সাক্ষরতায় পিছিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ, জেলার মধ্যে এগিয়ে পিরোজপুর

সাক্ষরতার সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ময়মনসিংহ বিভাগ
ফাইল ছবি

দেশে এ মুহূর্তে সাক্ষরতার গড় হার প্রায় ৭৫। বিভাগভেদে এ হার কমবেশি আছে। সবচেয়ে পিছিয়ে আছে চারটি জেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগ। এ বিভাগে সাক্ষরতার হার প্রায় ৬৭, যা দেশের গড় হারের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ কম।

সাক্ষরতার হারের এ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা, ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে। জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাক্ষরতার হারে সবচেয়ে এগিয়ে ঢাকা বিভাগ, হার প্রায় ৭৯। এর পরে রয়েছে বরিশাল, ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সাক্ষরতার হার চট্টগ্রামে ৭৬ দশমিক ৫৩, খুলনায় প্রায় ৭৫, সিলেট ৭১ দশমিক ৯২, রাজশাহী ৭১ দশমিক ৯১, রংপুর ৭০ দশমিক ৭৫ ও ময়মনসিংহে ৬৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন

২০১১ সালে করা জনশুমারির বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ সাক্ষরতার হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭৬। আর সর্বনিম্ন ছিল সিলেটে, ৪৫ শতাংশ। তবে এবার শীর্ষে উঠে এসেছে ঢাকা বিভাগ। আগেরবার ঢাকা ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে তখন ময়মনসিংহ বিভাগ ঢাকা বিভাগের মধ্যে ছিল। এবার ময়মনসিংহ বিভাগের হিসাব আলাদাভাবে এসেছে। আগেরবারের তৃতীয় স্থানে থাকা খুলনা এবার চতুর্থ স্থান পেয়েছে।

আর চতুর্থ অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম এবার তৃতীয়স্থানে উঠে এসেছে। জনশুমারিতে সাক্ষরতার হার কেন বিভাগভেদে কমবেশি, এর তথ্য নেওয়া হয় না। ময়মনসিংহ বিভাগের মানুষ কেন পিছিয়ে, তা জানতে যোগাযোগ করা হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। তাঁরা জানান, এ বিষয়ে তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা নেই।

আরও পড়ুন

অবশ্য শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেশ কিছু বেসরকারি সংগঠনের মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃতিগতভাবে ময়মনসিংহ বিভাগ মূলত হাওর ও পাহাড়বেষ্টিত। দুর্গম এলাকাগুলোয় এমনিতেই সাক্ষরতার হার কম থাকে এবং অধিবাসীদের মধ্যে সচেতনতা তুলনামূলকভাবে কম। তিনি আরও বলেন, দরিদ্র পরিবারের অনেক অভিভাবক সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কাজে পাঠাতে বাধ্য হন।

ফাইল ছবি

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পিছিয়ে থাকা এলাকা ধরে কর্মসূচি হাতে নিতে হবে, যাতে সব শিশুকে স্কুলে ভর্তি করানো যায় এবং ঝরে পড়ার হার রোধ হয়। বয়স্কদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেওয়া ও তার সঠিক বাস্তবায়ন করা দরকার।

ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা ও শেরপুর জেলা নিয়ে। সাক্ষরতার হারের দিক দিয়ে জেলাগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ময়মনসিংহ (৭০ দশমিক ৭৪)। আর সবচেয়ে কম সাক্ষরতার হার জামালপুরে (৬১ দশমিক ৫৩)। নেত্রকোনায় সাক্ষরতার হার ৬৬ দশমিক ১৩ ও শেরপুরে ৬৩ দশমিক ৫৭।
সাক্ষরতা কী

একসময় কোনো ব্যক্তি নিজের নাম লিখতে পারলেই তাঁকে সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন বলা হতো। এখন যে ব্যক্তি নিজের ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবেন, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবেন এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবেন, তাঁকেই সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হিসেবে দেখা হয়।

সাক্ষরতার হারে এগিয়ে আছে পিরোজপুর
ফাইল ছবি

কোন জেলা এগিয়ে

জেলাগুলোর বিবেচনায় সাক্ষরতার হারে এগিয়ে আছে পিরোজপুর। এই জেলায় সাক্ষরতার হার ৮৫-এর বেশি। আর সবচেয়ে তলানিতে আছে জামালপুর (৬১ দশমিক ৫৩)।

এগিয়ে থাকা বিভাগ ঢাকার ১৩টি জেলার মধ্যে সাক্ষরতার হার বেশি ঢাকা জেলায়, প্রায় ৮৫। ঢাকা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে কিশোরগঞ্জ জেলা (৬৭ শতাংশের বেশি)।

নারী বরিশালে এগিয়ে, পুরুষ ঢাকায়

জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনে নারী ও পুরুষের সাক্ষরতার হারের তথ্যও উঠে এসেছে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বরিশাল বিভাগের নারীরা সাক্ষরতার হারে এগিয়ে আছেন। এই বিভাগে নারীদের সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৭। আর ছেলেদের সাক্ষরতার হার বেশি ঢাকায়, প্রায় ৮০ শতাংশ।

জেলাগুলোর মধ্যে নারীদের সাক্ষরতার হারেও এগিয়ে রয়েছে পিরোজপুর (প্রায় ৮৫ শতাংশ)। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ঢাকা (৮৬ শতাংশের বেশি)।

আরও পড়ুন
বরিশাল বিভাগের নারীরা সাক্ষরতার হারে এগিয়ে আছেন
ফাইল ছবি

পিছিয়ে হিজড়ারা

জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য বলছে, সারা দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য আছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন। এই প্রথম এ জনগোষ্ঠীকে জনশুমারির আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে (৭ বছর ও তার বেশি বয়স) সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫।
এর মধ্যে আবার বরিশাল বিভাগের হিজড়ারা সাক্ষরতায় এগিয়ে আছেন। এখানে হিজড়াদের সাক্ষরতার হার ৬৫-এর বেশি। আর পিছিয়ে থাকা ময়মনসিংহ বিভাগে এই হার ৪৪ দশমিক ৩৬। জেলার বিবেচনায় এ ক্ষেত্রে বরগুনার হিজড়ারা এগিয়ে আছেন। আর সবচেয়ে কম বান্দরবানে।

হিজড়াদের এই সাক্ষরতা হার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হিজড়া সম্প্রদায়ের এক নেতা জয়া শিকদার বলেন, যে হার দেখানো হয়েছে, তা অনেক বেশি বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, দেশে হিজড়াদের পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ নেই।

স্কুলগুলো হিজড়াবান্ধব নয়। আর যাঁরা গুরুমায়ের কাছে থাকেন, তাঁদের আসলে স্কুলে দেওয়া হয় না বা গুরুমায়েরা তাঁদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখান না। কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে, তা-ই শেখানো হয়।

হিজড়াদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে চার স্তরে (প্রাথমিকে জনপ্রতি মাসিক ৭০০, মাধ্যমিকে ৮০০, উচ্চমাধ্যমিকে ১০০০ ও উচ্চতর ১২০০ টাকা হারে) দেওয়া উপবৃত্তির সুযোগ তাঁরা নিতে পারছেন না বলেও উল্লেখ করেন জয়া। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র এখনো ‘হিজড়া’, ‘ট্রান্সজেন্ডার’—এসব শব্দের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত নয়। এ কারণে দেখা যাচ্ছে, এ সম্প্রদায়ের লোকেরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা আশা করছেন, তা সেভাবে হয়নি।