স্কুলে ভর্তিতে আবেদন চলছে, পছন্দক্রম–সংরক্ষিত আসন-আবেদন ফিসহ সব তথ্য

ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া চলছেছবি: সংগৃহীত

দেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে অনলাইনে আবেদন চলছে। নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করা যাচ্ছে। আবেদন কার্যক্রম চলবে আগামীকাল, শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর ২০২৫) বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। স্কুলের কোনো শ্রেণির কোনো শাখাতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। আর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বয়স ৬ বছরের বেশি হতে হবে। ভর্তি সংক্রান্ত নিয়মাবলি বলা হয়েছে, ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ওয়েবসাইটে আবেদনপত্র পূরণ ও Teletalk Pre-paid Mobile নম্বর থেকে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন ফি দিয়ে ভর্তির আবেদনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন।

আবেদনে নিয়মাবলি—

১.

ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদনপত্রের নির্দেশনা মতে প্রার্থী তার সব তথ্য পূরণ করবেন।

২.

যে সব প্রার্থী বিভিন্ন কোটায় আবেদন করবেন তাদের প্রযোজ্য কোটার বক্সে অবশ্যই টিক চিহ্ন দিতে হবে। অন্যথায় কোটা বিবেচনা করা সম্ভব হবে না।

৩.

অনলাইনে আবেদনপত্রে প্রার্থী তার রঙিন ছবি (দৈর্ঘ্য ৩০০ প্রস্থ ৩০০ pixel) স্ক্যান করে JPEG ফরমেটে নির্ধারিত স্থানে Upload করবেন।

৪.

আবেদনপত্র (Application Form) যথাযথভাবে পূরণ করে নির্দেশনা মতে আবেদনপত্র সাবমিট করা শেষ হলে কম্পিউটারে ছবিসহ Application Preview দেখা যাবে। নির্ভুলভাবে আবেদনপত্র Submit করা সম্পন্ন হলে প্রার্থী একটি User ID- সহ ছবি Applicant's copy পাবেন।

আরও পড়ুন

৫.

প্রার্থী পূরণকৃত আবেদনপত্রের একটি প্রিন্ট অথবা ডাউনলোড কপি ভর্তি সংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে সহায়ক হিসেবে সংরক্ষণ করবেন।

৬.

আবেদনপত্রে সরবরাহকৃত বাছাইকৃত তথ্যই যেহেতু পরবর্তী সব কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে, সেহেতু আবেদন পাঠানোর আগেই সরবরাহকৃত সব তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে প্রার্থী নিজে শতভাগ নিশ্চিত হবেন।

যে সব প্রার্থী বিভিন্ন কোটায় আবেদন করবেন তাদের প্রযোজ্য কোটার বক্সে অবশ্যই টিক চিহ্ন দিতে হবে। অন্যথায় কোটা বিবেচনা করা সম্ভব হবে না।
ছবি: ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

আবেদন ফি দেওয়ার নিয়ম—

এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন ফি দেওয়ার নিয়মাবলি হিসেবে বলা হয়েছে, Applicant's কপিতে প্রাপ্ত ইউজার আইডি (User ID) নম্বর ব্যবহার করে প্রার্থী উল্লিখিত পদ্ধতিতে যেকোনো টেলিটক প্রি-পেইড নম্বর থেকে ২টি এসএমএস করে আবেদন ফি বাবদ প্রতিটি আবেদনের জন্য জন্য ১০০ টাকা জমা দেবেন। প্রথম এসএমএসে GSAUser ID (Web Application থেকে প্রাপ্ত) লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে। উদাহরণ: GSAABCDEF লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে শিক্ষার্থীর নামসহ একটি PIN নম্বর পাওয়া যাবে। যা ব্যবহার করে দ্বিতীয় এসএমএসটি করতে হবে।

ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি-প্রধান শিক্ষকের নোটিশ বোর্ড থেকে জানা যাবে। কোনো আবেদনকারী অসদুপায় অবলম্বন করে একই প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার আবেদন করলে এবং পরবর্তীতে তা প্রমাণিত হলে তার আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে।

লগইন করার পর স্কুলের ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য ইনপুট দেওয়ার পর সেভ করে ‘Summary’ বাটনে ক্লিক করলে পূরণকৃত সব তথ্য প্রদর্শিত হবে যা প্রিন্ট করে রাখা যাবে। কোনো তথ্য পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে পুনরায় সঠিক তথ্য সেভ করে পুনরায় ‘Summary’ বাটনে ক্লিক করে তথ্যের প্রিন্ট কপি সংরক্ষণ করতে হবে।

আবেদনের নিয়মাবলি দেখুন এখানে

ছবি: প্রথম আলো

প্রতি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৫৫—

এর আগে সরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৩ নভেম্বর প্রকাশিত নীতিমালা অনুযায়ী—সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অ্যান্ট্রি (প্রবেশ) শ্রেণিতে এবং আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ হবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতি শ্রেণির শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৫৫ জন।

আরও পড়ুন

স্কুলে ভর্তির নীতিমালা সংশোধন, বয়সসীমা শিথিল

এ সংক্রান্ত সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি (মহানগরী, জেলার সদর উপজেলা এবং উপজেলা সদরে অবস্থিত) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তির নিমিত্তে অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৩ নভেম্বর জারিকৃত ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২-এ শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণ বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী ১ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর বয়স ৬+ ধরে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাবর্ষের ১ জানুয়ারি তারিখে শিক্ষার্থীর সর্বনিম্ন বয়স ৫ বছর এবং ৩১ ডিসেম্বর তারিখে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত হবে। (যেমন: ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকালে কোনো শিক্ষার্থীর বয়সসীমা সর্বনিম্ন ৫ বছর হবে অর্থাৎ সর্বনিম্ন জন্মতারিখ হবে ১ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত এবং সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ জন্মতারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত)। শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সাথে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বয়স নির্ধারণে সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বছরের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া যাবে।’

বিদ্যালয় পছন্দক্রম যেভাবে—

  • সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আবেদনে একজন আবেদনকারী শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয়ে ভর্তির পছন্দক্রম দিতে পারবে। তবে ডাবল শিফট স্কুলে উভয় শিফট পছন্দ করলে দুটি পছন্দক্রম (দুটি বিদ্যালয় পছন্দক্রম) সম্পাদন হয়েছে বলে গণ্য হবে।

  • বিদ্যমান অনলাইন ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যেকোনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি সফটওয়ারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ক্যাচমেন্ট এরিয়া, ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত—

এবারও সরকারি বিদ্যালয়ের আবেদনের ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় তিনটি ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত থাকবে। ঢাকা মহানগরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন সর্বোচ্চ তিনটি থানাকে ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ হিসেবে নির্ধারণ করতে পারবেন। ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত (কোটা) রাখা হবে। এ ছাড়া গতবারের মতো এবারও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ আর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ২ শতাংশ কোটা রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। তবে এবার কোটা বণ্টনের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ০.৫ শতাংশ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ০.৫ শতাংশ পৃথক করে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া যমজ ও সহোদর কোটার ক্ষেত্রেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিগত বছর যমজ কোটা ছিল ৩ শতাংশ। এটি এবার কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। আর সহোদর কোটা বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। আগে সহোদর কোটা ছিল ২ শতাংশ। তবে জমজ ও সহোদর কোটার জন্য এক দম্পতির সর্বোচ্চ তিন সন্তান পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে।

*স্কুলে ভর্তির নীতিমালা দেখতে এখানে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন