বিজ্ঞানের ভক্ত

তাহরিমা তাহসিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
তাহরিমা তাহসিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

পড়ার বিষয় হিসেবে কেন রসায়ন বেছে নিলেন? প্রশ্ন শুনে তাহরিমা তাহসিন পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘কেন নয়? পৃথিবীকে বুঝতে হলে রসায়ন জানতেই হবে।’ বোঝা গেল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী তাঁর পড়ার বিষয়টাকে ভালোই বাসেন। তাই তো গবেষণা করছেন সিলভার ন্যানোপার্টিকেলস নিয়ে।

তাঁর কাছে বেঁচে থাকার মানে জীবনে স্বপ্ন থাকা। আর ছোটবেলা থেকেই তাহরিমার স্বপ্ন ছিল—‘বিজ্ঞানী হব, পৃথিবীর জন্য কিছু করব’। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি কিসের যেন অভাব বোধ করলেন। তারপর সহপাঠী আর শিক্ষকদের সহযোগিতায় গড়ে তুললেন ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব’। কিছুদিন আগে এই ক্লাব থেকেই বানানো হয়েছে একটি মানবাকৃতির রোবট। বর্তমানে তাহরিমা ক্লাবের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সারা দেশের ক্যাম্পাসের তরুণদের নিয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ সায়েন্স সোসাইটি’র কুমিল্লার জোনাল হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই শিক্ষার্থী। ‘ইয়ুথ কার্নিভাল’ নামক সংগঠনের ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর ছিলেন। ‘লিডারশিপ কার্নিভ্যাল’, ‘রোবটিক ওয়ার্কশপে’র মতো অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবেও কাজ করেছেন। তা ছাড়া রক্তদান সংগঠন ও পরিবেশ ফোরামের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবাই তাঁকে কমবেশি চেনে। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরীর স্কেচ শেয়ার করেছিলেন ফেসবুকে। পরদিন এল ফোন—উপাচার্য দেখা করতে চান। তাহরিমা তাহসিন দুরু দুরু বুকে গেলেন ‘ভিসি স্যার’–এর সঙ্গে দেখা করতে। এদিকে উপাচার্য বললেন, তাহরিমার আঁকা ছবি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, তাহরিমা ডায়েরি আর পেনসিল বক্স উপহারও পেয়েছিলেন সেদিন।

২০১৮-এর জাতীয় গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাহরিমা তাহসিনের পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানবিষয়ক বই জাদুকরি বিজ্ঞান। তাঁর ক্যাম্পাস থেকে তিনিই প্রথম বিজ্ঞানবিষয়ক বই লিখেছেন। এরপর তাঁর অনুপ্রেরণায় আরও দুজন লিখেছেন বিজ্ঞানের বই। তাহরিমা স্বপ্ন দেখেন, একদিন এই দেশের শিক্ষার্থীদের কোনো বিজ্ঞানভীতি থাকবে না, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা হবে। আর দেশের মানুষ হবে কুসংস্কারমুক্ত। এই স্বপ্নগুলো বাঁচিয়ে রাখে তাঁকে।