গণনাযন্ত্রের ময়নাতদন্ত (পর্ব ৩)

নেপিয়ার্স বোনসছবি: সংগৃহীত

গত পর্বে আমরা গুণ নিয়ে কথা বলেছিলাম। আজ আমাদের আলোচনা হবে কীভাবে নেপিয়ার্স বোনস ব্যবহার করে ভাগ করা যায়। প্রক্রিয়াটি বেশ মজার। তবে একটু জটিল মনে হতে পারে। একদম সেম প্রসিডিউরে আমাদের যেই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হবে, সেটার ০ থেকে ৯ পর্যন্ত ক্রমিক গুণিতক নির্ণয় করতে হবে প্রথমেই। এটা নেপিয়ার্স বোনস ব্যবহার করে এখন তোমরা করতে পারবে। আমরা সরাসরি একটা উদাহরণ নিয়ে কথা বলি। ধরো, ৪৬৭৮৫৩৯৯ কে ভাগ করতে হবে ৯৬৪৩২ দিয়ে।

আমাদের প্রথম কাজ ০ পরবর্তী ৯টি ক্রমিক গুণিতক লিখে ফেলা। যেহেতু ০ দিয়ে গুণ করলে ০ হয়, সেটাকে বাদ দিয়ে পরবর্তী ৯টি নিয়ে কাজ করব আমরা। এবার যেই সংখ্যাকে ভাগ করতে হবে, তাকে দুটি অংশে বিভক্ত করব; অর্থাৎ ৪৬৭৮৫৩৯৯ কে (৪৬৭৮৫৩০০ + ৯৯) আকারে লিখব। এভাবে লেখার কারণ আমরা মূল সংখ্যার অঙ্কগুলো থেকে ৪৬৭৮৫৩ এবং ৯৯ এভাবে দুই ভাগ নিয়েছি।

প্রশ্ন আসতে পারে, ৪৬৭৮৪ কিংবা ৪৫৭৮৫৩৯ নিলাম না কেন? আমরা মূলত ৯৬৪৩১ থেকে বড় সংখ্যা নেব, এখানে ৪৬৭৮৫৩ > ৯৬৪৩১ > ৪৬৭৮৪। একটা মজার বিষয়, ৪৬৭৮৫৩ সংখ্যাটি ৯৬৪৩১ থেকে বড় হলেও এর দশম গুণিতক ৯৬৪৩১০ থেকে অবশ্যই ছোট হবে। প্রতিবারই এমন হবে। তবে কেন এমন হচ্ছে, সেটা তোমরা নিজেরা বের কোরো।

এবারে আমাদের কাজ ৪৬৭৮৫৩-এর নিকটবর্তী ৯৬৪৩১-এর গুণিতক বের করা, যা প্রথম ৯টি ক্রমিক গুণিতকের একটা হবেই এবং চিত্রের আলোকে সেটা হলো ৩৮৫৭২৪! এটার উদ্দেশ্য হলো, দুটি সংখ্যা বিয়োগ করা হবে বিয়োগফল < ৯৬৪৩১ হয়।

এভাবে পরের ধাপে ভাগশেষ ৮২১২৯ < ৯৬৪৩১ হওয়ায় আমরা একদম ওপরের লাইন থেকে আরেকটি ৯ নিয়ে আসব। এটা খুবই আনপ্রফেশনাল লাগতে পারে, তবে ছোটবেলায় এভাবেই আমাদের শেখানো হতো! মূলত আমরা প্রথমে ৪৬৭৮৫৩৯৯ থেকে ৪৬৭৮৫৩০০ কে ৯৬৪৩১ দিয়ে ভাগ করেছি।
এটাকে একটু বিস্তারিত লিখলে দাঁড়ায়,
=  =  +
প্রথম অংশ নিয়ে যদি কাজ করি,
= ×  = ×  = ×  = ৪০০ +
এখানে খেয়াল করো। আমরা প্রথম অংশ থেকে ৪০০ এবং ভাগশেষ আকারে পাই। আবার আগের অংশে আমাদের কাছে ছিল।

মজার ব্যাপার হলো,  > ১ হলেও আমরা এটাকে সমাধান করব না। কেননা, ৮২১২৯০০ > ৯৬৪৩১ হলেও হিসাবের সুবিধার্থে আমরা সব শূন্যকে যথাযথ গুণক আকারে লিখে কাজ করব। এ ক্ষেত্রে সাধারণ গুণক হবে ১০, যাতে পরবর্তী সংখ্যা থেকেও কমন নিতে পারি;

অর্থাৎ আমাদের জন্য ৮২১২৯ < ৮২১২৯০ < ৯৬৪৩১ হওয়ায় ভাগফল > ১ পেতে এর কিছু একটা যোগ করার প্রয়োজন, যাতে যোগফল > ৯৬৪৩১ হয়। এই স্টেপে আমাদের কাছে কাজ করার মতো আছে =  +  ।
হিসাবটা লক্ষ করো।
=  +  =  +  +
আমরা আবারও প্রথম দুটি অংশ নিয়ে কাজ করব।
=  +  =  =   = ৮০ +
লক্ষ করো, ৯০-কে সহজভাবে যোগ করতেই ৮২১২৯-এর বদলে ৮২১২৯০ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ১০ কে সাধারণ গুণক রাখা যাবে। তবে তুমি চাইলে ৮২১২৯ নিয়েই কাজ করতে পারো। একটু জটিল হলেও ফলাফল একই আসবে।

তৃতীয় ধাপে আমাদের কাজ  +  =   কে নিয়ে। যেহেতু শেষে কোনো শূন্য নেই, শেষপদ বড় দিয়ে আগের মতো করতে গেলে ৪৯৮৫১ < ৯৬৪৩১ চলে আসে, সেহেতু আমরা সরাসরি করে দেব। ওপরের চার্ট থেকে ৪৯৮৫১৯-এর নিকটবর্তী ৯৬৪৩১-এর গুণিতক ৪৮২১৫৫ হয়।
ফলে লেখা যায়,  =  +  = ৫ +
অতএব বলা যায়,  = ৪০০ + ৮০ + ৫ +  = ৪৮৫  ।
এইমাত্র তুমি যে উপায়ে সলভ করলে, ক্যালকুলেটর আবিষ্কার হওয়ার আগে মানুষ এভাবেই গণনা করে হিসাব বের করত। কত কঠিন ছিল চিন্তা করে দেখো একবার। তবে তোমাদের বলব, হাতে হাতে ক্যালকুলেশন শিখতে গেলে কিন্তু এই বিষয়গুলোতে অবশ্যই পটু হতে হবে।