প্রশিক্ষণের সময় মনে হচ্ছিল, শিশুশিক্ষার্থীর মা-বাবারও প্রশিক্ষণ দরকার

প্রাক্‌-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে পিরোজপুরে নাজিরপুর উপজেলায় হয়েছে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণছবি: সংগৃহীত

সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলায় প্রাক্‌-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। এর ধারাবাহিকতায় পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ১৫ দিনের প্রাক্‌-প্রাথমিক প্রশিক্ষণে অংশ নিই। প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন নাজিরপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউইও) বিশ্বজিৎ কর্মকার এবং উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর মো. ইব্রাহিম খান। আমরা ২৫ জন নবনিযুক্ত শিক্ষক এ প্রশিক্ষণে অংশ নিই।  

প্রশিক্ষণটি করার সময় আমার বারবার মনে হচ্ছিল, প্রশিক্ষণটি শুধু শিক্ষকদের নয়, প্রত্যেক মা-বাবার নেওয়া দরকার। একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনে পরিবার ও শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। এ প্রশিক্ষণ থেকে আমরা জানতে পারি, একটি শিশুর ভবিষ্যৎ কেমন হবে, সে কতটা বুদ্ধিমান হবে, সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে তার প্রথম ৮ বছরে তার কতটা বিকাশ সাধন হয়েছে, তার ওপর। সুতরাং এ সময়য়ে শিশু যদি পরিবার ও বিদ্যালয়ে যথাযথ পরিবেশ পায়, তাহলে সে বড় হয়ে দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারবে। শিশুর বেড়ে ওঠার পেছনে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের নিয়ে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার বছরের বেশি বয়সী শিশুদেরও প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে আনন্দময় ও শিশুবান্ধব পরিবেশে চার ও পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও আবেগিক, ভাষা ও যোগাযোগ, তথা সার্বিক বিকাশে সহায়তা দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গনে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অভিষেকের মাধ্যমে জীবনব্যাপী শিখনের ভিত রচনা করা। এ শিক্ষার উদ্দেশ্য দুটি—এক. শিশুদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, আবেগিক এবং ভাষা ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিকাশে সহায়তা করা। দুই. বিদ্যালয়ে সহজ প্রবেশ নিশ্চিত করা।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ পরিদর্শন শিক্ষকদের শিক্ষাসফরে লেখক
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

প্রাক্‌-প্রাথমিকের জন্য প্রণীত শিক্ষক সহায়িকা বইটিতে খুব সুন্দরভাবে শিক্ষা কার্যক্রমের বর্ণনা দেওয়া আছে। সেটা অনুসরণ করে শিক্ষক যদি ক্লাস নেন, তাহলে বিদ্যালয়ে আসা প্রতিটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশসাধন সম্ভব। প্রতিদিনের শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে দৈনিক সমাবেশ ও ব্যায়াম থেকে শুরু করে গান, ছড়া, গল্প বলা, চারু ও কারুকলা, গণিত ও যুক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ ও জলবায়ু, নানা রকম খেলা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা বিষয়ে জ্ঞান প্রদান সবই রয়েছে।

প্রাক্‌-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অন্যরা
ছবি: লেখক

১৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণটি সফল ও আনন্দমুখর ছিল। প্রশিক্ষকেরা দক্ষতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ চালিয়ে গেছেন। প্রশিক্ষণার্থীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কখনো শিক্ষকের ভূমিকায় আবার কখনো শিক্ষার্থীর ভূমিকায় ক্লাস সম্পন্ন করেন। পঞ্চম দিনে পিরোজপুর জেলার ডিপিইও কুমারেশ চন্দ্র গাছি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন। তিনি প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব এবং শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ১৩তম দিনে আমরা সবাই বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ ও  হজরত খানজাহান (র.)–এর মাজারে শিক্ষাসফরে যাই। ১৫তম দিনে সার্টিফিকেট প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সমাপ্ত হয়।

*লেখক: অনামিকা মণ্ডল, সহকারী শিক্ষক, ১৩১ নম্বর পাজরাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

আরও পড়ুন