সংখ্যা পদ্ধতি (পর্ব-২) | গণিত ইশকুল

বছরজুড়ে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

পূর্ববর্তী পর্ব ‘সংখ্যাপদ্ধতি’তে আমরা দেখেছিলাম, কীভাবে nভিত্তিক যেকোনো পূর্ণসংখ্যা অথবা ভগ্নাংশকে 10–ভিত্তিক সংখ্যায় রূপান্তর করা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখব কীভাবে 10–ভিত্তিক যেকোনো পূর্ণসংখ্যা বা ভগ্নাংশকে nভিত্তিক সংখ্যায় (অর্থাৎ যেকোনো পূর্ণসাংখ্যিক ভিত্তিতে) রূপান্তর করা যায়। চলো শুরু করা যাক।

আজকের পর্বে আমরা দেখব এক ভিত্তির পূর্ণসংখ্যাকে অন্য ভিত্তির পূর্ণসংখ্যায় রূপান্তর। 10–ভিত্তিক কোনো পূর্ণসংখ্যাকে যেকোনো পূর্ণসাংখ্যিক ভিত্তিতে রূপান্তরের এই পদ্ধতি একটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যাক। ধরো, আমরা (2745)10 সংখ্যাটিকে 6–ভিত্তিক সংখ্যায় রূপান্তর করতে চাই।

‘চিত্র-১’–এ দেখা যাচ্ছে, প্রথমে 2745 সংখ্যাটিকে 6 দ্বারা ভাগ করে ভাগফল (457) ও ভাগশেষ (3) দুটি ঘরে লেখা হলো। এরপর এই ভাগফলকে (457) আবার 6 দ্বারা ভাগ করে ভাগফল (76) ও ভাগশেষ (1) পরবর্তী সারির দুটি ঘরে লেখা হলো। ভাগফলে 0 পাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকল। সবশেষে ভাগশেষগুলোকে উল্টোক্রমে (নিচ থেকে ওপরে) লিখে যে সংখ্যা পাওয়া গেল (20413), সেটিই হচ্ছে আমাদের নির্ণেয় 6–ভিত্তিক সংখ্যা। অর্থাৎ পদ্ধতিটি হচ্ছে, আমরা যদি A10 সংখ্যাটিকে nভিত্তিক সংখ্যায় নিতে চাই, তবে আমাদের--

∎ A কে n দ্বারা ভাগ করতে হবে

∎ প্রাপ্ত ভাগশেষটি লিপিবদ্ধ করতে হবে

∎ প্রাপ্ত ভাগফলটিকে (পূর্ণসাংখ্যিক) আবার n দিয়ে ভাগ করতে হবে

∎ এবারেও প্রাপ্ত ভাগশেষটি লিপিবদ্ধ করে প্রাপ্ত ভাগফলটিকে আবারও n দিয়ে একইভাবে ভাগ করতে হবে৷

∎ প্রক্রিয়াটির যে ধাপে ভাগফল হিসেবে 0 পাওয়া যাবে, ঠিক সে ধাপে থেমে যেতে হবে।

∎ এরপর প্রাপ্ত ভাগশেষগুলোকে উল্টোক্রমে (শেষ থেকে শুরুর দিকে) লিখে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে, সেটিই হবে আমাদের নির্ণেয় nভিত্তিক সংখ্যা।

প্রক্রিয়াটি তোমাদের অনেকের কাছেই অনেক অদ্ভুত লাগতে পারে! কেন প্রতিবার ভাগফলগুলোকে ভাগ করে শেষে ভাগশেষগুলোকেই নির্ণেয় সংখ্যার অঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে? চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমি সেটির ব্যাখ্যাও দিচ্ছি!

আরও পড়ুন

পূর্ববর্তী পর্ব থেকে আমরা জানি (ABCD)n = X10 হলে,

X = A×n³+B×n²+C×n¹+D×n⁰

= n(A×n²+B×n+C)+D......(i)

= n{n(A×n+B)+C}+D......(ii)

= n[n{n(A)+B}+C]+D......(iii)

তোমরা হয়তো ভাবছ, Xকে এভাবে লেখার কারণ কী? বুঝিয়ে বলছি। খেয়াল করো, X সংখ্যাটি রয়েছে 10–ভিত্তিক সংখ্যায়। (i) এ X=k1×n+D. [k1=An²+Bn+C]. অর্থাৎ Xকে n দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগশেষ পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে D এবং ভাগফলটি হচ্ছে k1. এবার (ii)–এ দেখো! { } এর ভেতরের অংশটুকু হচ্ছে k1. কিন্তু k1= k2×n+C. [k2=An+B]. অর্থাৎ k1 কে n দ্বারা ভাগ করার পর আমরা ভাগশেষ হিসেবে পেয়ে যাচ্ছি Cকে! এভাবে পরেরবার k2–কে n দ্বারা ভাগ করলে আমরা ভাগশেষ হিসেবে পেয়ে যাব Bকে! প্রক্রিয়াটি চলতে থাকবে, যতক্ষণ না kn–এর মান 0 হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিবার ভাগ করার পর যেসব ভাগশেষ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে (ABC....)n সংখ্যাটির একেকটি অঙ্ক। কিন্তু অঙ্কগুলো পাওয়া যাচ্ছে উল্টোক্রমে (শেষ থেকে শুরুর দিকে)। অর্থাৎ প্রথম ভাগশেষটি হচ্ছে নির্ণেয় nভিত্তিক সংখ্যাটির একক স্থানীয় অঙ্ক, দ্বিতীয় ভাগশেষটি হচ্ছে দশক স্থানীয় অঙ্ক। এ রকম...। ঠিক এ কারণেই পুরো প্রক্রিয়া শেষে ভাগশেষগুলোকে নিচ থেকে ওপরের দিকে সাজিয়ে লিখলেই নির্ণেয় nভিত্তিক সংখ্যাটি পাওয়া যায়। [তবে মনে রাখবে, প্রতি ধাপে আমরা যে ভাগফল পাব, পরের ধাপে সেটিকেই আবার n দ্বারা ভাগ করব। ভুল করে আবার ভাগশেষ বা অন্য কোনো সংখ্যাকে ভাগ করে বোসো না যেন!]

এতক্ষণে আশা করি সবাই সবাই বুঝতে পেরেছ কীভাবে 10–ভিত্তিক যেকোনো পূর্ণসংখ্যাকে যেকোনো পূর্ণসাংখ্যিক ভিত্তিতে নিতে হবে। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। পরবর্তী পর্বে ভগ্নাংশ সংখ্যার রূপান্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থেকো।

আরও পড়ুন