আজ আমাদের গণিত ইশকুলে কলম-ক্যালকুলেটর ছেড়ে পেনসিল আর জ্যামিতি বক্স নিয়ে বসব। সবচেয়ে কম বাহুবিশিষ্ট বহুভুজ মানে ত্রিভুজ দিয়েই আজকের ইশকুলে পণ্ডিতদের মজলিশ বসুক! তিন বাহু দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রকে ত্রিভুজ বলে। ত্রিভুজের থাকে তিনটি বাহু, থাকে তিনটি অন্তর্ভুক্ত কোণ আর অনেকগুলা বহিঃস্থ কোণ। আরও থাকে তিনটি শীর্ষবিন্দু, তিনটি মধ্যমা, একটি ভরকেন্দ্রসহ অনেক রকম জিনিসপত্র। ছোটবেলা থেকেই এগুলো শুনতে শুনতে কান ব্যথা হয়ে গেছে। আজকের লেখাটা আমি মূলত মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য লিখেছি। ও হ্যাঁ! আরও কিছু কথা বাদ পড়ে গেছে!
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল = হাফিন্টুভূমিন্টুচ্চতা। কিছু বুঝলে? আচ্ছা থাক, ভালো করেই বলি এবার,
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল = ১/২ × ভূমি × উচ্চতা।
আমার সবচেয়ে প্রিয় একটা সূত্র এটা। পরিসীমার তেমন কোনো সূত্র নেই, সহজে তিন বাহুর দৈর্ঘ্য যোগ করতে পারলেই হচ্ছে! তবে বাহুর দৈর্ঘ্য দেওয়া না থাকলে কী করব? আরে, জ্যামিতি বক্সের স্কেলটাকে তো একটু কাজে লাগাও! বেচারা চুপ করে বসেই থাকে সব সময়!
এসব চিরকালের শোনা কথা আলোচনা আবার করলে গণিত ইশকুলের বিশেষত্ব থাকল কোথায়? তাই একটু বিশেষ কিছু পড়ব আজ! তোমার মাধ্যমিক উচ্চতর গণিত বইয়ের প্রথমে আর শেষে কিছু আজগুবি জিনিসপত্র দেওয়া আছে না? সেসব বাদ দিয়ে পড়তে আমাদের দুইবার ভাবতে হয় না। আমিও যে করিনি, সেটা কিন্তু নয়! তবে এর মধ্যেই একটা মূল্যবান জিনিস লুকিয়ে আছে। একদম শেষের দিকে দেখো একটা পরিশিষ্ট অংশ আছে। এটা যখন আমি প্রথম দেখি, আমার বন্ধুদের বলেছিলাম যে গণিতের মজা তো বইয়ের পেছনে। তারা সরাসরি কিছু না দেখেই আমার কথাটাকে ঠাট্টা বানিয়ে দিল! তোমাদের জন্য সেই মহামূল্যবান অংশটা আবার তুলে ধরলাম! ত্রিভুজের অ্যানাটমি জেনে নাও সবার আগে।
এত দিন আমরা জেনে এসেছি যে সাধারণত একটা ত্রিভুজের তিনটি উপাত্ত দেওয়া থাকলেই ত্রিভুজটি আঁকা যায়।
• দুইটি বাহু এবং একটি কোণ (SAS: Side-Angle-Side)
• একটি বাহু এবং দুইটি কোণ (ASA: Angle-Side-Angle)
• তিনটি বাহু (SSS: Side-Side-Side)
তবে এগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তো গণিতের আসল মজাটা তোমার বুঝতেই পারবে না! তাই হয়তো বইয়ের সবচেয়ে মজার অংশটা শেষপাতের মিষ্টিমুখ হিসেবে একদম শেষে দিয়েছে! ওপরে তুমি যে অ্যানাটমি জেনেছিলে, সেই সব কটি দিয়েই ত্রিভুজ আঁকা যায়! তেমনটাই দেওয়া আছে বইয়ে।
এবার তুমি নিজের ইচ্ছেমতো যেকোনো একটা নিয়ম মেনে ত্রিভুজ এঁকে ফেলো!
তোমার কাছে অনেক অনেক উপায় আছে। পাঠ্যবইয়ের ভেতর কত মজার একটা জিনিস আছে দেখেছ? যদিও এটা তোমার এসএসসি পরীক্ষায় বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলবে না! তবে তুমি অবাক হয়ে দেখতে পারো যে এই আঁকাআঁকি করতে গিয়ে তুমি হয়তো নিজের অজান্তেই সমাধান করে ফেলেছ গণিতের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা International Mathematical Olympiad (IMO) বা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) ১৯৬০ সালের প্রতিযোগিতার ৪ নম্বর জ্যামিতিটা।
কী ছিল সেখানে? এতই সোজা কিছু!! বিশ্বাস না হলে নিজেই দেখে নাও নিচের লিংক থেকে:
https://artofproblemsolving.com/wiki/index.php/1960_IMO_Problems/Problem_4
শুধু এই একটাই নয়, এরপরও আইএমওর সম্ভাব্য প্রশ্নতালিকায় ত্রিভুজের তিনটি উপাত্ত থেকে এমন প্রশ্ন এসেছে। সেগুলো না হয় তোমরাই খুঁজে বের করো।