‘অবৈধ অধ্যক্ষ’ মো. ফরহাদ হোসেনকে রক্ষায় নানামুখী চেষ্টাকে কেন্দ্র করে সমস্যার কবলে পড়া রাজধানীর অন্যতম বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে অচলাবস্থার আপাতত সমাধান হলো। উচ্চ আদালত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়া মো. জাকির হোসেনই এখন থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
একই সঙ্গে সরকারের একাধিক সংস্থার তদন্তে ‘অবৈধ’ হওয়া অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনকে ‘প্রাক্তন অধ্যক্ষ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন কামাল আহমেদ মজুমদার। যার অর্থ হলো, ফরহাদ হোসেন আর অধ্যক্ষ নেই।
আজ শনিবার বিকেলে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের মিরপুরের রূপনগর ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে কামাল আহমেদ মজুমদার এ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি হলেও এখনো এই প্রতিষ্ঠানে কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রভাব রয়েছে। একসময় সভাপতি থাকলেও এখন কেন এই সংবাদ সম্মেলন করছেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে কামাল মজুমদার বলেন, তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে তাঁরই প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটিকে এ পর্যায়ে এসেছে। তিনি ওই এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও (সংসদ সদস্য)। এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম তাঁর সুনাম। প্রতিষ্ঠানের উন্নতি, তাঁর নির্বাচনী এলাকার উন্নতি। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ছিল প্রতিষ্ঠানের যাতে ক্ষতি না হয়।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে কিছুদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সংকট এখন এতটাই বেশি যে প্রতিষ্ঠানের দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি ছুটি ঘোষণা, মামলা-মোকদ্দমার মধ্য দিয়ে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। এর মধ্যে পরিচালনা কমিটির সভাপতির পক্ষ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়, যদিও এই ছুটি ঘোষণাকে এখতিয়ার–বহির্ভূত উল্লেখ করে সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার এক দিনের ছুটি ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস হচ্ছে। আর এসবের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে হাজারো শিক্ষার্থী। শিক্ষক ও একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ, সরকারের একাধিক সংস্থার তদন্তে ‘অবৈধ’ হওয়া অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন এবং পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির নানা পদক্ষেপের কারণেই মূলত সমস্যাটি প্রকট হয়।
এমন অবস্থায় আজ সংবাদ সম্মেলনে আসেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এ সময় মাউশির নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়া জাকির হোসেন ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন প্রতিমন্ত্রীর দুই পাশে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে যে অধ্যক্ষকে নিয়ে এত ঘটনা, সেই ফরহাদ হোসেনকে ‘প্রাক্তন অধ্যক্ষ’ উল্লেখ করে কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘সবাইকেই একসময় চাকরি থেকে বিদায় নিতে হয়। চিরজীবন কেউ থাকতে পারেন না। প্রাক্তন অধ্যক্ষ দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। প্রতিষ্ঠানের ভালো ফলাফল অর্জন শুধু অধ্যক্ষের কৃতিত্ব নয়, এটি সব শিক্ষকের কৃতিত্ব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাক্তন অধ্যক্ষের চাকরির মেয়াদ শেষ। স্বাভাবিকভাবেই নতুন আসবেন। আজকে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামান্য কিছু ব্যাপার দিয়ে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে, এটি হওয়া উচিত ছিল না। আমরা হাইকোর্টের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের অত্যন্ত সুনাম রয়েছে। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করব, আমরা যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করেছি, সেটিকে তিনি আরও সামনের দিকে নিয়ে যাবেন। আরও গতিশীল করে তুলবেন।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীকাল রোববার থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে বলেও উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।
কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছিলেন, এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে–অর্ডার) বাদ দিয়ে পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসা ফরহাদ হোসেন মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে একটি ট্রাস্টের অধীনে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেন। তখন থেকেই (২০১৬) সমস্যার শুরু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এমপিওভুক্তি প্রত্যাহারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কামাল মজুমদার বলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ৮৫০ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ৩৯ জন শিক্ষক এমপিও পান। বাকিরা পান না। এ নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। পরে শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এমপিও প্রত্যাহার করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাব, শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাব, আমাদের প্রায় ৯০০ শিক্ষককে যাতে এমপিওভুক্ত করা হয় অথবা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যাতে সরকারি করা হয়। সরকার যদি এটিকে সরকারি করে তাহলে মোবারকবাদ জানাই।’