ব্র্রিটেনে শীতের মৌসুমে যখন অন্য পেশার মানুষ উৎসবের আনন্দে ব্যস্ত, তখন বিপরীত চিত্র দেখা যায় শিক্ষকসমাজে। অতিরিক্ত কাজের চাপে ক্লান্ত, অসুস্থ, প্রায় ‘জম্বি’র মতো দিন পার করা—এই বাস্তবতাই শিক্ষকদের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। জনপ্রিয় ধারণার বাইরে, স্কুল ছুটির সময়েও শিক্ষকদের বিশ্রাম খুব কমই মেলে।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের কর্মপরিবেশ যে ক্রমেই সংকটপূর্ণ হয়ে উঠছে, তা নতুন করে উঠে এসেছে ফোর ডে ইউক ফাউন্ডেশনের (4 Day Week Foundation) সাম্প্রতিক আহ্বানে। সংস্থাটি বলছে, শিক্ষকদের জন্য চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করা এখন ‘বিলাসিতা নয়, বরং টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তা’।
ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসের (টিইউসি) তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে দুজনের মধ্যে একজন শিক্ষক সপ্তাহে গড়ে ২৬ ঘণ্টা বিনা পারিশ্রমিকে অতিরিক্ত কাজ করেন। দেশের যেকোনো পেশার মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। হিসাব করলে দেখা যায়, বছরে শিক্ষকের বেতন প্রায় ১৫ হাজার পাউন্ড কমে যায়—যা এনএএসইউডব্লিউটি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্যাট্রিক রোচ ‘ডে-লাইট রবারি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কেন চার দিনের কর্মসপ্তাহ জরুরি?
বর্তমান শিক্ষাকাঠামো এখনো ‘পুরোনো যুগের’ মডেলে আটকে আছে। শিক্ষকেরা এখন শুধু পাঠদান করেন না— আচরণ ব্যবস্থাপনা, মানসিক সহায়তা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক কাজও করেন। এই অতিরিক্ত চাপের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে শিক্ষকসংকট ও বদলি শিক্ষকের ওপর ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতিতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইংল্যান্ডের স্কুলগুলো বদলি শিক্ষক নিয়োগে ব্যয় করেছে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন পাউন্ড। পাশাপাশি, ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৫৯ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, তিন বছর পরও তাঁরা এ পেশায় থাকবেন—যা মহামারির আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। গত বছর ইংল্যান্ডে ৪১ হাজার ২০০ শিক্ষক পেশা ছেড়েছেন—অভিজ্ঞতা দ্রুত হারানোর এই ধারা স্কুলগুলোকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
পঞ্চম দিনের সমাধান কীভাবে?
প্রস্তাবিত মডেলে স্কুল পাঁচ দিনই খোলা থাকবে, তবে প্রত্যেক শিক্ষক সপ্তাহে এক দিন পাচ্ছেন পরিকল্পনা, মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সহায়তার জন্য ‘সংরক্ষিত সময়’। এতে অভিভাবকদের শিশুসেবা জটিলতা বাড়বে না; বরং শিক্ষকেরা সন্ধ্যা-রাতের দীর্ঘ অতিরিক্ত কাজ থেকে মুক্তি পাবেন।
যেসব সমস্যা থেকেই যাবে
চার দিনের কর্মসপ্তাহ সংকুচিত বাজেট, অবকাঠামোর সংকট এবং পরীক্ষানির্ভর কঠিন পাঠ্যক্রম—এসব চ্যালেঞ্জ দূর করবে না। কিন্তু ক্লান্ত শিক্ষকদের কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে এটি একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। শিক্ষা খাতে সংকট যখন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সমাজে গভীর প্রভাব ফেলছে—তখন চার দিনের কর্মসপ্তাহ নিয়ে আলোচনাকে আর ‘অভিযোগ’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এটি হয়তো সেই সাহসী পরিবর্তন, যা শিক্ষাব্যবস্থার সংকটে বাস্তব আরাম এনে দিতে পারে।