স্পোর্টস ফিজিওথেরাপিতে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিজিওথেরাপিস্ট আফজাল
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রতিদিন শারীরিক বিভিন্ন জটিল ব্যথার নতুন ধরনের রোগী পেতেন মো. আফজাল হোসেন। শারীরিক ব্যথা নিয়ে আসা সেসব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে আফজালের মনে হতো বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে পারলে রোগীদের আরও ভালো সেবা দিতে পারতেন। এরপর ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য খোঁজ নিতে থাকেন। নানা বাধা পেরিয়ে অবশেষে সফল হন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি বিষয়ে স্কলারশিপ নিয়ে স্নাতকোত্তর করছেন।
গত আগস্টে মিনেসোটা স্টেট ইউনিভার্সিটির হিউম্যান পারফরম্যান্স অনুষদের অধীনে সায়েন্স ইন এক্সারসাইজ ফিজিওলজি বিভাগে স্পোর্টস ফিজিওথেরাপিতে ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ পেয়ে ভর্তি হয়েছেন। তবে আফজালের এ সফলতার পথ সহজ ছিল না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য রিকমেন্ডেশন লেটার ও গ্রেডিং পদ্ধতির সনদ পেতে তাঁকে বেগ পেতে হয়েছে।
রাজশাহীর দারুশা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি পেরিয়ে মো. আফজাল হোসেন ভর্তি হন রাজশাহীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে। সেখানে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিওথেরাপি বিষয় পড়তে।
মো. আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপিতে বর্তমানে পিএইচডি বা উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। আমার স্বপ্ন ফিজিওথেরাপি বিষয়ে পিএইচডি করা। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খোঁজ নেওয়া শুরু করলাম। ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায় এ বিষয়ের প্রচুর চাহিদা দেখতে পাই। এরপর আমার আগ্রহ আর বেড়ে যায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য গবেষণাও করতে হয়েছে আফজাল হোসেনকে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ ভর্তির জন্য আইইএলটিএস স্কোরের পাশাপাশি গবেষণাপত্র থাকাটা জরুরি। আমার যেহেতু লক্ষ্য ছিল স্কলারশিপসহ ভর্তি হওয়া, তাই আমি গবেষণাপত্র তৈরি করে জার্নালে প্রকাশ করি। এই গবেষণা আমাকে বৃত্তি পেতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে।’
আফজাল হোসেন যে ইনস্টিটিউট থেকে ফিজিওথেরাপিতে বিএসসি পাস করেন, সেখানে সনদ ও মার্কশিটে পাস ও ফেল লেখা থাকে। গ্রেডিং পদ্ধতি নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এ বিষয়টি নিয়ে তাঁকে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রেডিং পদ্ধতি ছাড়া সনদ গ্রহণ করে না। ফলে তাকে বাড়তি টাকা খরচ করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিন্সিয়াল ইভ্যালুয়েশন সার্ভিসেস (ডব্লিউইএস) থেকে পাস কোর্সের সনদ গ্রেডিংয়ে কনভার্ট করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বৃত্তি পেতে আফজালের জন্য আরও বড় বাধা ছিল রিকমেন্ডেশন লেটার। মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে আমার শিক্ষকদের কোনো অফিশিয়াল মেইল ছিল না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকদের অফিশিয়াল মেইল ছাড়া অন্য কোনো মেইলের মাধ্যমে পাঠানো রিকমেন্ডেশন লেটার গ্রহণ করে না। ফলে আমার যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেসরকে বিষয়টা কয়েকবার বোঝানোর পর তিনি আমার আবেদন গ্রহণ করেন।’
ফিজিওথেরাপি বিষয়ে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান, তাঁদের উদ্দেশে মো. আফজাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার পথটি দীর্ঘ, সময়সাপেক্ষ বিষয়। হাতে সময় নিয়ে লেগে থাকতে হবে। আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো স্কোরের পাশাপাশি গবেষণাপত্র তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে সুবিধা হয়।