পঞ্চম শ্রেণি - বাংলা | প্রশ্নোত্তর

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ

১। প্রশ্ন: নূর মোহাম্মদ শেখ কীভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন?

উত্তর: ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। যশোরের গোয়ালহাটি গ্রামে টহল দিচ্ছিলেন পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদেরই নেতৃত্বে ছিলেন ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। পাকিস্তানি সেনারা টের পেয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান। রাজাকারদের সহায়তায় তিন দিক থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের ঘিরে ফেলে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা দমার পাত্র নন। এই দলেই ছিলেন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা নান্নু মিয়া। কিন্তু প্রতিপক্ষের একটা গুলি হঠাৎ এসে লাগে তাঁর গায়ে। নূর মোহাম্মদ তাঁকে এক হাত দিয়ে কাঁধে তুলে নিলেন আর অন্য হাত দিয়ে গুলি চালাতে থাকলেন। কৌশল হিসেবে বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকলেন তিনি। উদ্দেশ্য একজন নন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করছেন—শত্রুদের এ রকম একটা ধারণা দেওয়া। সংখ্যায় কম বলে সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দিলেন পিছিয়ে গিয়ে অবস্থান নিতে। কিন্তু হঠাৎ মর্টারের একটা গোলা এসে লাগল তাঁর পায়ে। গোলার আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল তাঁর পা। তিনি বুঝতে পারলেন মৃত্যু আসন্ন। যতক্ষণ সম্ভব গুলি চালাতে চালাতে তিনি শহীদ হলেন। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে নূর মোহাম্মদ শেখ এভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন।

২। প্রশ্ন: বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন কীভাবে শহীদ হয়েছিলেন?

উত্তর: ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখ। মুক্তিযোদ্ধাদের নৌজাহাজ বিএনএস পলাশ এবং বিএনএস পদ্মা মোংলা বন্দর দখল করে নেয়। এবার তাঁদের লক্ষ্য খুলনা দখল করা। ভৈরব নদী বেয়ে তাঁরা ধেয়ে আসছিলেন খুলনার দিকে। জাহাজ দুটি খুলনার কাছাকাছি আসতেই একটা বোমারু বিমান থেকে জাহাজ দুটির ওপর বোমা এসে পড়ল। রুহুল আমিন বিএনএস পলাশের ইঞ্জিন রুমে ছিলেন। বোমা ইঞ্জিন রুমের ওপর পড়ায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে আগুন ধরে গিয়েছিল বিএনএস পলাশে। রুহুল আমিনের ডান হাতটি উড়ে গেলেও আহত অবস্থায় ঝাঁপ দিয়ে নদী সাঁতরে পাড়ে ওঠেন। বোমার আঘাত থেকে রক্ষা পেলেও রাজাকারদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যু হলো তাঁর। এভাবে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে রাজাকারদের হাতে তিনি শহীদ হন।

৩। প্রশ্ন: গল্প থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরযোদ্ধাদের সম্পর্কে যা জেনেছ, তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: গল্প থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরযোদ্ধাদের দেশপ্রেম, অসীম সাহস, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের গৌরব সম্পর্কে আমরা জেনেছি। নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে বীরযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন। শত্রু সেনাদের ঘায়েল করে মুক্তির রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন। বীরযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। জলে, স্থলে অন্তরীক্ষে বীরযোদ্ধারা সর্বাত্মক যুদ্ধে শত্রু সেনাদের পরাভূত করে জয়ী বাহিনী হিসেবে বয়ে এনেছেন অসীম গৌরব। এই বীরদের পবিত্র রক্তস্রোতের বিনিময়ে বীরের জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বসভায় স্থান করে নিয়েছি। নূর মোহাম্মদ শেখ, মুন্সী আবদুর রউফ, মোহাম্মদ রুহুল আমিন শ্রেষ্ঠ বীরের পরিচয় দিয়ে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। দেশের এ বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা গর্বিত।

খন্দকার আতিক, শিক্ষক, উইল্স লিট্ল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

পূর্বের দিনের পড়া