আমরা বিতর্কের সৈনিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যরা

বিকেলের নরম আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের লাল দেয়ালগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। একরাশ সবুজ বৃক্ষরাজির মধ্যে এই সুন্দর লাল দালানগুলো দেখলে মনে হয়, গোটা কার্জনটাই যেন লাল-সবুজের এক টুকরা বাংলাদেশ! প্রকৃতির এমন উজাড় করে দেওয়া সৌন্দর্যের মধ্যে, কার্জনের মাঠে আজ বসেছে বিতার্কিকদের মিলনমেলা। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক তাঁরা, সেরাদের সেরা। ২০১৪ সালের সূচনালগ্নে, তাঁদের মুখে আমরা শুনব গত বছর দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে বিতর্কে অংশ নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার গল্প, জানব আগামী দিনের প্রত্যয়।
সেই ১৯৮২ সালে, ‘প্রকাশই প্রতিভা’—স্লোগানে যুক্তিবাদী সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি, সংক্ষেপে ডিইউডিএস-এর। ২০১৩ সালটি এর সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করেছে। এ বছর সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ও ‘অপরাজেয় বাংলা’ নামের দুটি দলে ভাগ হয়ে ১১টি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, যার মধ্যে পাঁচটিতে বিজয়ী হয়, রানাার আপ হয় দুটিতে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি ও ডিবেট ফর হিউম্যানিটির আয়োজনে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিতর্কে অংশ নিয়ে হয় রানার আপ।
শুধু তা-ই নয়, এ বছর সংগঠনটি সাংগঠনিক সাফল্যের ধারাবাহিকতাও বজায় রেখেছে, আয়োজন করেছে একটি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ও একটি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা।
সোসাইটির সভাপতি তফিকুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক রকিব হাসানের নেতৃত্বে দলের বাকি সদস্যরা হলেন ইশতিয়াক আলম, ওমর ফারুক, কৌশিক সুর, অঞ্জন সরকার, হাবিব আল সাকি ও মনোয়ার আলীম। তাঁদের মধ্যে কৌশিক সুর তিনটি এবং ইশতিয়াক আলম, মনোয়ার আলীম ও তাওহীদ ইকবাল দুটি করে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন।
ডিইউডিএস দলের অন্যতম বিতর্কিক কৌশিক বলেন, ‘আমি মনে করি, সাফল্য বা ব্যর্থতার চেয়েও বড় কথা মুক্তবুদ্ধির চর্চা। সমাজে মৌলবাদের বিস্তার রোধ করতে প্রয়োজন যুক্তিনির্ভর জ্ঞানচর্চা। আমরা ডিইউডিএসের পক্ষ থেকে বিতার্কিকেরা সেই কাজটিই করতে চেষ্টা করছি।’
ডিইউডিএসের সাধারণ সম্পাদক রকিব হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের বিতর্ক অঙ্গনে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও ভালো বিতার্কিক জন্ম দেয় ডিইউডিএস। এই সংগঠনটি সব সময় তাঁদের প্রতিটি বিজয়কে প্রগতিশীল আন্দোলনের পক্ষে একেকটি বড় সাফল্য বলে দাবি করে। ভবিষ্যতেও আমরা বিজয়ের এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে চাই।’
এ আড্ডায় সংগঠনের সভাপতি তফিকুল আলমকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাল। তিনি বলেন, ‘ডিইউডিএস এমন একটি সংগঠন, যার অধীনে হল ও বিভাগভিত্তিক মোট ৫৩টি ডিবেটিং ক্লাব রয়েছে। সংগঠনটি সাফল্যের সঙ্গে দেশের বিতর্ক অঙ্গনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এমন একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ও গৌরবের।’
গল্পের শেষে, দলটি টিএসসিতে ক্যামেরাবন্দী হলেন যখন, সবার চোখে তখন স্বপ্নের কারুকাজ জ্বলজ্বল করছে!