ফোনে হেডফোন জ্যাক চান কি না
পাঁচ বছর আগে আইফোন ৭ বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিল অ্যাপল। দিন–তারিখ ঠিক করে বললে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। হেডফোন জ্যাক ছাড়া সে-ই প্রথম আইফোন। আপনাদের হয়তো মনে আছে, ঘটনাটি সে সময় বেশ আলোচনার (বেশির ভাগই অবশ্য সমালোচনা) খোরাকে পরিণত হয়েছিল।
গত পাঁচ বছর হেডফোন জ্যাক ছাড়াই আইফোন বাজারে ছেড়েছে অ্যাপল। তাতে তাদের বাজারে ধস নেমেছে কিংবা সে ধসের পেছনে মূল কারণ হেডফোন জ্যাকের অনুপস্থিতি, তেমনটা কিন্তু শোনা যায়নি। বরং অ্যাপলের সেই উদ্যোগে যেসব প্রতিষ্ঠান মজা করেছিল, তারাও পরে হেডফোন জ্যাক ছাড়াই স্মার্টফোন বাজারে এনেছে।
হেডফোন জ্যাক বাদ দেওয়ার পেছনে যুক্তি
আইফোন থেকে হেডফোন জ্যাক বাদ দেওয়ার পর আমাদের টনক নড়েছে ঠিক। তবে অ্যাপল কিন্তু প্রথম নয়। পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ২০১২ সালে অপো প্রথম হেডফোন জ্যাক ছাড়া স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ে। অপো ফাইন্ডার স্মার্টফোনটিকে সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা (৬.৬৫ মিলিমিটার পুরু) স্মার্টফোন হিসেবে বাজারজাত করা হয়। হেডফোন জ্যাক ছাড়া ২০১৪ সালে অপো আর৫ স্মার্টফোন বাজারে ছাড়া হয়, সেটিকেও সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা (৪.৮৫ মিলিমিটার পুরু) স্মার্টফোন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
সেদিক থেকে দেখলে সাড়ে তিন মিলিমিটারের হেডফোন জ্যাক বাদ দেওয়ার পেছনে অপোর যুক্তি ছিল পাতলা স্মার্টফোন তৈরি। স্যামসাংও সেই যুক্তিই দেখিয়েছিল। তবে অপো আর৫ সবচেয়ে পাতলা স্মার্টফোনের তকমা হারায় ভিভো এক্স৫ ম্যাক্সের কাছে। ৪.৭৫ মিলিমিটার পুরু ভিভোর ফোনটিতে কিন্তু হেডফোন জ্যাক ছিল। অর্থাৎ ব্যাপারটি ফেসবুকের ভাষায় ‘ইটস কমপ্লিকেটেড’।
শুরু না করলেও, ফোন থেকে হেডফোনের পোর্ট বাদ দেওয়ার ধারণা জনপ্রিয় করে অ্যাপল। ফোনের হালকা-পাতলা গড়ন একটা কারণ হতে পারে। তবে ভেবে দেখুন, হেডফোন জ্যাক বাদ দিলে সেটুকু জায়গায় আর কী কী করতে পারে অ্যাপল। ব্যাটারি খানিকটা বড় করতে পারে, অন্য কোনো যন্ত্রাংশ যুক্ত করতে পারে, আবার পানিরোধী করাও সহজ হয়ে যায়।
তারহীন হেডফোনের ধারণা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করলে অ্যাপল ‘সাহসী’ পদক্ষেপটি নিয়েছিল। এরপর দেখুন ওয়্যারলেস হেডফোন ক্রমেই মূল ধারায় আসছে। অ্যাপলও ‘এয়ারপডস’ সিরিজের তারহীন হেডফোন বাজারজাত করছে, আইফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়ও হয়েছে। অ্যাপলের নতুন এই পণ্যের বাজার তৈরির জন্যও হেডফোন জ্যাক বাদ দেওয়া হতে পারে।
এয়ারপডসের মতো তারহীন ইয়ারফোন ব্যবহারের সুবিধা তো আছেই। তার না থাকলে সেটা পেঁচিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবে সমস্যা হলো দাম। এয়ারপডসের কথা নাহয় বাদই দিলাম। মোটামুটি পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর প্রাথমিক পর্যায়ের তারহীন ইয়ারফোনগুলোর দামও কম নয়। ২০১৬ সালের জুনে স্ট্যাটিস্টার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে সে সময় বিক্রীত হেডফোনের ৮৩ শতাংশ ‘তারযুক্ত’, বাকি ১৭ শতাংশ তারহীন। তবে মোট বিক্রয়মূল্যের ৫৪ শতাংশ ছিল ওই ১৭ শতাংশ বিক্রীত তারহীন হেডফোনের দখলে।
সে যা হোক, মানুষ কিন্তু এখনো ফোনে হেডফোন জ্যাক চায়। ফোনঅ্যারেনা ডটকমের জরিপে বিষয়টি উঠে আসে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বলেছেন, ফোনে হেডফোন জ্যাক থাকলে ভালো, ১৭ দশমিক ৮ শতাংশের তারহীন হেডফোনে সমস্যা নেই, আর ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বলেছেন, একটা হলেই হলো। দেখি আমাদের পাঠক কী বলেন। তাঁরা ফোনে হেডফোন জ্যাক চান কি, না। নিচের জরিপে অংশ নিয়ে জানিয়ে দিন আপনার মতামত। চাইলে কমেন্টেও জানাতে পারেন।