নটর ডেম কলেজ শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্র: ঢাবি উপাচার্য

নটর ডেম কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

নটর ডেম কলেজকে শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্র বা ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। কলেজটির ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

নটর ডেম কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী উত্সব উদ্‌যাপন চলছে। আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় দ্বিতীয় দিনের উদ্‌যাপন শুরু করা হয়। এর আগে গতকাল বিকেলে এই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘নটর ডেম কলেজকে “সেন্টার অব এক্সিলেন্স” আমরা বলতেই পারি। কারণ, এই কলেজে যাঁরা লেখাপড়া করেছেন, তাঁদের মধ্যে এমন একজনও পাওয়া যাবে না, যিনি কোনো না কোনোভাবে দেশ-রাষ্ট্রে কিংবা চারপাশের মানুষগুলোকে আলোকিত করার জন্য অবদান রাখেননি।’

মাকসুদ কামাল আরও বলেন, ‘কলেজে প্রবেশ করলেই মনে হয় একটি সুশৃঙ্খল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় এসেছি। শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতের পাশাপাশি কলেজ নিজেও ক্রমাগতভাবে প্রস্তুত হয়েছে। ৭৫তম বছরে দাঁড়িয়ে বোঝা যায়, কলেজের প্রভাব সমাজে, দেশে ও রাষ্ট্রে কত বেশি!’

মাকসুদ কামাল বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুব ভালোভাবে শুরু করেও রাজনীতি, পরিচালনা পর্ষদের কিংবা বাইরের প্রভাবে তাদের অস্তিত্ব সমানভাবে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। কিন্তু নটর ডেম কলেজ অব্যাহতভাবে এর প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম টিকিয়ে রাখতে পেরেছে।

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) চেয়ারম্যান আর্চবিশপ বিজয় এন ডি ক্রুজ তাঁর বক্তব্যে কলেজটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিবেদিতপ্রাণ অধ্যক্ষদের পরিশ্রম ও অবদান নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। আর্চবিশপ বিজয় বলেন, কলেজের শুরুতে ফাদার হ্যারিংটন প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন। কলেজটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি দিনরাত এত পরিশ্রম করেন যে ছয় বছরের মধ্যে অসুস্থ হয়ে তাঁকে দেশে ফিরে যেতে হয়। পরে ১১ বছর দায়িত্ব পালনের পর ফাদার জেমস মার্টিন ১৯৬০ সালে টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ফাদার রিচার্ড নোভাক ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় নারায়ণগঞ্জে এক ছাত্রের পরিবারের খোঁজ নিতে গিয়ে উগ্রবাদীদের ছুরিকাঘাতে মারা যান। শুরুতে এত বিপর্যয়ের পরেও ওই সময় সাতবার কলেজটি প্রথম স্থান অধিকার করে।

উৎসব বক্তা আবৃত্তিকার আশরাফুল আলম বলেন, নটর ডেম কলেজ শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান নয়, ব্যক্তিজীবনের জন্য নৈতিকতার শিক্ষাও দেওয়া হয়। এই নৈতিকতা নিয়েই কলেজের শিক্ষার্থীরা বেড়ে ওঠেন, জীবনের পথে এগিয়ে যান। নটর ডেম কলেজ নীরবে করলেও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সুনাম ও খ্যাতি সারা দেশে সরবে বিরাজ করছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও। তিনি উপস্থিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে নটর ডেম কলেজের বিভিন্ন কার্যক্রম ও এর উদ্দেশ্য তুলে ধরেন তিনি।
সাবেক শিক্ষার্থীদের উদ্দশ্যে ফাদার হেমন্ত বলেন, নটর ডেমিয়ানদের জন্য আজ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। আজ আমরা শিক্ষাজীবনের উচ্ছল তারুণ্যে ভরা দিনগুলোয় ফিরে যাব। পুরোনো দিনের মুখ স্মৃতিগুলো হাতরে বেড়াব। পুরোনো বন্ধু ও সহপাঠীদের নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে আত্মহারা হব।

ফাদার হেমন্ত আরও বলেন, ‘এ মিলনমেলা শুধু আড্ডা ও ফুর্তির জন্য নয়, আজ আমরা বিগত ৭৫ বছরের কলেজের মহান অর্জনগুলো জানব এবং ভবিষ্যতে কলেজের শিক্ষাসেবার মান অব্যাহত রাখতে ও উন্নয়নে করণীয়সমূহ সম্মিলিতভাবে নির্ধারণ করব।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট আনিস মাহমুদ, কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী স্মৃতিচারণামূলক বক্তব্য দেন। পরে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, এমন আলোকিত নটর ডেমিয়ানদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।

৭৫ বছর পূর্তি উৎসবে অতিথিরা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
আরও পড়ুন

সম্মাননা স্মারক পান—স্থপতি জালাল আহমেদ (ব্যাচ ১৯৭৭), ক্রিকেট প্রশিক্ষক নাজমুল আবেদিন ফাহিম (ব্যাচ ১৯৭৭), সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত (ব্যাচ ১৯৭৮), নাট্যকার ও চলচিত্র পরিচালক গাজী রাকায়েত (ব্যাচ ১৯৮৫), সিনেমাটোগ্রাফার এল অপু রোজারিও (ব্যাচ ১৯৯০), এইচএসবিসি ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও মাহবুবুর রহমান (ব্যাচ ১৯৮৭), চিকিৎসক রায়হান রাব্বানী (ব্যাচ ১৯৯১) এবং বিবিএস কেব্‌লের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বদরুল হাসান (ব্যাচ ১৯৯৩)। সম্মাননা দেওয়া হয় কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য গাজী আওলাদ হোসেন এবং চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানকেও।

কলেজের জন্য শিক্ষকদের অবদানের কথা স্মরণ করে এ সময় নটর ডেম কলেজ থেকে অবসরে যাওয়া সাবেক শিক্ষকদেরও এ সময় সম্মাননা দেওয়া হয়। শিক্ষকেরা হচ্ছেন—সুশান্ত কুমার সরকার, অমল কৃষ্ণ বণিক, গোপীনাথ কর্মকার, প্রমীলা ভট্টাচার্য, শীতল চন্দ্র দে, জহরলাল সরকার, ধীরেন্দ্র কুমার রায়, আফরোজা নাহার, জাহাঙ্গীর কবির, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, আবদুল হাদি, গাজী এস এম আজমল, দীলিপ ফিলিপ রোজারিও, সঞ্জিত কুমার গুহ এবং রুবি ইমেল্ডা গমেজ। পরে অতিথিরা ৭৫তম বর্ষের প্রকাশনা ‘সোনার তরী’র মোড়ক উন্মোচন করেন।

দ্বিতীয় দিনের উদ্‌যাপনে বিকেলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর। এর পরে সন্ধ্যায় ব্যান্ড দল মাইলসের পরিবেশনা রয়েছে। উৎসব উদ্‌যাপন চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত।