পরীক্ষায় এক হাতই ভরসা ছোট্ট মনীষার

এক হাত দিয়েই সব সামলাতে হয় মনীষা দেবকে। বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্র, চট্টগ্রাম, ১৮ নভেম্বর। ছবি: হিমেল বড়ুয়া
এক হাত দিয়েই সব সামলাতে হয় মনীষা দেবকে। বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্র, চট্টগ্রাম, ১৮ নভেম্বর। ছবি: হিমেল বড়ুয়া

ডান হাতের কনুইয়ের নিচের অংশটি জন্মগতভাবে নেই। বাঁ হাতের ভরসায় বসেছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায়। খাতার পৃষ্ঠা উল্টাতে কলম টেবিলে রেখে দিতে হয় তাকে। আজ সোমবার বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে এভাবেই লিখতে দেখা গেছে ছোট্ট মনীষা দেবকে (১০)।

আজ ছিল মনীষার বাংলা পরীক্ষা। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখা গেছে, মনোযোগ দিয়ে লিখছে সে। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে না। একটি হাত না থাকায় খাতা বা প্রশ্নের পৃষ্ঠা উল্টানোর কাজটা টেবিলে কলম রেখে সারতে হচ্ছে। পুরোপুরি তিন ঘণ্টাই লেখে ছোট্ট মনীষা। তারপর মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরে সে।

পরীক্ষা শেষে কথা হয় মনীষার মা পলাশী দেবের সঙ্গে। তিনি বলেন, জন্মগতভাবেই ডান হাতের অর্ধেক ছিল না মনীষার। বাঁ হাত দিয়ে লেখাপড়াসহ সব কাজ সারতে হয় তার। প্রাত্যহিক কাজ সারতে অন্যজনের সহায়তা নিতে হয়। পড়াশোনায় সে মনোযোগী। তবে বেশিক্ষণ পড়াশোনা করলে তার মাথাব্যথা করে।

পলাশী দেব জানান, মনীষার বাবা দোলন দেব পেশায় কৃষক। অর্থের সমস্যা থাকলেও সন্তানদের পড়াশোনার বিষয়ে তিনি উৎসাহী। মনীষা বিদ্যালয় থেকে কিছু টাকা পেলেও প্রতিবন্ধী ভাতা পায় না। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে মনীষা ছোট।

মায়ের সঙ্গে ছোট্ট মনীষা। বাঁশখালী, চট্টগ্রাম, ১৮ নভেম্বর। ছবি: হিমেল বড়ুয়া
মায়ের সঙ্গে ছোট্ট মনীষা। বাঁশখালী, চট্টগ্রাম, ১৮ নভেম্বর। ছবি: হিমেল বড়ুয়া

মনীষা দক্ষিণ জলদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শাহানাজ পারভীন বলেন, একটি হাত না থাকলেও মনীষা পড়াশোনায় মনোযোগী। সে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকত। ঠিকমতো ক্লাস করত।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অনিক রায় বলেন, ‘আমি বাঁশখালীতে যোগদান করেছি বেশি দিন হয়নি। পরীক্ষার দায়িত্ব পালনের সময় মনীষাকে দেখেছি। খবর নিয়ে জেনেছি সে কোনো সরকারি ভাতা পায় না। এ বিষয়ে তার মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। সমাজসেবা কার্যালয়ে এসে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেছি।’

বাঁশখালীতে এবার পিইসিতে অংশ নিয়েছে ৮ হাজার ৮৮৪ জন পরীক্ষার্থী। অন্যদিকে ইবতেদায়ি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২ হাজার ৭০১ জন। মোট পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৩১টি।