এআইইউবির ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত, চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পেলেন ৩ শিক্ষার্থী
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)–এর ২৩তম সমাবর্তন আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর ২০২৫) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিনের সম্মতিক্রমে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন এবং গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এআইইউবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাদিয়া আনোয়ার, এআইইউবির উপাচার্য সাইফুল ইসলাম ও সহ–উপাচার্য মো. আবদুর রহমান। এআইইউবির ২৩তম সমাবর্তনে বিভিন্ন অনুষদের মোট ১ হাজার ৭৬৬ শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এবারের সমাবর্তনে কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পেয়েছেন ৩ জন, সুম্মা কাম লাউড পেয়েছেন ৪৩ জন, ম্যাগনা কাম লাউড পেয়েছেন ৭৪ জন, কাম লাউড পেয়েছেন ২৬ জন, ডা. আনোয়ারুল আবেদীন লিডারশিপ পদক পেয়েছেন ১৯ জন এবং ভাইস–চ্যান্সেলর পদক পেয়েছেন ২১ জন।
সমাবর্তনের প্রধান অতিথি আবেদ চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্ব বর্তমানে এক বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংকট হলো ঝুঁকি ও সম্ভাবনার সমন্বয়। স্থানীয় ও বৈশ্বিকভাবে ঝুঁকি পরিমাপ ও সম্ভাবনা বিবেচনায় দেখা যায়, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি বলেন, ‘উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সেই শিক্ষা প্রতিফলিত হয়। সংকট শনাক্ত ও অতিক্রম করার সক্ষমতা রয়েছে তাঁদের এবং সংকটের বাইরে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যই দেশের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ আপনারাই।’
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ মুহূর্তটি কেবল একটি সমাবর্তন নয়; এটি আপনার বহু বছরের পরিশ্রমের স্বীকৃতি। পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের চাপ, নির্ঘুম রাত, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অটল থাকা, অভিভাবকদের কষ্টার্জিত টিউশন ফি, আর আপনার নিজের নিষ্ঠা ও ত্যাগ—সবকিছুরই সম্মিলিত স্বীকৃতি এটি।’
এআইইউবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাদিয়া আনোয়ার গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, ‘যখন আমি আপনাদের দিকে তাকাই, তখন শত শত গল্প ভেসে ওঠে। নীরবে লড়ে যাওয়া সংগ্রামের গল্প, হৃদয়ের গভীরে লালিত স্বপ্নের গল্প। সংশয়ে ভরা অসংখ্য রাত পেরিয়ে নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠা সকালের গল্প। আপনারা এই মুহূর্তে পৌঁছেছেন কোনো কাকতালীয়তায় নয়; পৌঁছেছেন নিজের শক্তি, আশার আলো ও ভবিষ্যতের প্রতি অটল অঙ্গীকারের পথ ধরে।’ তিনি তাঁর বক্তব্যে অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, সম্মান ও কৃতজ্ঞতা—এসব শুধু শব্দ নয়; এগুলো আমাদের অন্তরের গভীর অনুভূতির প্রকাশ। আপনারা নীরবে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, হয়তো নিজের স্বপ্ন পিছিয়ে দিয়েছেন, হয়তো নিজের ইচ্ছাগুলো সংযত রেখেছেন, সেই ত্যাগই আজকের এই সাফল্যের প্রকৃত ভিত্তি।’
সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক হাবিব ফারদৌন, এক্সিকিউটিভ কমিটি মেম্বার, আইআরইজি অবজারভেটরি অন একাডেমিক র্যাঙ্কিং অ্যান্ড এক্সিলেন্স, ব্রাসেলস শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এআইইউবির মূলমন্ত্র “হয়্যার লিডারস আর ক্রিয়েটেড” কেবল একটি বাক্য নয়, এটি শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন। যেকোনো র্যাঙ্কিংয়ের চেয়ে বড় বিষয় হলো বিশ্ব আপনাকে চেনে নেওয়ার আগেই এআইইউবি আপনার সম্ভাবনায় বিশ্বাস করেছে। আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো শিখতে থাকা, আবার নতুনভাবে শিখতে পারা—এই চলমান শিক্ষণপ্রক্রিয়ায় একজন কৌতূহলী মানুষ সেখানে সেতু নির্মাণ করেন, যেখানে অন্যরা কেবল দেয়াল দেখতে পান। ভবিষ্যৎ হবে তাঁদেরই, যাঁরা এই সেতুগুলো গড়ে তুলতে সক্ষম।’
এআইইউবির উপাচার্য সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং বলেন, ‘আপনি এই স্তরে পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন। তবে এখনো আপনাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে এবং জীবনে সফল হতে আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে। মনে রাখবেন, এটি কোনো শেষ নয়; বরং সম্ভাবনাময় একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুরু।’
এআইইউবির সহ–উপাচার্য মো. আবদুর রহমান গ্র্যাজুয়েট, অভিভাবক ও সম্মানিত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এআইইউবির পক্ষ থেকে আমরা সব গ্র্যাজুয়েট, অভিভাবক ও অতিথিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’
অনুষ্ঠানে এআইইউবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হাসানুল এ হাসান ও ইশতিয়াক আবেদীন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ–উপাচার্য, আমন্ত্রিত অতিথি, এআইইউবির কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, ডিন, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।