বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার অভিযাত্রায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ক্লাব কার্যক্রম, আবাসিক সেমিস্টার এবং লিবারেল আর্টস কারিকুলামের জেনারেল এডুকেশনের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিকভাবে গুণসম্পন্ন আগামীর নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তোলা
ছবি: সংগৃহীত

সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে মানবিক মূল্যবোধ, আধুনিক জ্ঞান ও উন্নত গবেষণাচর্চার সমন্বয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা প্রবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষিত ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০০১ সালে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সামাজিক উদ্যোক্তা, উন্নয়ন কিংবদন্তি স্যার ফজলে হাসান আবেদ, কেসিএমজি।

১১ হাজার বর্তমান শিক্ষার্থী ও আরও ১১ হাজারের বেশি অ্যালামনাইয়ের সমন্বয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এখন একটি বিশাল পরিবার। দেশের সীমানা পেরিয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রয়েছে বৈশ্বিক পদচারণ। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।

ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাংয়ের যোগ দেওয়ার পর তাঁর দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং গতিশীল নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঢেলে সাজিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মূল উদ্যোগের ক্ষেত্রগুলো হলো আন্তর্জাতিকীকরণ, স্টুডেন্ট এক্সপেরিয়েন্স এবং প্রাসঙ্গিক গবেষণার মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি। মানসম্মত গবেষণা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিসহ নানাবিধ অনন্য কর্মকৌশলের মাধ্যমে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষার মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করা এবং এটিকে একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই এ প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক চ্যাং বলেন, শিক্ষার্থীদের কেবল পেশাগত দক্ষতাই নয়, বরং ভবিষ্যতের অগ্রদূত হওয়ার জন্য ইতিবাচক মানবীয় গুণাবলিও অর্জন করতে হবে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ক্লাব কার্যক্রম, আবাসিক সেমিস্টার এবং লিবারেল আর্টস কারিকুলামের জেনারেল এডুকেশনের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিকভাবে গুণসম্পন্ন ভবিষ্যতের নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তোলা।

১১ হাজার বর্তমান শিক্ষার্থী ও আরও ১১ হাজারের বেশি অ্যালামনাইয়ের সমন্বয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এখন একটি বিশাল পরিবার
ছবি: সংগৃহীত

ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের দক্ষ, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশে কাজ করে চলেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। এখানে রয়েছে একটি আবাসিক সেমিস্টার, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়। একসঙ্গে ক্যাম্পাসে থাকা ও লেখাপড়ার মাধ্যমে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে, একই সঙ্গে তাদের সমাজ সেবামূলক নেতৃত্বগুণের বিকাশ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২২ সালের শেষে স্থাপত্যের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব নতুন একটি ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। সাভারে অবস্থিত অনিন্দ্যসুন্দর ৩০ একরের আবাসিক ক্যাম্পাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য স্থাপনাকে পূর্ণতা দেবে নতুন এই ক্যাম্পাস।

একাডেমিক গবেষণা ও সামাজিক নানা প্রায়োগিক কর্মে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকটি স্কুল ও ইনস্টিটিউট বিশ্বে সুপরিচিত। দারিদ্র্য দূরীকরণে অসামান্য অবদান রাখায় ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ ইমপ্যাক্ট র‍্যাঙ্কিং–২০২০–এ বিশ্বসেরা ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো মানবিক কর্মকাণ্ড, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ উন্নয়ন, উদ্ভাবনী স্থাপত্য এবং পোশাক খাতের ব্যবসায়িক উন্নয়নের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। শিক্ষা উন্নয়নের বহুবিধ অর্জনে বিখ্যাত ‘ইদান’ পুরস্কার লাভ করেছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথ স্বীকৃত জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ এখন এই অঞ্চলের সেরা একটি স্কুলে পরিণত হয়েছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্প্রতি বিশ্বসেরা ১০০ থিঙ্কট্যাংকের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে শান্তি প্রচার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে কদর রয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের। এ ছাড়া বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা বণ্টনকৌশল নিয়ে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির সঙ্গে কাজ করছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।

ভর্তির উপযুক্ততা প্রমাণে শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য বিশেষায়িত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ–সুবিধা প্রদান করে থাকে
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের অনেক শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপ রয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। ২০২০ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে এক বিলিয়ন ডলারের ‘ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক’-এ যোগ দেওয়া প্রথম বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেন প্রখ্যাত জনহিতৈষী বিলিয়নিয়ার জর্জ সরোস। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা এখন আমেরিকার প্রিন্সটন, ভিয়েতনাম, মধ্যপ্রাচ্য এবং লন্ডনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা কোর্স গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া ‘ওয়ার্ল্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক’ ও ‘অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি’র মতো আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সদস্য হওয়াসহ, বিশ্বের অনেক প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাডেমিক পার্টনারশিপ শুরু করেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তার শিক্ষার্থীদের ডিউক অব এডিনবার্গ পুরস্কারে অংশগ্রহণ এবং স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। এ ছাড়া বিতর্ক, মডেল ইউএন, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, অ্যাডভেঞ্চার, চলচ্চিত্র, পরিবেশ, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপসহ নানা বিষয়ভিত্তিক ক্লাব ও সোসাইটিতে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের সুযোগ রয়েছে এখানে। করোনা মহামারি শুরুর সময় অন্যতম প্রধান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘বিইউএক্স’ নামে নিজস্ব প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান শুরু করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।

ফার্মেসি, ল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স, ইংলিশ অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্সেস, পাবলিক হেলথ, বিজনেস স্টাডিজ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, ল্যাঙ্গুয়েজেস, এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট, গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডেটা অ্যান্ড সায়েন্সেস, জেনারেল এডুকেশনসহ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে যুগোপযোগী অসংখ্য প্রোগ্রাম। অনলাইনের মাধ্যমে পছন্দের বিষয়ে ভর্তির আবেদন করা যায়। ভর্তির উপযুক্ততা প্রমাণে শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য বিশেষায়িত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ–সুবিধা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দেশ ও বিদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারেরও সুবিধা রয়েছে।