সংখ্যা পদ্ধতি (পর্ব-৩) | গণিত ইশকুল

বছরজুড়ে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

পূর্ববর্তী পর্ব ‘সংখ্যাপদ্ধতি-২’–তে আমরা দেখেছিলাম, কীভাবে 10 ভিত্তিক যেকোনো পূর্ণসংখ্যাকে n ভিত্তিক পূর্ণসংখ্যায় রূপান্তর করা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা দেখব কীভাবে 10 ভিত্তিক যেকোনো ভগ্নাংশ সংখ্যাকে n ভিত্তিক (অর্থাৎ যেকোনো পূর্ণসাংখ্যিক ভিত্তিতে) ভগ্নাংশে রূপান্তর করা যায়।

চলো শুরু করি:

আজকের পর্বে আমরা মূলত কোনো ভগ্নাংশ সংখ্যার দশমিক এর পরের অংশের রূপান্তর দেখব। একটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করি। ধরো, আমরা (430.8125)10 সংখ্যাটিকে 2 ভিত্তিক সংখ্যায় রূপান্তর করতে চাই। এ ক্ষেত্রে দশমিকের আগের অংশ অর্থাৎ, পূর্ণসাংখ্যিক অংশের রূপান্তর আমরা পূর্ববর্তী পর্বেই শিখেছি। এখন আমরা দশমিকের পরের অংশের রূপান্তর দেখব।

‘চিত্র-১’–এ দেখা যাচ্ছে, প্রথমে (430.8125)10 সংখ্যাটির পূর্ণসাংখ্যিক অংশকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে 0.8125 সংখ্যাটি (শুধু ভগ্নাংশটুকু) নিয়ে সেটিকে 2 দিয়ে গুণ করে গুণফল পাওয়া গেল 1.625. এবার এই গুণফলের ভগ্নাংশ (.625) ও পূর্ণাংশ (1) দুটি আলাদা ঘরে লেখা হলো।

এরপর এই গুণফলের ভগ্নাংশটিকে (.625) আবার 2 দিয়ে গুণ করে একই পদ্ধতিতে গুণফলের ভগ্নাংশ (.25) ও পূর্ণাংশ (1) পরবর্তী সারির দুটি ঘরে লেখা হলো। গুণফলের ভগ্নাংশে 0 পাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকল। সবশেষে প্রাপ্ত পূর্ণাংশগুলোকে একই ক্রমে (ওপর থেকে নিচে) লিখে তার আগে একটি দশমিক বিন্দু (আসলেই কী তাই?) বসিয়ে যে সংখ্যাটি পাওয়া গেল (.1101), সেটিই হচ্ছে আমাদের নির্ণেয় 2 ভিত্তিক ভগ্নাংশ সংখ্যা।

এখন (430.8125)10 = (X.1101)2, যেখানে X হচ্ছে 430–এর বাইনারি রূপ।

অর্থাৎ, পদ্ধতিটি হচ্ছে, আমরা যদি (0.A)10 সংখ্যাটিকে n ভিত্তিক ভগ্নাংশে নিতে চাই, তবে আমাদেরকে

∎ 0.A–কে n দিয়ে গুণ করতে হবে

∎ প্রাপ্ত গুণফলের পূর্ণাংশটি লিপিবদ্ধ করতে হবে

∎ ওই গুণফলের ভগ্নাংশটিকে আবার n দিয়ে গুণ করতে হবে

∎ এবারেও প্রাপ্ত গুণফলের পূর্ণাংশটি লিপিবদ্ধ করে ভগ্নাংশটিকে আবারও n দিয়ে একই ভাবে গুণ করতে হবে৷

∎ প্রক্রিয়াটির যে ধাপে গুণফলের ভগ্নাংশে 0 পাওয়া যাবে, ঠিক সেই ধাপে থেমে যেতে হবে।

∎ এরপর প্রাপ্ত পূর্ণাংশগুলোকে একই ক্রমে (শুরু থেকে শেষের দিকে) লিখে তার আগে একটি দশমিক বসিয়ে যে ভগ্নাংশ সংখ্যাটি পাওয়া যাবে, সেটিই হবে আমাদের নির্ণেয় n ভিত্তিক ভগ্নাংশ।

প্রক্রিয়াটি তোমাদের অনেকের কাছেই খুব অদ্ভুত লাগতে পারে! কেন প্রতিবার গুণফলের ভগ্নাংশটুকুকে গুণ করে শেষে পূর্ণাংশগুলোকেই নির্ণেয় সংখ্যার অঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে? চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমি সেটির ব্যাখ্যাও দিচ্ছি!

‘সংখ্যাপদ্ধতি’ সিরিজের প্রথম পর্ব থেকে আমরা জানি,

(0.ABCD)n = X10 হলে, X = A×n-1+B×n-2+C×n-3+D×n-4.

= (A/n)+(B/n2)+(C/n3)+(D/n4).

খেয়াল করো, X সংখ্যাটি রয়েছে 10 ভিত্তিক সংখ্যায়। যখন Xকে প্রথমবার n দিয়ে গুণ করা হচ্ছে, তখন আমরা ফলাফল হিসেবে পাচ্ছি A+(B/n)+(C/n2)+(D/n3)–কে। এখানে A হচ্ছে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা, যেটি হচ্ছে গুণফলের পূর্ণাংশ।

এবং বাকি অংশটুকু {(B/n)+(C/n2)+(D/n3)} হচ্ছে গুণফলের ভগ্নাংশ। [এখানে মনে রাখবে, A, B, C.... এই অঙ্কগুলো n ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, যে কারণে এদের প্রত্যেকের মানই n এর চেয়ে ছোট। কারণ, n ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতিতে 0 থেকে n-1 পর্যন্ত সংখ্যাগুলোকে অঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ কারণে 0≤{(B/n)+(C/n²)+(D/n³)<1 হবে।

এর কারণটা নিজে বের করো দেখি! আচ্ছা, হিন্টস দিচ্ছি, A, B, C... এদের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মান হতে পারে যথাক্রমে 0 ও n-1. ফলে (B/n)+(C/n²)+(D/n³)–এর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মান হতে পারে (0/n)+(0/n²)+(0/n³) ও {(n-1)/n}+{(n-1)/n²}+{(n-1)/n³}.]

কোথায় যেন ছিলাম আমরা? ওহ্‌ মনে পড়েছে! তো প্রথমবার Xকে n দিয়ে গুণ করার পর গুণফলের পূর্ণাংশে পেলাম Aকে, এবং বাকি অংশটুকু থাকল ভগ্নাংশ। এরপর দ্বিতীয় ধাপে (B/n)+(C/n²)+(D/n³)–কে n দিয়ে গুণ করার পর পূর্ণাংশ ও ভগ্নাংশ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে যথাক্রমে B ও (C/n)+(D/n²)–কে। একইভাবে পরবর্তী ধাপগুলোতে পূর্ণাংশ হিসেবে পাওয়া যাবে C ও Dকে।

শেষ ধাপে D/nকে n দিয়ে গুণ করার পর গুণফলে ভগ্নাংশ হিসেবে কিছু অবশিষ্ট না থাকায় সেই ধাপেই আমাদের প্রক্রিয়াটি শেষ হচ্ছে [(D/n)×n = D, যেটি একটি পূর্ণসংখ্যা] এখানে বলে রাখি, যদি কখনো অনেকগুলো ধাপ পর্যন্ত গুণ করার পরও গুণফলের ভগ্নাংশে 0 পাওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ পর্যন্ত সম্পন্ন করে শেষে দশমিকের পর কয়েক ঘর পর্যন্ত আসন্ন মান নিয়ে হিসাব সম্পন্ন করা যাবে।

যা হোক, এই পদ্ধতিতে মূলত প্রতিবার গুণ করার পর গুণফলে পূর্ণাংশ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে (0.ABC....)n সংখ্যাটির একেকটি অঙ্ক, এবং অঙ্কগুলো পাওয়া যাচ্ছে একই ক্রমে। অর্থাৎ প্রথম পূর্ণাংশটি হচ্ছে নির্ণেয় n ভিত্তিক ভগ্নাংশ সংখ্যাটির দশমিকের পরের ১ম অঙ্ক, ২য় পূর্ণাংশটি হচ্ছে ২য় অঙ্ক, এ রকম...।

ঠিক এ কারণেই পুরো প্রক্রিয়া শেষে পূর্ণাংশগুলোকে ওপর থেকে নিচের দিকে সাজিয়ে লিখে, তার আগে একটি বাইনারি বিন্দু (এখন আমরা আর দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে লিখছি না কাজেই দশমিক বিন্দু বলা যাচ্ছে না) বসিয়ে দিলেই নির্ণেয় n ভিত্তিক ভগ্নাংশ সংখ্যাটি পাওয়া যায়। [তবে মনে রাখবে, প্রতি ধাপে আমরা যে ভগ্নাংশটি পাব, পরের ধাপে সেটিকেই আবার n দিয়ে গুণ করব। ভুল করে আবার পূর্ণাংশ বা অন্য কোনো সংখ্যাকে গুণ করে বোসো না যেন!]

এতক্ষণে আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছ, কীভাবে যেকোনো 10 ভিত্তিক দশমিক ভগ্নাংশকে যেকোনো পূর্ণসাংখ্যিক ভিত্তিতে নিতে হবে। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। পরবর্তী পর্বে সংখ্যা পদ্ধতিরই নতুন কোনো বিষয়ে গল্প হবে। আলোচনা করা হবে। সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থেকো।

আরও পড়ুন