দক্ষ শিক্ষক নিয়োগে পিটিআইয়ে চালু হচ্ছে ১০ মাসের ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম
প্রাথমিকে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে দেশের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে (পিটিআই) চালু হচ্ছে ১০ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম। ‘ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) ’ নামে প্রোগ্রামটি আগামী জানুয়ারি থেকে দেশের ১২টি পিটিআইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পিটিআইয়ের তা চালু করা হবে। মোট ১২ হাজার টাকা দিয়ে স্নাতক ও সমমানের ডিগ্রিধারীরা এই প্রোগ্রামটি করতে পারবেন।
এই ডিগ্রিধারীরা এই মুহূর্তেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে অগ্রাধিকার পাবেন না। তবে ভবিষ্যতে যখন এই কোর্সের পরিধি বাড়বে এবং পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল থেকে শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রসঙ্গত মাধ্যমিকে বিএড কোর্স থাকলে বাড়তি আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ। নেপের পরিচালনায় চলবে প্রোগ্রামটি।
লিখিত বক্তব্যে নেপের মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে আগামী জানুয়ারিতে যে ১২টি পিটিআইয়ে ডিপ্লোমা প্রোগ্রামটি চালু হচ্ছে সেগুলো হলো; ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, যশোর, কুমিল্লা, জয়দেবপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া। এটির মেয়াদ হবে ১০ মাস এবং তা অনাবাসিক ও বৈকালিক।
প্রোগ্রামের ফি ও আসন কত—
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় দেশের যেকোনো স্থায়ী নাগরিক এই প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের জিপিএ বা সিজিপিএসহ (৪ স্কেলে ন্যূনতম ২ দশমিক ২৫ এবং ৫ স্কেলে ন্যূনতম ২ দশমিক ৮) স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রিধারীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষা জীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণি বা সমমানের জিপিএ বা সিজিপিএ গ্রহণযোগ্য হবে না।
আবেদনকারীকে নেপের ডিপিএড বোর্ড আয়োজিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। মোট আসন ১ হাজার ৩২০টি। নির্ধারিত আসনে ভর্তির জন্য ৫০ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান; সময় ৫০ মিনিট) ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা ভর্তির শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পিটিআইভিত্তিক মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভর্তি হবেন।
আমি আশা করি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এসব কোর্স ধীরে ধীরে চালু করবে। পরে যখন দক্ষ জনবল পেয়ে যাব, তখন আমরা শুধু তাদের মধ্যে থেকে নিয়োগ করতে পারব। এখন সেই সুযোগটা নেই।বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন,প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
দুটি সেমিস্টারে ১০ মাসের এই প্রোগ্রামের ফি সেমিস্টার প্রতি ছয় হাজার টাকা। প্রোগ্রামটিতে মোট ১২০০ নম্বরের মূল্যায়ন হবে। ৭৫ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে চূড়ান্ত মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে না। প্রোগ্রামে তাত্ত্বিক বিষয় হিসেবে শিক্ষা পরিচিতি ও শিক্ষাদর্শন, শিশুর বিকাশ ও শিখন, শিক্ষণ পদ্ধতি-কৌশল ও শ্রেণি ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাক্রম ও শিখন সামগ্রী, শিখন মূল্যায়ন ও ফলাবর্তন, ভাষা দক্ষতা উন্নয়ন-বাংলা ও ইংরেজি, গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক দক্ষতা উন্নয়ন, শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গঠন, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও শিল্পকলা কোর্সগুলো এবং হাতে কলমে অনুশীলনের জন্য চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে ইন্টার্নশিপ করতে হবে।
নেপের মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, শিক্ষাদর্শন, শিক্ষণ কৌশল ও মূল্যায়ন কাঠামো শেখার মাধ্যমে এই ডিগ্রিধারী আধুনিক শিক্ষক হিসেবে দক্ষ হয়ে উঠবেন। যা ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন এই কোর্সটি করলে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে কি না কিংবা ভবিষ্যতে তা বাধ্যতামূলক করা হবে কি না। জবাবে নেপের মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, এবার ১২টি পিটিআইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কোর্সটি চালু হচ্ছে। অর্থাৎ সংখ্যাটি খুব বেশি হচ্ছে না। সেই সুবাদে কৌশলগত কারণে এই কোর্স করলেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অগ্রাধিকার পাবেন বা বাড়তি সুবিধা পাবেন এমন কোনো শর্ত এই পর্যায়ে নেই।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘আমি আশা করি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এসব কোর্স ধীরে ধীরে চালু করবে। পরে যখন দক্ষ জনবল পেয়ে যাব, তখন আমরা শুধু মধ্যে থেকে নিয়োগ করতে পারব। এখন সেই সুযোগটা নেই। তবে ভবিষ্যতে আশা করব, আমাদের দেশেও শিক্ষকদের জন্য লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু হোক।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা।
সংগীত শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা
প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া এবং বাদের বিধান নিয়ে আদালতের রুলের প্রেক্ষাপটে সরকারের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এটি বৃহৎ পরিসরে চালু করতে চান। এর মানে হলো সরকার এটিকে নীতিগতভাবে সমর্থন করছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে এত বড় পরিসরে হয়তো যাওয়া সম্ভব হবে না। পরবর্তী সরকার এই বিষয়টির তাগিদ বোধ করবেন বলে মনে করেন তিনি।
সম্প্রতি আন্দোলন করতে এসে আহত হওয়া এক শিক্ষকের হাসপাতালে মারা যাওয়ার বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ওই শিক্ষক যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সেই হাসপাতাল থেকে মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ক্রনিক রোগে ভুগছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস...। ফলে সাউন্ড গ্রেনেডের প্রসঙ্গটি হচ্ছে একটা কোইন্সিডেন্ট মাত্র (কাকতালীয়)। বাস্তবে তিনি অসুস্থ ছিলেন, আগে থেকেই ক্রনিক অসুস্থ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ অসুস্থতা।
মৃত শিক্ষককে পরিবারের (প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার) একজন সদস্য উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য তাঁরা দুঃখিত এবং শোক জানিয়েছেন। ওই শিক্ষকের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।