ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানো ও সময়সূচি পেছানোর দাবি ছাত্রদলের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানো এবং ডিসেম্বরের পরিবর্তে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ আরও পেছানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আবেদন ফি কমানোর ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর তারিখ পেছানোর ক্ষেত্রে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক আঘাতের কথা বলেছে তারা।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানকে দেওয়া এক আবেদনে এসব দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। তবে উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকায় আবেদনটি প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের কাছে হস্তান্তর করেন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কয়েকজন নেতা।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির এক সভায় আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ডিসেম্বরে নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে ছাত্রদলের আবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি সদ্য উচ্চমাধ্যমিকে কৃতকার্য হওয়া ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে অন্যান্য স্তরের শিক্ষার্থীদের মতো ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরাও সক্রীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ শিক্ষার্থীদের অনেকে এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী চিরতরে পঙ্গু ও মারাত্মকভাবে আহত হয়ে এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী অপশক্তি যে সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তা অন্যদের মতো এসব শিক্ষার্থীকেও মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত করেছে।
আবেদনে বলা হয়, ‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এসব শিক্ষার্থীই ট্রাফিক–ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, যে কারণে তাঁদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফিরতে বেশ কিছু সময় লেগে গেছে। ডিসেম্বরে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে আহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশই এতে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মতো প্রতিযোগিতামূলক একটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য সাধারণত একটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নেওয়ার যে সময় পেয়ে থাকেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়কাল সে তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাবে। এ বিষয়টিও তাঁদের মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ভর্তি পরীক্ষার সময়সীমা যৌক্তিকভাবে পেছানো হলে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাবেন এবং আহত শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এতে অংশ নিতে পারবেন।’
ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফির বিষয়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের কল্যাণবিরোধী এবং শিক্ষার্থী নির্যাতন-নিপীড়নের মদদদাতা পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের তল্পিবাহী বিগত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ৫ বছরের ব্যবধানে ভর্তি-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন ফি শতকরা ২০০ ভাগ বাড়িয়ে ১০৫০ টাকা নির্ধারণ করে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের অনেকের পক্ষেই এই পরিমাণ আবেদন ফি দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সুতরাং পরিস্থিতি বিবেচনায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন ফি যথাসম্ভব হ্রাস করা এখন সময়ের দাবি। আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের উত্থাপিত যৌক্তিক দাবি দুইটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে।’