একের ভেতর অনেক

শাহরিয়ার শাকির
শাহরিয়ার শাকির

শাহরিয়ার শাকির যখন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র, সেবার মঞ্চে উঠে আবৃত্তি করলেন, ‘কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা’। সেই থেকে তাঁর সংস্কৃতিচর্চার শুরু। এখন পড়ছেন যশোর মেডিকেল কলেজের (জেএমসি) পঞ্চম বর্ষে। মেডিকেলে পড়তে এসেও থেমে নেই তাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। বরং ডালপালা মেলেছে সবদিক থেকেই। 

জেএমসিতে পড়াশোনা শুরুর আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে অনেকেই তাঁকে চিনত। আর এই ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করার পর ক্যাম্পাসের কারও আর তাঁকে চিনতে বাকি নেই। নিজেই আবার অকপটে বললেন, ‘এই চেনা কিন্তু “ভালো ছাত্র” হিসেবে নয়। এই চেনাটা এসেছে “সব কাজের কাজী” হিসেবে।’

তাঁর ঝুলিতে রয়েছে আবৃত্তি, বাংলা পঠন ও একক অভিনয়ে ৭টি জাতীয় পুরস্কার। শিশু সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ইউনিসেফে। এনটিভি মার্কস অলরাউন্ডারে ছিলেন সেরা ২০ এ। চ্যানেল আই হরলিকস ফিউচার ফোর্সে সেরা ৩০-এ ছিলেন। ঢেঁকি স্বর্গে গেলে ধান ভানুক বা না ভানুক, শাহরিয়ার শাকির যশোর মেডিকেলের ক্যাম্পাসে এমবিবিএস পড়তে এসে ঠিকই আবৃত্তি, নাটক আর সাংগঠনিক নানা কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। আগে অল্প স্বল্প গান গাইতেন। মেডিকেলে পড়তে এসে গানের চর্চাটাও এখন নিয়মিত করছেন। কীভাবে কে জানে! 

মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে শাহরিয়ার শাকির প্রথমেই বানালেন একটা নাটক। নাম, স্বপ্নগুলো বেঁচে থাক। তারপর তিনি ও কয়েকজন বন্ধু আর সিনিয়রদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত করলেন খেলা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংগঠন ‘অভ্যুদয়’। শাহরিয়ার শাকির বর্তমানে এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। ইতিমধ্যে তাঁরা চারটি মেডিকেল কলেজ মিলে আন্তমেডিকেল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন। মোবাইল ও ডিএসএলআর ক্যামেরা—দুই ক্যাটাগরিতে ছবি তোলা ও প্রদর্শনীরও আয়োজন করে ‘অভ্যুদয়’। প্রদর্শনীতে ২২টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের তোলা ৮০টি ছবিকে স্থান দেওয়া হয়, আর দুই বিভাগে ছয়টা ছবিকে দেওয়া হয় সেরার পুরস্কার। শাহরিয়ার শাকিরের ভাষায়, ‘বছরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো আছেই। তবে খেলা বা ছবি তোলার মতো আয়োজনগুলো মেডিকেল কলেজগুলোতে দেখা যায় না বললেই চলে।’

এ তো গেল ক্যাম্পাসের ভেতরের কথা। এর বাইরে নিজের ‘একান্ত শখ’ থেকে ব্যানার, লোগো প্রভৃতি ডিজাইনের কাজ করেন শাহরিয়ার শাকির। তা ছাড়া ভিডিও বানিয়ে নিজের ফেসবুক আর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোডও করেন। মেডিকেলে পড়ে এত কিছু কীভাবে করেন? তাঁর উত্তর, ‘চাইলে সব সম্ভব। দুটো ক্লাসের বিরতিতে আমিও বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় বসি। কিন্তু আড্ডার বিষয় থাকে সন্ধানীর রক্ত বিনিময় কর্মসূচি, ডেটাবেইস তৈরি, গান, প্রোগ্রাম আয়োজন, নাটকের স্ক্রিপ্ট...। বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক পরিচিত মুখ আছেন, যাঁরা মেডিকেলে পড়েছেন। আমি যেখানেই থাকি, যা-ই করি না কেন, মানুষ আমির সঙ্গী হিসেবে সাংস্কৃতিক চর্চা আমার সঙ্গেই থাকবে।’

জিনাত শারমিন