ফুরফুরে মেজাজে পরিবারসহ কক্সবাজারের উদ্দেশে সাতসকালে যাত্রা শুরু করেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মুক্তার আলম। কিন্তু কুমিল্লা পেরোতেই পেরেক ঢুকে গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে যায়। এত সকালে আশপাশে চাকা মেরামতের কারিগর না মেলায় বেশ ঝক্কিঝামেলাও পোহাতে হয় তাঁকে। এমন সমস্যায় যদি পড়তে না চান, তবে আপনার গাড়ি বা বাইকে ব্যবহার করতে পারেন ‘টায়ার সিলেন্ট’।
টায়ার সিলেন্ট নামের এই তরল রাসায়নিক পদার্থ কাজে লাগিয়ে চাকার ভেতরে একধরনের নতুন আস্তর তৈরি করা যায়। আট মিলিমিটার পর্যন্ত ধারালো বস্তু চাকায় ঢুকলেও, এই আস্তর ভেদ করতে পারে না। ফলে চাকার ভেতরের বাতাস বের হয় না। তবে পাংচারের পরিমাণ বেশি হলে অল্প বাতাস বের হলেও পথচলা বন্ধ হবে না। আমাদের দেশে এই রাসায়নিক পদার্থ টায়ার জেল নামেই বেশি পরিচিত।
ব্যবহার পদ্ধতি
টিউবছাড়া চাকায় টায়ার সিলেন্ট ব্যবহারের সুযোগ মিলে থাকে। এ জন্য রিম থেকে চাকা খোলারও দরকার নেই। প্রথমে নজেলের ক্যাপটি খুলে চাকা থেকে হাওয়া বের করে নিতে হবে। চাকার ভেতরে ঢালার জন্য টায়ার সিলেন্টের সঙ্গে থাকা পাইপটি নজেলের সঙ্গে যুক্ত করে টায়ার সিলেন্ট ঢালতে হবে। এরপর নজেলের চাবি আটকে চাকাটিকে ঘুরালেই চাকার ভেতরের সব জায়গায় টায়ার সিলেন্ট ছড়িয়ে পড়বে।
বাজারে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের টায়ার সিলেন্ট পাওয়া যায়। রাইনো টায়ার সিলেন্টের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ট্যাসলকের ব্র্যান্ড প্রধান হাসনাইন শাকিল বলেন, টায়ার সিলেন্ট শুধু হাওয়া বের হওয়া থেকেই চাকাকে রক্ষা করে না, বরং রিমে জং ধরাও প্রতিরোধ করে। এমনকি চাকা ফেটে যাওয়া থেকেও নিরাপত্তা দেয়। এই রাসায়নিক পদার্থ বিষাক্ত না হওয়ার কারণে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি করে না। রাইনো টায়ার সিলেন্ট ৫০টিরও বেশি পাংচার থেকে চাকাকে রক্ষা করে। এটি একবার ব্যবহার করলে তিন বছরের মধ্যে নতুন করে আর ভরতে হয় না। এজন্য আমরা রাইনো টায়ার সিলেন্টে দুই বছর বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে থাকি।
এক বোতল রাইনো সিলেন্টের মূল্য ৩০০ টাকা। প্রতি চাকায় এক বোতল করে সিলেন্ট ব্যবহার করতে হয়। মোটরসাইকেলের দুই চাকার জন্য এক বোতল টায়ার সিলেন্টই যথেষ্ট। রাইনো ছাড়াও ফ্লেমিংগো, মিশেল, কুইক ফিক্স, জাভা রেসিং, এবি ফাস্ট, বি প্লাসসহ বিভিন্ন নামে টায়ার সিলেন্ট পাওয়া যায়। দামও খুব বেশি নয়, ২৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টায়ার সিলেন্ট।
চাকায় টায়ার সিলেন্ট প্রবেশের আগে বোতলের গায়ে লেখা নির্দেশিকা পড়ে নেওয়া উচিত। কারণ, কোন ধরনের চাকায় কতটুকু পরিমাণ টায়ার সিলেন্ট দরকার, তা বোতলের গায়েই লেখা থাকে। টায়ার সিলেন্টের উপকারী দিক থাকলেও, অপকারী দিকও রয়েছে। টায়ার সিলেন্ট ব্যবহার করার পর চাকায় বাতাসের পরিমাণ ভালোভাবে জানা যায় না। এ ছাড়া ঠিক কত দিন পর্যন্ত টায়ার সিলেন্টটি কাজ করবে, সে বিষয়েও তথ্য জানার কোনো উপায় নেই। দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর চাইলে টায়ার সিলেন্ট পরিবর্তন করা যায়। এ জন্য পুরোনো চাকা খুলে সাবানপানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নতুন টায়ার সিলেন্ট ঢালতে হবে।