চীনের এক পিএইচডি গ্রামের গল্প

এ বছর মোট ২ লাখ ১৭ হাজার ইউয়ান (৩০ হাজার মার্কিন ডলার) শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে
ছবি: এআই

পেংদাও, চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফুজিয়ান প্রদেশের এক দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম। ভৌগোলিকভাবে দুর্গম হলেও শিক্ষার দিক থেকে অনেক শহুরে এলাকার থেকেও অগ্রগামী। ৩৩ জন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী গ্রামটি এখন ‘পিএইচডি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। এটি কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ধারণ করা এক গভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, শিক্ষাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়ার সামাজিক চর্চা।

দেশটির গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

গ্রামটির ঐতিহ্য এবং সাফল্যের পেছনে আছে শিক্ষানুরাগী ‘গুও’ পরিবার। এই পরিবারের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা তহবিল গ্রামটিকে শিক্ষামুখী করতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে। গ্রামের প্রধান গুও বংশের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই তহবিল প্রতিবছর আয়োজন করে বর্ণাঢ্য বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান। স্থানীয় পূর্বপুরুষদের মন্দিরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শুধু অর্থসহায়তা দেওয়া হয় না, বরং শিক্ষার সাফল্যকে পারিবারিক ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। সাম্প্রতিক আয়োজনে শিক্ষার্থীদের পরিহিত লালফিতায় লেখা ছিল ‘আমাদের বংশের গৌরব’। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের বংশের গৌরব হিসেবে সম্মানিত করা হচ্ছে।

ছোট্ট গ্রামটি থেকে ৩৩ জন সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হংকং বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেলসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

এ বছর মোট ২ লাখ ১৭ হাজার ইউয়ান (৩০ হাজার মার্কিন ডলার) শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে। বৃত্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছেন, ১৫ জন যাঁরা মাস্টার্স শুরু করবেন এবং কয়েক ডজন শিক্ষার্থী যাঁরা স্নাতক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। তবে এই পুরস্কার শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং তরুণদের মনে করিয়ে দেওয়া যে তাঁদের অর্জন সমগ্র সম্প্রদায়ের সম্মানের প্রতীক।

ইতিহাসে দেখা যায়, এ গ্রামে আবাদযোগ্য জমি কম থাকায় দারিদ্র্যের সঙ্গে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছে মানুষ। কিন্তু হতাশ না হয়ে তারা শিক্ষাকেই বেছে নিয়েছে উন্নতির পথ হিসেবে। তাই অভিভাবকেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সন্তানদের শেখার গুরুত্ব বোঝাতে সচেষ্ট থেকেছেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন যে শিক্ষা এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ নয়, বরং সাংস্কৃতিক দায়িত্ব।

এখন পর্যন্ত, এই ছোট্ট গ্রামটি থেকে ৩৩ জন সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হংকং বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

পরম্পরার এই সাফল্য আজ দৃশ্যমান। গ্রামের প্রধান ভবনে টানানো লাল রঙের স্ক্রলে স্থান পেয়েছে ডক্টরেট ডিগ্রিধারীদের নাম, যা ব্যক্তিগত কৃতিত্বকে রূপ দিয়েছে সামষ্টিক গৌরবে। গ্রামবাসীর মতে, এ রকম পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের কাছে সাফল্য স্বাভাবিক লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। গুও পরিবারের শিক্ষা তহবিলের পরিচালক গুও দোংইউর মতে, এই পুরস্কার শিক্ষার্থীদের শুধু অধ্যয়নের অনুপ্রেরণা নয়, বরং দেশপ্রেম, সমাজসেবা এবং শিক্ষাভিত্তিক ঐতিহ্য রক্ষার চেতনা জাগ্রত করে।

চীনের গ্রামীণ সমাজে শিক্ষার কৃতিত্বকে মহাসমারোহে উদ্‌যাপনের প্রথা নতুন নয়। তবে পেংদাও গ্রাম এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় এক অনন্য প্রতীকে পরিণত হয়েছে, যেখানে দারিদ্র্যকে জয় করে শিক্ষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মর্যাদা ও সাফল্যের গল্প। সংস্কৃতি যে মানুষের ভাগ্য গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ, তা প্রমাণ করেছে চীনের এই পাহাড়ি গ্রাম।

গ্রামের প্রধান ভবনে টানানো লাল রঙের স্ক্রলে স্থান পেয়েছে ডক্টরেট ডিগ্রিধারীদের নাম, যা ব্যক্তিগত কৃতিত্বকে রূপ দিয়েছে সামষ্টিক গৌরবে।
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত গ্রামটিতে প্রায় ছয় হাজার মানুষের বাস। এখন পর্যন্ত, এই ছোট্ট গ্রামটি থেকে ৩৩ জন সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হংকং বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। গ্রামের একটি বড় ভবনে এই পিএইচডি স্নাতকদের নাম এবং তাদের নিজ নিজ স্কুলের নাম সম্বলিত লাল স্ক্রলগুলো স্পষ্টভাবে ঝোলানো আছে।

শিক্ষা তহবিলের পরিচালক গুও দংইউ বলেন, ‘এ গ্রামের শিক্ষাকে মূল্য দেওয়ার একটি দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের এ পুরস্কার অন্য শিক্ষার্থীদের আমাদের দেশ এবং শহরকে মনে লালন করতে, দাতব্য কাজে যুক্ত হতে এবং পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন