চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলের আসন বরাদ্দ পাবেন যে নিয়মে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের বরাদ্দের নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। নতুন এই নিয়মে খেলোয়াড়, সংগীতশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের জন্য প্রতিটি হলে সংরক্ষিত আসন থাকছে। চারুকলার ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সব হলেই থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। এমফিল ও পিএইচডির গবেষকেরা হলে থাকতে পারবেন।

গতকাল শুক্রবার রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত ১৭ জুলাই হলের আসন বরাদ্দের নীতিমালা তৈরি করতে কমিটি করেছিল সিন্ডিকেট। পরে এই কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হলের নীতিমালার বিষয়টি গতকাল চূড়ান্ত হয়।
সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নীতিমালাতে শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীর বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। পরে শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার যেসব শিক্ষার্থী আবেদন করবেন, তাঁদের ফি দিতে হবে না৷ যেসব শিক্ষার্থীর বাসা দূরে, তাঁদের বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

যা আছে নীতিমালায়

আগের নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের হল থেকে এসে আবেদনপত্র নিতে হতো। কিন্তু এবার এটির পরিবর্তন আনা হয়েছে। হলের আসনের জন্য শিক্ষার্থীরা আবেদন করবেন অনলাইনে। আবেদন ফি দিতে হবে ১০০ টাকা। এ ছাড়া হলে ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীদের গুনতে হবে ৮০০ টাকা। এর মধ্যে ৪০০ টাকা হল ছাড়ার সময় ফেরত দেওয়া হবে আর বাকি টাকা অফেরতযোগ্য। মেধার ভিত্তিতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০, দ্বিতীয় বর্ষের জন্য ২০, তৃতীয় বর্ষের জন্য ২০, চতুর্থ বর্ষের জন্য ২০ ও স্নাতকোত্তরের জন্য ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা সমানভাবে হলে থাকার সুযোগ পাবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৬০ শতাংশ বরাদ্দ থাকবে। এ ছাড়া অন্য হলগুলোতেও এক শতাংশ আসন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। এ ছাড়া সব হলে খেলোয়াড়দের জন্য চারটি আসন আর সংগীতশিল্পীদের জন্য তিনটি ও মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের জন্য পাঁচটি আসন বরাদ্দ থাকবে। এমফিল ও পিএইচডির গবেষকরাও সুপারভাইজার অথবা বিভাগের সভাপতির সুপারিশের ভিত্তিতে হলে থাকার সুযোগ পাবেন। জরুরি সংকট মোকাবিলায় প্রতিটি হলের ১০টি সিট সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতি ও ডিনের সুপারিশের প্রাধ্যক্ষর নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ দেওয়া যাবে।

কোন অনুষদের জন্য কোন হল

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে হল রয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে চালু আছে ১২টি। চালু থাকা হলের মধ্যে ছাত্রদের সাতটি, বাকি পাঁচটি ছাত্রীদের। ছাত্রীদের হলে বরাদ্দপ্রক্রিয়া চলমান। নিয়ম মেনে ছাত্রদের হলগুলোতে সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষ আসন বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেবার প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর আবেদন করেন ১ হাজার ৬০ শিক্ষার্থী। আবেদন করলেও শিক্ষার্থীরা বৈধভাবে হলে উঠতে পারেননি। তবে আবার নতুন করে হল বরাদ্দের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হলগুলো নির্দিষ্ট কোনো অনুষদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় না। সব অনুষদের ছাত্রীরাই মিশ্রভাবে হলে অবস্থান করেন। তবে ছাত্রদের হলের নিয়ম আলাদা। এই হলগুলো বরাদ্দ হয় অনুষদভিত্তিক। তবে আগামী ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নিয়ম থাকছে না। ছাত্রীদের হলের মতো ছাত্র হলগুলোতে সব অনুষদের শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবেন।

বর্তমানে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল এবং এ এফ রহমান হল। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের জন্য থাকছে সোহরাওয়ার্দী হল। বিজ্ঞান, আইন ও মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের জন্য শাহ আমানত, জীববিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জন্য শহীদ আবদুর রব আর শাহজালাল হল বরাদ্দ থাকছে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য। এর বাইরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অতীশ দীপঙ্কর হল সব অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে। অন্যদিকে বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত থাকছে মাস্টারদা সূর্যসেন হল। তবে ওই অনুষদের ছাত্রীরা সব হলে থাকার সুযোগ পাবেন।