যুদ্ধের মধ্যেও নিজের ডাক্তারির স্বপ্নপূরণে ৫০ লাখ টাকা তুলছেন আলহাবিল

মোহাম্মদ আলহাবিল এবং তাঁর পরিবারকে ডিসেম্বরে খান ইউনিসের বাড়ি থেকে রাফাহতে "জোর করে বাস্তুচ্যুত" করা হয়েছিলছবি: বিবিসি

গাজার খান ইউনিসের মোহাম্মদ আলহাবিল। পড়ছিলেন মেডিকেলের শেষ বর্ষে। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে গাজায় গড়ে তুলবেন নিজস্ব ক্লিনিক। নিজের স্বপ্নপূরণে ঠিকঠাক এগোচ্ছিলেন। এ জন্য ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দুটি হাসপাতালে প্রশিক্ষণেও অংশ নিয়েছিলেন।

কিন্তু হঠাৎ বিধিবাম। চলমান ইসরায়েলি হামলা শুরুর ঠিক সপ্তাখানেক আগে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে আসেন গাজায়। হামলা শুরু হলে একপর্যায়ে পরিবারসহ বাস্তুচ্যুত হতে হয় তাঁকে। খান ইউনিস থেকে অন্য আরও ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি নাগরিকের সঙ্গে জোরপূর্বক তাঁদের চলে আসতে হয় রাফা এলাকায়। তাঁর পরিবারসহ কোনো ফিলিস্তিনিই এখানেও শান্তিতে নেই, যেকোনো সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ভয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। এর মধ্যে আছে খাবার, পানি ও বাসস্থানের তীব্র সংকট।

আলহাবিল যখন তাঁর মেডিকেল ডিগ্রি শেষ করার উপায় নিয়ে ভাবছিলেন, তখনই এই তহবিল সংগ্রহের কথা তাঁর মাথায় আসে।
ছবি: বিবিসি

‘আমি খান ইউনিসে থাকতাম। এখন আমার বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ছাই হয়ে গেছে। আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন এখন শুধু টিকে থাকার ও বেঁচে থাকার উপায় অনুসন্ধানে পরিণত হয়েছে। অথচ মাত্র ছয় মাস আগেও আমি বসেছিলাম জন রেডক্লিফ হাসপাতালে, যেখানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসেবে আমাকে গ্রহণ করা হয়েছিল’, বলছিলেন আলহাবিল।

মোহাম্মদ আলহাবিল দুই মাস ধরে জন রেডক্লিফ হাসপাতাল এবং চার্চহিল হাসপাতালে জেনারেল সার্জন হিসেবে ভাস্কুলার ও লোয়ার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সার্জারি (GI) প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এখন তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলার ফলে সৃষ্ট সংঘাত থেকে বাঁচতে এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা শেষ করতে একটি তহবিল সংগ্রহ (ফান্ড রেইজ) করছেন। তাঁর লক্ষ্য ৩৪ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করা। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫০ লাখ টাকা। যার অর্ধেকের বেশি টাকা ইতিমধ্যে সংগৃহীত হয়েছে।

সামান্য রুটি ও পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে
ছবি: বিবিসি


আলহাবিল বলছিলেন, ‘গাজার যুদ্ধ আমার স্বপ্নকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছে, আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ যেন এক দুঃস্বপ্নের মতো কাটছে আমার। এখানে সবকিছুরই ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। আমি যখন বাজারে যাই মনে হয়, আমি যেন কোনো মানুষের জোয়ারের মধ্য দিয়ে হাঁটছি। সামান্য রুটি ও পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।’

আলহাবিল যখন তাঁর মেডিকেল ডিগ্রি শেষ করার উপায় নিয়ে ভাবছিলেন, তখনই এই তহবিল সংগ্রহের কথা তাঁর মাথায় আসে। ‘মানুষের কাছ থেকে আমি অনেক সমর্থন পাচ্ছি এবং তাঁদের কথাগুলো সত্যিই অসাধারণ’, আলহাবিল বলছিলেন।