ঢাবির সেই কাটা গাছের জায়গায় নতুন চারা রোপণ ছাত্র ইউনিয়নের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের সামনের কেটে ফেলা কৃষ্ণচূড়াগাছটির কাছে একটি নতুন কৃষ্ণচূড়ার চারা রোপণ করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া কৃষ্ণচূড়াগাছটিকে ‘প্রতীকী লাশ’ আখ্যা দিয়ে ওই গাছের একটি ডাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের সামনে রেখে এসেছেন তাঁরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতা-কর্মীরা এসব কর্মসূচি পালন করেন। কৃষ্ণচূড়াগাছটি কাটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই দিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কাটা গাছটির ছবি পোস্ট করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী অনেকে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, গাছটি কাটা হয়েছে নিরাপত্তার কারণে।
এদিকে গাছ কাটার প্রতিবাদে আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈমের নেতৃত্বে কয়েক নেতা-কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে যান। তখন গাছটির গুঁড়ি কাটছিলেন কয়েক শ্রমিক। রাগীব নাঈম তাঁদের কাজ বন্ধ রেখে বিশ্রাম নিতে বলেন। এরপর ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা কাটা গাছটির পাশে কৃষ্ণচূড়ার একটি চারা রোপণ করেন।
গাছ রোপণের পর রাগীব নাঈম সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে যখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে, যখন নির্মল বাতাসের জন্য আরও গাছপালা দরকার, সেই সময়ে ক্যাম্পাসে গাছ কাটা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’ তিনি বলেন, ভাস্কর্য বিভাগের শিল্পীরা গাছ দিয়ে নানা ধরনের ভাস্কর্য তৈরি করে থাকেন। ক্যাম্পাসের কাটা গাছগুলো বিক্রি না করে এগুলো ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে হস্তান্তর করা হোক। এই গাছগুলো যেন কোনোভাবেই টেন্ডারবাজদের হাতে না যায়।
এরপর কাটা গাছটির একটি ডালের খণ্ড সাদা কাপড়ে মুড়ে তার ওপর লাল রং লাগিয়ে সেটি উপাচার্য ভবনের সামনে রেখে আসেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা। সাদা কাপড়ে মোড়ানো ডালের খণ্ডকে গাছটির প্রতীকী লাশ আখ্যা দেন তাঁরা। এ ছাড়া ওই প্রতীকী লাশ সামনে রেখে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে আইন বিভাগের ছাত্র কাজী রাকিব হোসাইন বলেন, ‘কৃষ্ণচূড়াগাছটি কেটে ফেলার মূল হোতা উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। তাই প্রতীকী লাশটি আমরা তাঁর বাসভবনের সামনে নিয়ে এসেছি। কৃষ্ণচূড়াগাছটি কেটে ফেলার পাশাপাশি এর বাস্তুতন্ত্রকেও হত্যা করা হয়েছে। কাটা গাছটির বদলে অন্তত ১০০ গাছ লাগাতে হবে। কাটা গাছটির কাঠ বিক্রি করা যাবে না। এগুলো ভাস্কর্য বিভাগের শিল্পীদের ভাস্কর্য বানানোর জন্য দিতে হবে।’ সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফারজানা মীম বলেন, ‘গাছ কাটায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মরতদের বিচার দাবি করছি।’
এদিকে গাছটি কাটার বিষয়ে ক্যাম্পাস এলাকার গাছপালা তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরি কালচার সেন্টারের পরিচালক মিহির লাল সাহা গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা পারতপক্ষে কোনো গাছ কাটি না। এ পর্যন্ত ৪০০টির বেশি উদ্ভিদ প্রজাতি আমরা সংরক্ষণ করেছি। যে কৃষ্ণচূড়া গাছটি কাটা হয়েছে, সেটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কেটে সেখানে নতুন গাছ লাগানো হবে।’