মাধ্যমিকে আবার অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু, পরীক্ষা-বাড়ির কাজ নয়

গত বছরের মতো এ বছরও ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ও নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। ২০ মার্চ থেকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। সপ্তাহ শুরুর দুদিন আগে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ও নির্ধারিত কাজ প্রকাশ করা হবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে। সপ্তাহ শেষে শিক্ষার্থীরা তাদের সেই অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ শেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে (সরাসরি/অনলাইনে) নতুন অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করবে। অনলাইনে বা সামাজিক দূরত্ব মেনে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া এবং গ্রহণ করতে বলা হয়েছে স্কুলগুলোকে।

গতকাল বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ও মূল্যায়ন নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে গত বছর ১৮ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে, ২০২১ শিক্ষাবর্ষে নির্ধারিত পাঠ্যসূচির কার্যক্রম শুরু করা হয়ে ওঠেনি। এ কারণে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিকে পুনর্বিন্যাস করে শিক্ষার্থীদের শিখনপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে গত বছরের মতো ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ধারাবাহিকভাবে অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে স্কুলে এসেছে বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীরা
প্রথম আলো ফাইল ছবি

অনলাইনে বা সামাজিক দূরত্ব মেনে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া এবং গ্রহণ করতে বলা হয়েছে স্কুলগুলোকে। কোনো শিক্ষার্থী যেন অর্থনৈতিক চাপের মুখে না পড়ে, সে বিষয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ২০ মার্চ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান ও জমা নেওয়ার কাজ শুরু করতে হবে। অ্যাসাইনমেন্ট ও নির্ধারিত কাজ ছাড়া কোনো ধরনের পরীক্ষা বা বাড়ির কাজ শিক্ষার্থীদের দেওয়া যাবে না।

এই অ্যাসাইনমেন্ট (কাজ) মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখনফল সবলতা বা দুর্বলতা চিহ্নিত করে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত সময়ে কাজের মাধ্যমে তাদের অর্জিত শিখনফল মূল্যায়ন করা হবে। পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে কোনো সপ্তাহে শিক্ষার্থীর কী মূল্যায়ন করা হবে, সে বিবেচনায় অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ প্রণয়ন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
করোনার কারণে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে এসে দীর্ঘ ৯ মাস পর দেখা দুই সহপাঠীর। ছবিটি সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে গত বছরে তোলা
ছবি: আনিস মাহমুদ

শিক্ষকদের জন্য মূল্যায়নের নির্দেশনা

অ্যাসাইনমেন্ট ও নির্ধারিত কাজ ছাড়া কোনো ধরনের পরীক্ষা বা বাড়ির কাজ শিক্ষার্থীদের দেওয়া যাবে না। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সব মূল্যায়ন রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজের আওতায় ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন, নির্দেশনা অনুসরণ করে নিবন্ধ, রচনা, অনুচ্ছেদ লিখন, সাহিত্য পর্যালোচনা, কেস স্টাডি, প্রজেক্ট, পরীক্ষণ, সারসংক্ষেপ, সারাংশ লিখন, মডেল, চার্ট, পোস্টার তৈরি, ছবি আঁকা, প্রতিবেদন প্রণয়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ সাদা কাগজে স্বহস্তে লিখে জমা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষকদের। অভিভাবক বা তাঁর প্রতিনিধি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতি সপ্তাহে একদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করবেন এবং জমা দেবেন। শিক্ষার্থীদের লেখায় তার মৌলিক চিন্তা, কল্পনা, সৃজনশীলতা প্রতিফলিত হয়েছে কি না, শিক্ষকেরা তা বিশেষভাবে লক্ষ করবেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটির অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ মূল্যায়ন করে তার সবল/দুর্বল দিকগুলো খাতায় চিহ্নিত করতে হবে। এমনভাবে মন্তব্য লিপিবদ্ধ করতে হবে, যেন শিক্ষার্থীরা তাদের সবল ও দুর্বলতার দিকগুলো বুঝতে পারেন। শিক্ষার্থীদের ‘অতি উত্তম’, ‘উত্তম’, ‘ভালো’, ‘অগ্রগতি প্রয়োজন’ ইত্যাদির মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্টগুলোর শাব্দিক মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে শিক্ষকদের।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড দেখে অ্যাসাইনমেন্ট করতে নিষেধ করেছে অধিদপ্তর। নোট–গাইড দেখে অ্যাসাইনমেন্ট করা হলে তা বাতিল করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আবারও সেই অ্যাসাইনমেন্ট করে জমা দিতে হবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বিস্তারিত পাওয়া যাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে (http://www.dshe.gov.bd)।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। এ বছরের ২৯ মার্চ পর্যন্ত ছুটি আছে। ৩০ মার্চে স্কুল কলেজ খোলার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন