ও গণমাধ্যমের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই আলোচনাকে প্রাণবন্ত করে তোলে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নয়ন সংস্থা, দূতাবাস, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং অন্য বিভিন্ন সংস্থার অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি ও অনলাইনে অংশ নেন। এতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং এসআইপিজিতে কর্মরত সদস্যরা অংশ নেন।