অন্য রকম ‘পরীক্ষায়’ শিক্ষার্থী মূল্যায়ন, প্রস্তুতি কতটা

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে প্রথমবারের মতো ‘বার্ষিক মূল্যায়ন’ হচ্ছে। তবে এই পদ্ধতি আরও সহজ হোক, চান শিক্ষকেরা। আগামী বছর নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন উঠে যাচ্ছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক মূল্যায়ন কার্যক্রম। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে চলছে প্রস্তুতিমূলক পর্ব। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: দীপু মালাকার

রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক দল শিক্ষার্থী ফুটবল খেলা শুরুর আগে নিজেদের শরীর একটু ঝালাই করে নিচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরেই দুই দলের শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করে আঙিনার দুই প্রান্তে চলে গেল। ছোট্ট আঙিনায় শুরু হয়ে গেল ফুটবল খেলা। আঙিনার আশপাশে একই শ্রেণির আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী দর্শকের ভূমিকায় বসে আছে। কয়েকজন শিক্ষক এই দুই দলের খেলা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। কিছুক্ষণ পর এই দলের খেলা শেষ হলো। এরপর আরেক দল মাঠে নামল।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয় মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুতিমূলক এই কার্যক্রমে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন ফুটবল খেলছিল, তখন তিনতলায় একাধিক শ্রেণিকক্ষে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে মূল্যায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একটি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে জানা গেল, বিজ্ঞান বিষয়ের মূল্যায়নের প্রস্তুতি চলছে। দায়িত্বরত শিক্ষক প্রথম আলোকে জানালেন, যানবাহন চলাচলে পরিবেশের ওপর কেমন প্রভাব পড়ে, সেটা নিয়ে সপ্তম শ্রেণির এই শিক্ষার্থীরা নানা মানুষের সাক্ষাৎকার নেবে। তাদের সেই সাক্ষাৎকার নেওয়ার ফরম্যাট শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে বাইরের কারও নয়, তারা সাক্ষাৎকার নেবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী ও অন্য শিক্ষার্থীদের। তারপর নির্ধারিত দিনে উপস্থাপনার মাধ্যমে যানবাহন চলাচলে পরিবেশের প্রভাব ও করণীয় তুলে ধরবে শিক্ষার্থীরা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে চালুর পর নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথমবারের মতো বার্ষিক মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক মূল্যায়নের প্রস্তুতি পর্ব চলছিল। তিন ধাপে (তিন কর্মদিবস) শেষ করার কথা তাদের বার্ষিক মূল্যায়ন। প্রথম ধাপে ৯ নভেম্বর প্রস্তুতি পর্ব চলছিল।

যেভাবে হচ্ছে নতুন ব্যবস্থার মূল্যায়ন

শুধু রাজধানীতে নয়, শিক্ষা বিভাগের ঠিক করে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী সারা দেশে শুরু হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক মূল্যায়ন কার্যক্রম। চিরাচরিত খাতা-কলমের পরীক্ষার পরিবর্তে অন্য রকমের ‘পরীক্ষা’–এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের কাজ চলছে। আগে খাতায় পরীক্ষার পর যেভাবে নম্বর দিয়ে ফল তৈরি করা হতো, নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সেটি আর হচ্ছে না। একজন শিক্ষার্থী কতটা দক্ষতা বা পারদর্শিতা অর্জন করল, সেটি তিনটি চিহ্ন—‘চতুর্ভুজ, বৃত্ত ও ত্রিভুজ’ দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।

‘চতুর্ভুজ’ চিহ্ন হলো পারদর্শিতার প্রারম্ভিক স্তর। ‘বৃত্ত’ চিহ্নিতটি পারদর্শিতার অন্তর্বর্তীকালীন স্তর (মাঝারি)। আর যে শিক্ষার্থী নির্ধারিত দক্ষতা পুরোপুরি অর্জন করবে, তাকে ‘ত্রিভুজ’ চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হবে। অবশ্য এসব চিহ্ন দিয়ে মূল্যায়নের রেকর্ড সংগ্রহ করা হলেও ট্রান্সক্রিপ্টে চিহ্নগুলোর উল্লেখ থাকবে না। ট্রান্সক্রিপ্টের ফরম্যাটে এই চিহ্নগুলোর পরিবর্তে শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পারদর্শিতার মাত্রা ‘টিক’ চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হবে।

বর্তমানে জিপিএর (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করা হয়। নতুন পদ্ধতিতে জিপিএভিত্তিক ফলাফল ব্যবস্থা থাকছে না।

আরও পড়ুন

শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম পদ্ধতিগতভাবে অনেক ভালো। এই শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে শিক্ষায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, যা কর্মক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে। তবে মূল্যায়নের কাজ এখনো অনেক শিক্ষকের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। ফলে তাঁরা কিছুটা সমস্যায় পড়ছেন। তাঁরা বলছেন, মূল্যায়ন পদ্ধতি আরও সহজ করা দরকার। দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন তাঁরা। উল্লেখ্য, এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষকেরা হচ্ছেন মূল চালিকা শক্তি।

নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমটি খুবই ভালো। এটি নিয়ে কথা নেই। তবে তাঁর পরামর্শ হলো, মূল্যায়ন কাজটি কীভাবে আরও সহজ করা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) মূল্যায়নসংক্রান্ত কাজে বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের যুক্ত করা যেতে পারে।

তবে মূল্যায়নের ধারণাটি একেবারেই নতুন হওয়ায় প্রথম দিকে শিক্ষকদের কিছুটা অসুবিধা হতে পারে বলে মনে করেন জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এমন করে আগে কখনো মূল্যায়ন হয়নি। কাজেই পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে একটি সময় লাগবে। এত দিন মূল্যায়নের তথ্য-উপাত্ত খাতা–কলমে সংরক্ষণ করা হচ্ছিল। এখন একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এতে সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে বলে আশা করা যায়।

আরও পড়ুন

ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষাবর্ষের শেষ পর্যায়ে এসে এখন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এ জন্য বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য অন্যান্য শ্রেণির পাশাপাশি নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বই প্রণয়ন করে ছাপানোর কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আগামী শিক্ষাবর্ষ (২০২৪ সালের জানুয়ারি শুরু) থেকে মাধ্যমিক শিক্ষায় বড় ধরনের একটি পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। ছয় দশকের বেশি সময় পর এসে নবম শ্রেণিতে বিভাজন (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ) ব্যবস্থা উঠে যাবে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকেই অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে।

এত দিন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন বিষয় পড়তে হয়েছে। নবম শ্রেণিতে গিয়ে ঠিক হতো, একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে। এখন আর এসএসসি নয়, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে এই বিভাগ বিভাজনের ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা বিভাগ। তবে সেখানেও বিষয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য নমনীয়তা রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

শিক্ষা বিভাগের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে তা চালু হবে। অর্থাৎ ২০২৭ সালে গিয়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে নতুন শিক্ষাক্রম।

নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়েই। আর দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একইভাবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আলাদা দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। এখন পর্যন্ত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সব কোর্সের ওপর একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে হয়।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চমাধ্যমিক পাস করবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়ায়ও পরিবর্তন হবে। সেসব কার্যক্রমও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রেও পারদর্শিতার মূল্যায়নের ভিত্তিততেই নিয়োগ হবে। সেসব কার্যক্রমও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

ব্যবহারিক শিক্ষায় গুরুত্ব

নতুন শিক্ষাক্রমকে বিষয়বস্তুভিত্তিক নয়, যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম বলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখনের উদ্দেশ্য হলো কিছু সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করা। এতে হাতে–কলমে ব্যবহারিক শিক্ষা কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে প্রথাগত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পরিবর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিখনকালীন) মূল্যায়ন হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন ধরনের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে পুরোটাই মূল্যায়ন হবে। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে, অর্থাৎ পরীক্ষার ভিত্তিতে। তবে এই পরীক্ষাও আগের মতো শুধু খাতা-কলমনির্ভর নয়। ভিন্ন উপায়ে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যেমন অ্যাসাইনমেন্ট, প্রকল্প, ইভেন্ট আয়োজন, সমস্যা সমাধান ইত্যাদির মাধ্যমে এই মূল্যায়ন কার্যক্রম হচ্ছে।

যেমন প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ৯ নভেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের তিনতলার একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবিষয়ক কাজ করছে। একটি উপদলের কাছে গিয়ে দেখা গেল, মোটামুটি বড় একটি কাগজে জীবন ও জীবিকা বিষয়ের মূল্যায়নের কাজে ব্যস্ত তারা। তারা তিনটি সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছিল। তারা যে তিনটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে, সেগুলো হচ্ছে ডেঙ্গু, ধূমপান ও ডায়রিয়া।

এই উপদলের একজন শিক্ষার্থী বলল, তিনটি সমস্যার মধ্য থেকে একটি সমস্যা বাছাই করে দলগতভাবে তারা সেটি সমাধানের উপায় বের করবে।

শ্রেণিশিক্ষক জিসান আহমেদ জানালেন, মোট তিন দিনে হচ্ছে এই মূল্যায়ন কার্যক্রম। এই শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৪২ জন। তাদের কয়েকটি উপদলে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দিনে তারা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছে। দ্বিতীয় দিনে (নির্ধারিত এক দিন) সমস্যার সমাধানে নিজেদের পরিকল্পনা দলগতভাবে উপস্থাপন করবে। তৃতীয় দিনে ‘হেলথ ক্যাম্প’ করা হবে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার (যেমন রক্তচাপ মাপা) বিষয়গুলো নিয়ে মূল্যায়ন করা হবে।

শিক্ষক জিসান আহমেদ আশা করছেন, নতুন এই শিক্ষাক্রম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বেকারত্ব কমবে।

এর আগে সকালে উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গেলে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী বলছিল, ‘ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে শেখার কারণে সহজে ভুলব না।’

আরও পড়ুন

শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে

নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন কাজটি কীভাবে হবে, সে বিষয়ে সম্প্রতি বিষয়ভিত্তিক নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এ ছাড়া শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়নের তথ্য সংরক্ষণ ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুতের জন্য ‘নৈপুণ্য’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে এনসিটিবি।

মাউশি বলছে, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী বিষয়গত জ্ঞান কতটা মনে রাখতে পারছে, সেটির মূল্যায়ন এখন আর বিবেচ্য নয়। যোগ্যতার সব কটি উপাদান যেমন জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে একজন শিক্ষার্থী কতটা পারদর্শিতা (পারফরম্যান্স) অর্জন করতে পারছে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই মূল্যায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ পটভূমিতে বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্যে দিয়ে যোগ্যতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে। আর এই অভিজ্ঞতা চলাকালে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার ভিত্তিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে শিক্ষক মূল্যায়নের উপাত্ত সংগ্রহ করবেন।

মাউশির তথ্য বলছে, শিক্ষার্থীরা সারা বছর যে যোগ্যতা অর্জন করেছে, তা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে পারছে কি না, সেটাই বার্ষিক মূল্যায়নের সময় যাচাই করবেন শিক্ষকেরা। এই মূল্যায়নের তথ্যের সঙ্গে ষান্মাসিক (অর্ধবার্ষিক) সামষ্টিক মূল্যায়নের ট্রান্সক্রিপ্ট এবং শিখনকালীন মূল্যায়নের পারদর্শিতার সূচক সমন্বয় করে শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত ট্রান্সক্রিপ্ট ও রেকর্ড তৈরি করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের আরও দক্ষ করে তোলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাক্রম সংস্কারের প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও শিক্ষকদের দক্ষভাবে তৈরি করতে না পারলে সংস্কার সফল হবে না। এ জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন শিক্ষককে উপযুক্তভাবে তৈরি করা ও তাঁর সক্ষমতা এবং সংস্কারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা।

এ ছাড়া পরিবর্তনের বিষয়টি অভিভাবকদের সঠিকভাবে জানানো। এই প্রক্রিয়ায় তাঁদেরও সঙ্গে রাখতে হবে। দেশের ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা হচ্ছে, শিক্ষাক্রমে কী লেখা থাকে, তা দিয়ে বলা যায় না শিক্ষার্থী কী শেখে। যা লেখা থাকে তা শ্রেণিকক্ষে কাজে লাগানোর পরিবেশ, শিক্ষকের দক্ষতা, মানসিকতা ও শিক্ষার্থীর পাঠে অংশগ্রহণের সক্ষমতা—এসবেই স্থির হয় শিক্ষার্থীর ফলাফল কী হবে।