বিশ্বের দীর্ঘতম ১৩ ঘণ্টার পরীক্ষা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যেভাবে দেয়

পরীক্ষায় সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় শিক্ষার্থীদেরছবি: এআই/প্রথম আলো

প্রতিবছর নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া থমকে যায় বহুল আলোচিত কলেজ ভর্তি পরীক্ষা ‘সুনুং’–এর কারণে। যেদিন দেশজুড়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেদিন দোকানপাট বন্ধ থাকে, বিমানের ফ্লাইট বিলম্বিত হয় শব্দ কমানোর জন্য, এমনকি সকালের ব্যস্ত যাতায়াতও ধীর হয়ে যায় পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে। এ পরীক্ষা দক্ষিণ কোরিয়ার কলেজ স্কলাস্টিক অ্যাবিলিটি টেস্ট বা সিএসএটি নামে পরিচিত।

কলেজ ভর্তির জন্য ১৩ ঘণ্টার এ পরীক্ষার নাম সুনুং
ছবি: এআই/প্রথম আলো

১৩ ঘণ্টার সুনুং

বিকেলের দিকে সাধারণ পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে, পরিবার-স্বজনের সঙ্গে আলিঙ্গন করে। কিন্তু সবার জন্যই এই মুহূর্ত আসে না। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে আসার পরও কিছু শিক্ষার্থী তখনো পরীক্ষার ঘরে—তাদের পরীক্ষা শেষ হয় রাত ১০টার কাছাকাছি।

তাঁরা হলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, যাঁদের জন্য সুনুং হয়ে ওঠে প্রায় ১৩ ঘণ্টার এক ম্যারাথন। আগামী বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী সুনুং পরীক্ষায় অংশ নেবেন—গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আবেদনকারী।

আরও পড়ুন

ভাষা, গণিত, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান বা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, অতিরিক্ত বিদেশি ভাষা এবং হাঞ্জা—এসব মিলিয়ে প্রায় ২০০ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর জন্য সুনুং একটি টানা আট ঘণ্টার পরীক্ষা, সকাল ৮টা ৪০ থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে।

কিন্তু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় ১ দশমিক ৭ গুণ। ফলে যদি তারা অতিরিক্ত বিদেশি ভাষার পরীক্ষাও দেয়, তাহলে পরীক্ষা শেষ হতে পারে রাত ৯টা ৪০-এ—শুরু হওয়ার প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর। কোনো খাবারের বিরতি নেই; পরীক্ষা চলে টানা।

আরও পড়ুন

ব্রেইল প্রশ্নপত্রের ভরও সময় বাড়িয়ে দেয়। প্রতিটি বাক্য, চিহ্ন বা চিত্র ব্রেইলে রূপান্তরিত হলে একটি প্রশ্নপত্র সাধারণ কাগজের তুলনায় ছয় থেকে নয় গুণ মোটা হয়ে যায়।

ডংহিউনের প্রস্তুতি

সিউলের হানবিট স্কুল ফর দ্য ব্লাইন্ডে পড়েন ১৮ বছর বয়সী হান ডংহিউন। এ বছর তিনিই সুনুংয়ের দীর্ঘতম সংস্করণটি দেবেন। গত বছর দেশজুড়ে ১১১ জন দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন—যাঁদের মধ্যে ৯৯ জন কম দৃষ্টিসম্পন্ন এবং ১২ জন ছিলেন ডংহিউনের মতো সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তিহীন।

৭ নভেম্বর বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতে দেখা যায়, তার আঙুল দ্রুত ছুটে চলছে পূর্ববর্তী বছরের ব্রেইল প্রশ্নপত্রের ওপর। পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ বাকি, তাই তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন স্ট্যামিনা ও শারীরিক সক্ষমতা ধরে রাখতে। ব্রেইল প্রশ্নপত্র এবং স্ক্রিন-রিডার কম্পিউটার ব্যবহার করে তিনি পরীক্ষা দেবেন।

ভাষা, গণিত, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান বা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, অতিরিক্ত বিদেশি ভাষা এবং হাঞ্জা—এসব মিলিয়ে প্রায় ২০০ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষায়
ছবি: এআই/প্রথম আলো

ডংহিউন বলেন, ‘পরীক্ষাটা খুবই ক্লান্তিকর কারণ সময় এত দীর্ঘ। কিন্তু বিশেষ কোনো কৌশল নেই। আমি শুধু পড়ার সময়সূচি অনুসরণ করি এবং নিজের অবস্থা ঠিক রাখার চেষ্টা করি—এটাই একমাত্র উপায়।’

দক্ষতা, মনোযোগ ও সহনশীলতার চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে ওঠে সুনুং আর দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য তা সত্যিই দিনের পর দিন মনে পড়ার মতো এক কঠিন লড়াই।