পরীক্ষা নেওয়ার সময় কমছে

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী।  ছবি: সংগৃহীত
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী। ছবি: সংগৃহীত

পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার বিদ্যমান সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে। এসব পরীক্ষায় (জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও সমমান) একেকটি বিষয়ের মাঝে বিরতি কমিয়ে পরপর পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।

পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রণয়নে সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫–এর পরিবর্তে ৪ করা এবং কত নম্বরের মধ্যে কত জিপিএ হবে, তার স্তর বা শ্রেণিসংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনার মধ্যেই পরীক্ষার সময়সূচিতে এই পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব–কমিটি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, সামনের পরীক্ষা থেকেই পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী মাসেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা জানানো হবে। চেয়ারম্যান বলেন, এখন দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্লাসসহ অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রমে সমস্যা হয়। কারণ, অনেক প্রতিষ্ঠানেই কেন্দ্র থাকে। এ জন্যই পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা ১০ দিনের মধ্যে নেওয়া হবে। বর্তমানে এই পরীক্ষা হয় ১৫ দিন ধরে। আর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা হবে ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে, যা এখন হয় এক মাস ধরে। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে এক মাসের মধ্যে, যা এখন লাগে দেড় মাস থেকে ১ মাস ২০–২১ দিন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম পাবলিক পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার এই উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ সময় পরীক্ষার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসের সমস্যা হয়। তাই পরীক্ষার সময় কমানো হলে সেটা ভালো হবে। আর আগে একসময় খুব কম সময়েই পরীক্ষা নেওয়া হতো। এমনকি সকাল-বিকেল পরীক্ষা নেওয়ারও উদাহরণ আছে।

>

জেএসসি ১০ দিন
এসএসসি ২০ থেকে ২২ দিন
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এক মাসের মধ্যে নেওয়ার উদ্যোগ

একাধিক অভিভাবক প্রথম আলোকে বলছেন, পরীক্ষার্থীদের ওপর যেন চাপ না পড়ে, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই পরীক্ষার সময়সূচি ঠিক করতে হবে। আর এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়ো করে না নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়ার অনুরোধ জানান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকেই পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০১৪ সালেই বলেছিলেন, ভবিষ্যতে পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচিতে সরকারি ছুটির দিন ছাড়া কোনো বিরতি রাখা হবে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গঠিত একটি তদন্ত কমিটিও বিদ্যমান ‘দীর্ঘ সময়ব্যাপী’ সময়সূচির নিয়ম পুনর্নির্ধারণ করে সম্ভব হলে এক দিনে দুই পরীক্ষা (সকাল-বিকেল) অথবা প্রতিদিন একটি করে বিরতিহীনভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। তখন এ নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে তা আর এগোয়নি।

এরপর গত বছরও এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এমনকি পরীক্ষার মাঝে বিরতি কম দিয়ে সময়সূচি প্রকাশের পর পরীক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিলেন।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির প্রথম আলোকে বলেন, আগে পড়াশোনায় এত চাপ ছিল না। পরীক্ষাটি যেহেতু শিক্ষার্থীদের জন্যই, তাই তাদের ভালোটি আগে দেখতে হবে। তারা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই সময়সূচি ঠিক করতে হবে।

অবশ্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার উদ্যোগ ইতিবাচক বলে মনে করেন।