আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রোল মডেল মনে করি

তৌফিক রহমান চৌধুরী
তৌফিক রহমান চৌধুরী
এন্টার টু লিড—এই নীতিবাক্যকে সামনে রেখে ২০০৩ সালের ৩ মে সিলেটে যাত্রা শুরু করে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি। তিনটি বিভাগ নিয়ে শুরু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে চারটি অনুষদের অধীনে ছয়টি বিভাগের কার্যক্রম রয়েছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নেয় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি। ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটির সঙ্গে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সহযোগিতামূলক পথচলা শুরু হয়। বর্তমানে স্থায়ী ও সিটি ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি। ২০১৭ সালে সিলেট শহরতলির বটেশ্বরের সুবিশাল স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ শুরু হয়। আগামী বছরের প্রথম দিকে বটেশ্বরের স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরিভাবে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষার্থী ৫ হাজার ৪০০ জন। মুখোমুখি: তৌফিক রহমান চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ

প্রথম আলো: সিলেটে উচ্চশিক্ষার মান কেমন?

চেয়ারম্যান: উচ্চশিক্ষা প্রসারের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিলেটকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। একশ্রেণির মানুষ একেবারে উচ্চশিক্ষা থেকে দূরে। বলতে গেলে উচ্চশিক্ষাবিমুখ। অন্য ভাগে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষাদীক্ষাকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ পায়। এসব মানুষের সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে। এ জন্য উচ্চশিক্ষা এখন উচ্চাভিলাষ বলে মনে হচ্ছে না। সময়টা আসলে এখন এমনই। এই সংখ্যা বাড়ার মধ্য দিয়ে মানের বিষয়টিও প্রকাশ পাবে। যাঁরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন, তাঁরা কেউ তো বিফল হননি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। সারা দেশের প্রেক্ষাপটে সিলেটে শিক্ষার মান খারাপ—সেটি আমি মনে করি না। সারা দেশের যে শিক্ষার মান রয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে সিলেটের শিক্ষার মান মোটেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
প্রথম আলো: সিলেটে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। সে দিক থেকে আপনার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা কেন ভর্তি হবেন?
চেয়ারম্যান: আমরা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি লালনপালন করি। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আমরা আমাদের নীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শিক্ষিত করে তোলা নয়, সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁদের পরিপূর্ণরূপে প্রস্তুত করাই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। এ জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষক, উচ্চমানের শিক্ষা, ডিজিটাল ল্যাব, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, সুপরিসর খেলার মাঠসহ সব ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস কর্নার এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেন্টার। শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে নয়, বরং জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি জাতি গঠনে ভূমিকা রাখাই আমাদের উদ্দেশ্য। মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সৃজনশীল বিভিন্ন সংগঠনের নিয়মিত কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রোবটিকস প্রতিযোগিতা, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করছেন।
প্রথম আলো: শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নের কী কী উদ্যোগ আছে?
চেয়ারম্যান: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মান নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা জরুরি বিষয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মানসম্পন্ন গ্রন্থাগার। যাতে দেশ–বিদেশের স্বনামধন্য ব্যক্তি, গবেষক ও লেখকদের বই রয়েছে। সেগুলো শিক্ষার্থীরা চর্চার সুযোগ পাচ্ছেন। চলতি বছরের শেষ দিকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের পর গবেষণার জন্য আলাদা ভবন কিংবা ল্যাব তৈরির প্রচেষ্টা থাকবে। আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিকনির্দেশনায় শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন গঠনমূলক প্রতিযোগিতা এবং বিজ্ঞানবিষয়ক প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। গবেষণায় শিক্ষার্থীদের আমরা উৎসাহিত করে থাকি, সেগুলোর প্রমাণই এসব কৃতিত্ব।
প্রথম আলো: বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও স্বপ্ন কী?
চেয়ারম্যান: বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা চেষ্টা করেছি শহরের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে সেটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। শহরতলির বটেশ্বর এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের শেষ দিকে সেখানে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে। স্থায়ী ক্যাম্পাস দৃষ্টিনন্দন করার পাশাপাশি মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিকে উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রোল মডেল হিসেবে মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকা বটবৃক্ষের মতো আমরা আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসেও বটবৃক্ষ লাগিয়েছি। সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটগাছের আদলে গড়ে উঠবে। সেটিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মিলনমেলা ঘটবে—এমনটা আশা করি। আমরা আমাদের নিজস্ব নীতি ও স্বকীয়তা ধরে রেখে এগোতে চাই। এই এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে সুন্দর একটি ভবিষ্যতের দেখা মিলবে। এটাই আমাদের স্বপ্ন।