নিউ দিল্লির ভাসান্ত ভ্যালি স্কুলের শিক্ষার্থী অনন্ত বাগরোডিয়া
ছবি: সংগৃহীত

নিউ দিল্লির ভাসান্ত ভ্যালি স্কুলের শিক্ষার্থী অনন্ত বাগরোডিয়া। ১৬ বছর বয়সী অনন্তের মেশিন লার্নিং এবং ডেটা সায়েন্সে প্রবল আগ্রহ। সে মনে করে সমাজের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তি শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু তার দক্ষতা ও সহানুভূতি যে সুবিধাবঞ্ছিত শিশুদের আশার আলো দেখাবে এবং তার এক ছোট্ট একটি উদ্যোগ যে উল্লেখযোগ্য বদল নিয়ে আসবে, সে সম্পর্কে তার ধারণা ছিল না।

ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর সময় অসংখ্য সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। মাত্র ৮ দশমিক ১ শতাংশ সরকারি স্কুলের শিক্ষর্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছে সে সময়। ফলে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্য ব্যবধান তৈরি হয়। যারা অংশগ্রহণ করতে পারেনি, তারা অনেক পিছিয়ে পড়েছিল। তাদের প্রয়োজন ছিল অতিরিক্ত সহায়তার।

এ সময় অনন্তের মা এমসিডি স্কুলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষা দিতে শুরু করেন।

মায়ের সঙ্গে ক্লাসে যেত অনন্ত। এ সময় প্রিন্স নামের একটি ছেলে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গণিত এবং ইংরেজির মৌলিক বিষয়গুলোতেও প্রিন্সের দুর্বলতা ছিল। অনন্ত বুঝতে পারে টিউশন ক্লাস গ্রহণে ব্যর্থ হাজারো শিক্ষার্থীরাও এ একই সমস্যার সমুখীন হচ্ছে এবং তাদের সাহায্যের প্রয়োজন। এ উপলব্ধি তাকে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে অনুপ্রাণিত করে।

সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনন্ত
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

৩৪ বিষয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়ে নতুন রেকর্ড পাকিস্তানি কিশোরী মাহনুরের

অনন্ত বাগরোডিয়া জানায়, ‘নানা সুযোগ–সুবিধা পেয়ে বড় হয়ে আমি বুঝতে পারি সবাই তার মতো ভাগ্যবান নয়। এসব সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। তাই আমি সেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিই।’

সমস্যা সমাধানে অনন্ত একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। নাম ‘ভলানটিয়ার ফর এমসিডি স্কুলস।’ এ অ্যাপের মাধ্যমে সেচ্ছাসেবক ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে এবং তাদের মধ্যকার ব্যবধান দূর করে। অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে। অ্যাপটি দ্রুত সাড়া ফেলে। ১২০ জন সেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীযুক্ত হয় এবং ১৯টি স্কুলে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়া হয় এ অ্যাপে।

অনন্ত আরও জানায়, ‘খুব দ্রুতই সেচ্ছাসেবক, শিক্ষার্থী ও স্কুল থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাই। অ্যাপ সম্পর্কে সচেতন করতে এবং সেচ্ছাসেবক হতে উৎসাহিত করতে আমি নিয়মিত বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যাই।’

অনন্তের বানানো অ্যাপে শিক্ষার্থী পড়াতে চায় ভিয়েতনাম
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

সুইডেন শ্রেণিকক্ষে কেন কম্পিউটার স্ক্রিন নিষিদ্ধ করছে

একজন সেচ্ছাসেবক জানান, ‘এই প্রোগ্রামে আমার দারুণ অভিজ্ঞতা  হয়েছে। এমসিডি স্কুলে দাবা খেলা শেখানো আমার সপ্তাহের বিশেষ আকর্ষণ, যার জন্য আমি অপেক্ষা করি। দাবা শেখার প্রতি শিক্ষর্থীদের কৌতূহল ও আগ্রহ আমাকে অভিভূত করে।’

এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি গান, নাচ, খেলাধুলাও তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। প্ল্যাটফর্মটি বর্তমানে প্রাইভেট স্কুলের সঙ্গেও কাজ করছে। সেচ্ছাসেবক শিক্ষর্থীদের উৎসাহিত করতে প্রতি পাঁচ ঘণ্টা সেচ্ছাসেবক কাজের জন্য সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়। সম্প্রতি অনন্ত একটি তহবিল সংগ্রহ করে তিনটি এমসিডি স্কুলে ৩০টি ট্যাবলেট দিয়েছে, যাতে কোনো শিশু ডিজিটাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়।

সম্প্রতি ডিয়েতনাম থেকে অনন্তর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে একজন। ভিয়েতনামে এমন একটি অ্যাপ তৈরি করতে সহায়তা চায় তারা। অনন্ত জানিয়েছে, সে তাদের সঙ্গে কাজ করবে। এতে করে আরও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা এই অ্যাপের সুবিধা যেন পায়। তার এ অ্যাপের মাধ্যমে তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবন আলোকিত করেছে।

আরও পড়ুন

অষ্টম শ্রেণিতে ঝরে পড়া রুমা দেবী হার্ভার্ডের অতিথি বক্তা