যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ: আবেদন, খরচ ও বৃত্তির খোঁজ

উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের নাম বিশ্বজুড়েই সুপরিচিতছবি: ফ্রিপিক

চিরাচরিত ইতিহাস, রাজকীয় স্থাপত্য, সবুজে ঘেরা প্রাচীন ক্যাম্পাস আর জ্ঞানের দীপ্তি মিশে আছে যুক্তরাজ্যের বাতাসে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই দেশটি শুধু রাজনীতি বা সংস্কৃতি নয়, শিক্ষার ক্ষেত্রেও এক অনন্য ঐতিহ্য বহন করে আসছে। উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের নাম তাই বিশ্বজুড়েই সুপরিচিত। বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, মানসম্মত শিক্ষা ও প্রাণবন্ত সংস্কৃতির কারণে দেশটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অন্যতম পছন্দের জায়গা।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্যে অবস্থিত। যেমন অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু শিক্ষার মানে নয়, বরং গবেষণার গভীরতা ও বাস্তবমুখী শিক্ষাপদ্ধতির জন্যও বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। এখানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের অসংখ্য বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে, যার মধ্যে অনেক কোর্সই ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

এ ব্যাপারে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় সেনজেন এডুকেশন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের প্রক্রিয়া সাধারণত সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা–পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ও এজেন্ট, যাদের মাধ্যমেও আবেদন করা যায়। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ভর্তির প্রক্রিয়া, নথি প্রস্তুতি ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে।’

মনিরুল হক আরও বলেন, ‘ভর্তিপ্রক্রিয়ায় আবেদনকারীর একাডেমিক যোগ্যতা, ভাষাগত দক্ষতা যেমন আইইএলটিএস, ওটিআই, ডুলিঙ্গো, এমওআই বা টোফেল পরীক্ষার ফলাফল, ব্যক্তিগত বিবৃতি এবং সুপারিশপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

আরও পড়ুন

যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলক কিছুটা বেশি হলেও শিক্ষার মানের দিক থেকে তা যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ। গড়ে স্নাতক পর্যায়ের বার্ষিক টিউশন ফি প্রায় ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা, আর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তা প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা হতে পারে। পাশাপাশি, লন্ডন বা বড় শহরগুলোয় জীবনযাত্রার খরচ গড়ে প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন কাজের মাধ্যমে এর একটি বড় অংশ পূরণ করতে পারেন।

স্টুডেন্ট ভিসাধারী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পান। প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করারা সুযোগ রয়েছে। এই আয় বাসা ভাড়া, খাবার ও অন্যান্য দৈনন্দিন খরচ সামলাতে যথেষ্ট সহায়ক।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার জন্য রয়েছে নানা বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তার সুযোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চিভনিং স্কলারশিপ, কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, রোডস স্কলারশিপ, ইম্পেরিয়াল কলেজ প্রেসিডেন্ট বৃত্তি, থিঙ্ক বিগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গ্রেট স্টার্ট স্কলারশিপ, ইউসিএল গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ, আম্বার স্কলারশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফি মওকুফের সুযোগ। এসব বৃত্তির মাধ্যমে শুধু টিউশন ফি নয়, বরং থাকা, যাতায়াত ও অন্যান্য ব্যয়ও বহন করা হয়। ফলে যোগ্যতা ও আগ্রহ থাকলে তুলনামূলক কম খরচে বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব।

শিক্ষার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী শহর, গবেষণার সুযোগ এবং বিশ্বব্যাপী সংযোগ—সব মিলিয়ে এটি শুধু পড়াশোনা নয়, বরং এক গভীর শিক্ষামূলক ও মানবিক যাত্রা। তাই যাঁরা বিশ্বমানের শিক্ষা, গবেষণা ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা খুঁজছেন, তাঁদের জন্য যুক্তরাজ্য হতে পারে উচ্চশিক্ষার আদর্শ ও স্বপ্নময় গন্তব্য।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন