কোন বিষয় নিয়ে পড়বেন
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলছেন, তুমি যা পড়ছ, সেটির গভীরে যাও। সেটির সর্বোচ্চ রস আস্বাদন করো। কারণ, সেটি তুমি ভালোবাসো।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ফেলছেন। এখন ভাবছেন কোথায় পড়বেন? ভর্তিযুদ্ধে লড়াই করছেন অনেকেই। আবার অনেকেই বিষয় নিয়ে চিন্তায় আছেন। কোন বিষয় নিয়ে পড়লে ভবিষ্যৎ ভালো হবে। আমি বলি, এটা ভাবা বা চিন্তার কোনো ব্যাপারই নয়। আমি মনে করি, এটা নিয়ে বেশি ভাবা বোকামির কাজ।
স্নাতক বা সম্মান পর্যায়ে বিষয় আসল কথা নয়। আমরা অনেকেই ভাবি ম্যাথ, ফিজিকস, কেমিস্ট্রি, অর্থনীতি বিষয়ে পড়া ছাড়া জীবনে ভালো কিছু করা যায় না। এটা একদমই ভুল। বর্তমান সময়ে বেশি লাগে সৃজনশীলতা, নেটওয়ার্কিং ও দক্ষতা।
এখন তাই কোন বিষয়ে আপনি পড়ছেন, তার চেয়ে বেশি দরকারি হচ্ছে নিজেকে দক্ষ করতে পারছেন কি না। দক্ষতার মধ্যে প্রধান কাজগুলো হলো দলীয় কাজ, পরিকল্পনা, সৃজনশীলতা, ‘ক্রিটিক্যাল থিংকিং’ ও সমস্যা সমাধানের পটুত্ব। মূলকথা হলো আপনি যেকোনো বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েও এ দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তাহলে আপনি কোন বিষয়ে পড়বেন?
আপনার যে বিষয়টি পড়তে ভালো লাগে। যেটা আপনি সহজেই আয়ত্ত করতে পারেন। যে বিষয়টি নিয়ে আপনার মাথায় সব সময় কাজ করে, সেটা যে বিষয়ই হোক আপনি তা নিয়েই ভাবুন। এ ছাড়া বাড়তি কিছু ভাবার প্রশ্নই আসে না। আপনি তুলনামূলক সাহিত্য, প্রকৌশল, আইন তত্ত্বীয়, ব্যবসা বা যেকোনো বিষয়ে একেবারে গভীরে যেতে পারেন, কোনো অসুবিধা নেই। এতে আপনার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো কী জানেন? আমরা যেকোনো কাজ বা যেকোনো বিষয়কে ভিন্ন চোখে বা ছোট করে দেখি। এটা আমাদের একধরনের মূর্খতা বা অজ্ঞতা । এ অজ্ঞতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলছেন, ‘তুমি যা পড়ছ, সেটির গভীরে যাও। সেটির সর্বোচ্চ রস আস্বাদন করো। কারণ, সেটি তুমি ভালোবাসো।’ রসায়নের আমার এক শিক্ষক প্রায়ই ক্লাসে বলতেন, ‘অনার্স হচ্ছে আনারসের মতো। আনারসকে যেমন চাপলে রস বের হয়, অনার্সের বিষয়কেও তুমি ভালোভাবে পড়লে ভালো রস, অর্থাৎ জ্ঞান আহরণ করা যায়। যেটা তুমি বেশি ভালোবাসো, সেটা নিয়ে তুমি বেশি ভাবো বা সেটার ভেতরে প্রবেশ করো, তাহলে দেখবে, সেটা তোমার অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে।’
এরই মধ্যে আপনি হয়তো ভাবছেন, দুনিয়ায় এখন চারদিকে তথ্যপ্রযুক্তি আর প্রোগ্রামারদের জয়জয়কার। সে ক্ষেত্রে কেমিস্ট্রি বা গণিত পড়ে কি তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারব? অবশ্যই পারবেন। বাংলাদেশে এখন এমনও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে পড়তে পড়তেই সবার চাকরি হয়ে যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব ডিসিপ্লিন কিন্তু এখন ওপরে উঠে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে দেশে এমন লোক খুঁজছে, যাঁরা সমস্যার সমাধানে যেমন দক্ষ, তেমনি সৃজনশীলও।
শুধু চাকরির কথা ভেবে কোনোমতেই বিষয় বাছাই করবেন না। যদি গণিতকে ভয় পান, তবে অর্থনীতি ও ফিন্যান্সের মতো বিষয় নেওয়ার আগে একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে নিন, সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন কি না। প্রয়োজন হলে যে ধরনের অঙ্ক আপনাদের করানো হবে, সেগুলো বুঝতে পারছেন কি না, তা আগেই একটু ঝালাই করে নিন।
বিচারক হওয়ার উচ্চাশা নিয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হওয়া সমীচীন নয় যদি আপনি বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে মুখস্থবিদ্যার চর্চা না করতে চান। আইন বিভাগ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রভৃতি বিষয়ে মুখস্থ করার দক্ষতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি মুখস্থ করতে পছন্দ না করেন, তবে এই বিষয়গুলো তাঁদের জন্য উপযুক্ত নয়।
আপনি হয়তো এমন কিছু পড়তে চাচ্ছেন, যেটা এ দেশে পড়ার সুযোগ নেই। আপনি আপনার পছন্দের বিষয়ের কাছাকাছি কোনো বিষয়ে ভর্তি হয়ে ইন্টারনেটেই কাঙ্ক্ষিত বিষয় জেনে নিতে পারেন এবং হাজির হতে পারেন ভাইভা বোর্ডে।
অনেকেই নিজের পছন্দের বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন না। এতে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনি যে বিষয় পেয়েছেন বা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন, সে বিষয় আর বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যয়ন চালিয়ে যান। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। পড়ালেখা শেষে যখন আপনি চাকরির ভাইভা বোর্ডে যাবেন, তখন কেউ আপনার কাছে পঠিত বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জানতে চাইবেন না। তাঁরা আপনাকেই জানতে চাইবেন।
জানেন তো এ পৃথিবীতে যাঁরা অমর হয়ে আছেন বা উচ্চ স্থানে পা রেখেছেন, তাঁরা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেও পারেননি, সবাই পরিশ্রম ও দক্ষতার দ্বারাই হয়েছেন। আপনি আপনার লক্ষ্য–উদ্দেশ্যকে স্থির করে দক্ষতা ও সৃজনশীল মনোবিকাশ বাড়ান। সততা আর সাহসিকতা নিয়ে চলুন। তাহলে আমি মনে করি, আপনিও সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। আপনিও অমর হয়ে থাকবেন এ পৃথিবীতে।
বিষয় আপনার পছন্দ হলে আপনি পড়ালেখা করেও আনন্দ পাবেন। পরবর্তীকালে কর্মক্ষেত্রে গেলে আপনার কাজও আপনি উপভোগ করবেন। সে বিষয়ে আপনি পরীক্ষার পড়ার বাইরেও পড়ে আনন্দ পাবেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আপনার পরীক্ষার পড়ালেখা তো থাকবেই, নিজে থেকেও সেই বিষয়ে পড়তে চাইবেন, অর্থাৎ আপনি আর পড়ালেখা থেকে মুক্তি চাইবেন না। পড়ালেখা আপনার জন্য উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
লেখক: এম শরীফ আহমেদ, তরুণ উদ্যোক্তা, স্বেচ্ছাসেবী