দ্বাদশ পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালুর আহ্বান

শিক্ষা তো শুধু উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের জন্য নয়। এই বৈষম্য কেন বাড়ানো হচ্ছে। সরকার দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করতে পারে।

রাশেদা কে চৌধূরীফাইল ছবি প্রথম আলো

শিক্ষা যেখানে বৈষম্য দূর করার হাতিয়ার হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তা বৈষম্য তৈরির হাতিয়ার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, শুধু উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য নয়, নিম্নবিত্তের জন্যও শিক্ষা নিশ্চিত করতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু করতে হবে। 

গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক এক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

সংলাপের আয়োজক সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। গতকালকের এ আয়োজন সিজিএসের ধারাবাহিক ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’–এর অংশ। সংলাপে সম্মানিত অতিথি ছিলেন রাশেদা কে চৌধূরী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। 

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার কারণে বৈষম্য বাড়বে

ঢাকায় বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি বাড়ানোর সমালোচনা করেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এমন হলে ঢাকা শহরের বস্তিতে থাকা লক্ষাধিক মানুষের সন্তানেরা এসব স্কুলে পড়তে পারবে কি না। প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা তো শুধু উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের জন্য নয়। এই বৈষম্য কেন বাড়ানো হচ্ছে। সরকার এটাকে অবৈতনিক করতে পারে। 

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার কারণে বৈষম্য বাড়বে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে এত মানুষ প্রাণ দিল, সেখানে আবার কোটা পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। বাকি ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী কোথায় যাবে? এ সময় শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা না হলেও স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি।

আরও পড়ুন

সংলাপে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা যেমন মানুষের অধিকার, তেমনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাও মানুষের অধিকার। এটা সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে। এরপর আসবে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা। সেখানে বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এই খাতে সুশাসন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন

সংলাপে শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনস্বাস্থ্যবিদেরা অংশ নেন। তাঁদের আলোচনায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সমস্যার কথা উঠে আসে। এ সময় কোনো সরকারই শিক্ষকদের মর্যাদা দেননি দাবি করে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে হবে। বিগত সরকার শিক্ষকদের বেতন–ভাতা নির্ধারণ করতে গিয়ে তৃতীয় পর্যায়ে নামিয়েছিল। এরপর শিক্ষকদের আন্দোলন করতে হয়েছে। একজন সচিবের নিচে একজন অধ্যাপক কেন থাকবেন, এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।

বক্তৃতা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। 

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। 

সংলাপে আরও বক্তব্য দেন জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান সরদার এ নাঈম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মামুন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শওকত আরা হোসেন, জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির (জি এম কাদের অংশের) মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির ‘থিঙ্কট্যাংক’ জি–নাইন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত প্রমুখ। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের সভাপতি জিল্লুর রহমান।