জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের অনলাইনে রেখে আরেক ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চাওয়া পরীক্ষার্থীরা। এদের মধ্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোাগ পেয়েছেন তাদের শশরীরে ক্লাস শুরু হয়নি
ছবি প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫২তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাত মাস পার হলেও এখনো সশরীর পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়নি; যেখানে একই শিক্ষাবর্ষের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিভাগে প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম ব্যাচের সশরীর ক্লাস শুরু করতে না পারলেও ইতিমধ্যে তাদের পরবর্তী ব্যাচ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করেছে প্রশাসন। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ৫৩ ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগে যথাযথ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হয়। কিন্তু প্রশাসন ৫২তম ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা শেষের সাত মাস পার হলেও সশরীর ক্লাস না নিয়ে একধরনের প্রতারণা করে চলেছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের গণরুমে না উঠিয়ে নতুন হলে আসন দিয়ে সশরীর ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু জনবল সংকটের কারণে নতুন হলগুলো তারা চালু করতে পারেনি।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গত বছরের ১৮ জুন শুরু হয়ে ২৪ জুন শেষ হয়। এরপর দীর্ঘ পাঁচ মাস পার হলেও ক্লাস শুরু করতে পারেনি প্রশাসন। সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর অনলাইনে ক্লাস শুরু করা হয়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউজিসির স্বাক্ষরিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০২৩-২৪ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস ৩১ অক্টোবর, ৯ নভেম্বর, ১৬ নভেম্বর, ২৩ নভেম্বর শুরু করবে বলে ইউজিসিকে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুত তারিখে ক্লাস শুরু করতে ব্যর্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই চারটি তারিখের মধ্যে ক্লাস শুরু করতে পারলে ইউজিসি কর্মসম্পাদন সূচক মান ১–এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ থেকে ৭০ শতাংশ নম্বর পেত। অপর দিকে পরবর্তী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরু করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয় চলতি মানের নিম্নে ৬০ শতাংশ নম্বর পাবে। এ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে প্রশাসন অনলাইনে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে নবীনতম ব্যাচের কয়েক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইন্টারনেট কিনতে অনেক টাকা খরচ হওয়ায় তাঁরা নিয়মিত ক্লাসে বসতে পারেন না। এ ছাড়া অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হলেও ইন্টারনেট দুর্বলতার কারণে ঠিকমতো পাঠ নিতে পারেন না।

কবে নাগাদ ৫২ ব্যাচের ক্লাস সশরীর শুরু হবে, এখনো নির্দিষ্ট করে তারিখ ঠিক করা হয়নি। নতুন হলের জনবল সংকট নিরসনে তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর ৫২ ব্যাচের সশরীর ক্লাস দেরিতে শুরু হলেও এর কোনো প্রভাব পরবর্তী ব্যাচে পড়বে না
মো. নূরুল আলম, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

পাবনা জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থান করছেন ৫২ বাচের শিক্ষার্থী নিশান খান। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস শুরু হওয়ায় আমরা অনেক জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছি। ধীরগতির ইন্টারনেট ও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছি না। এলাকার লোকজন আমাদের নিয়ে বুলিং করেন। তাঁরা সন্দেহ করেন, আমরা আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছি কি না। তখন অনেক খারাপ লাগে, হতাশা কাজ করে। অতি দ্রুত ক্লাস নেওয়ার দাবি জানাই।’

আরও পড়ুন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষের (৫৩তম ব্যাচ) ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

অনলাইন ক্লাস আদৌ কতটা ফলপ্রসূ—জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তবতায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও অনলাইনে পাঠদানের গুণগত তফাতটি করোনা মহামারির সময় বেশ স্পষ্টভাবে চোখে পড়েছে। শ্রেণি কার্যক্রমে আগ্রহী শিক্ষক-শিক্ষার্থী কোনো পক্ষের জন্যই অভিজ্ঞতাটি খুব সুখকর হওয়ার কথা নয়। ভালো মানের ল্যাপটপ বা ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও দ্রুতগতির ইন্টারনেটের অপ্রাপ্যতার ফলে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের ভেতর একদিকে যেমন ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি করে, অন্যদিকে শুধু প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রমের ফলে তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির মানসিক বিচ্ছিন্নতাও তৈরি করে, যা দিন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অংশীজনদের জন্য ইতিবাচক কোনো ফলাফল বয়ে আনতে পারে না। পুরো বিষয়টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পেছনের দর্শনটি প্রায় অনুপস্থিত থাকে, শিক্ষার্থীদের হতাশা ও অবসাদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাব্যতায় পূর্ণ থাকে।’

আরও পড়ুন

নতুন ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে, যা চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর ভর্তি পরীক্ষার আনলাইনে আবেদন শুরু হবে ১৪ জানুয়ারি, যা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবার ভর্তি পরীক্ষা এ, বি, সি, সি১, ডি, ই এবং আইবিএ-জেই মোট সাতটি ইউনিটে পরীক্ষা হবে। এ ইউনিটের অধীন গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, বি ইউনিটের অধীন সমাজবিজ্ঞান ও আইন অনুষদ, সি ইউনিটের অধীন কলা ও মানবীকি অনুষদ এবং বঙ্গবন্ধু ও তুলনামূলক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, ডি ইউনিটের অধীন জীববিজ্ঞান অনুষদের জন্য ৯০০ টাকা ফি নির্ধারিত হয়েছে। আর ই ইউনিটের অধীন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের জন্য ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সি১ ইউনিটের অধীন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব এবং চারুকলা বিভাগ আর আ বিএ-জেউ ইউনিটের জন্য ৬০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ–সংক্রান্ত কোনো কিছুই বলতে পারবেন না। তিনি উপাচার্যের অধীন। তিনি এসব বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম প্রথম আলোকে জানান, কবে নাগাদ ৫২ ব্যাচের ক্লাস সশরীর শুরু হবে, এখনো নির্দিষ্ট করে তারিখ ঠিক করা হয়নি। তবে তাঁরা চেষ্টা করছেন, এ মাসের মধ্যেই সশরীর ক্লাস শুরু করতে পারবেন। নতুন হলের জনবল সংকট নিরসনে তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর ৫২ ব্যাচের সশরীর ক্লাস দেরিতে শুরু হলেও এর কোনো প্রভাব পরবর্তী ব্যাচে পড়বে না।